গাজা ‘জয়ের’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমেছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে চরম নৃশংসতা চালাচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী। গতকাল শুক্রবারও সেখানে অন্তত ১০০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এতে সংঘাতের ১৮ মাসের বেশি সময় গাজায় ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গতকাল ও আগের দিন উপত্যকাটিতে ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময় উত্তর গাজার বাসিন্দাদের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। চলেছে আকাশপথে হামলা। গতকাল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, শুক্রবার গাজায় দেড় শর বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। দেশটি থেকে জিম্মি করা হয় প্রায় আড়াই শ জনকে। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জন।
হামলার পাশাপাশি গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো ত্রাণসহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে সেখানে খাবার–পানিসহ জরুরি পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজার মানুষের সহায়তার পক্ষে মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজার মানুষ অনাহারে ভুগছে। আগামী এক মাসে অনেক ভালো কিছু হবে বলে তিনি আশা করছেন।
কাতারের রাজধানী দোহায় একটি অনুষ্ঠানে গাজা নিয়ে এ কথা বলেন ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণে ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন করেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি মনে করি, আগামী এক মাসে অনেক ভালো কিছু হতে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনিদেরও সাহায্য করতে হবে।’
এর আগেই অবশ্য গাজা উপত্যকা দখল করার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। তাঁর ভাষ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ভালো হবে। এরপর সেখানে ‘ফ্রিডম জোন’ (মুক্ত অঞ্চল) তৈরি করা হবে। এতে সেখানে সব মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হতে দিন। আমি খুবই গর্বিত হব, যদি গাজার নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র নেয়।’
এ সময় ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামাসের হামলা নিয়েও কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, এটি মানব ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনা ছিল। তিনি বলেন, হামাসকে মোকাবিলা করতে হবে। গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে হলে আগে হামাসকে মোকাবিলা করা দরকার।
এদিকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত মানবিক কার্যক্রমে জাতিসংঘ অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে। এই কার্যক্রম নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নয় বলে মনে করছে তারা। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, মানবিক সহায়তা বিতরণের এ পরিকল্পনাটি জাতিসংঘের মূল নীতিমালার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই এতে জাতিসংঘ অংশ নেবে না।
পরিস্থিতি যখন দিন দিন আরও সংকটপূর্ণ হচ্ছে, তখন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের আলোচনায় কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ। কাতারে চলমান এই আলোচনার বিষয়ে একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানায়, ইসরায়েলের অবস্থান অনড়, হামাস এখনো নতি স্বীকার করেনি, আর মার্কিনরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
‘সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির, চোখেমুখে অন্ধহার দেহির’
বৈরী পরিবেশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ট্রলার। বেকার হয়ে পড়েছেন ১ লাখের বেশি জেলে। অধিকাংশ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতে।
আজ মঙ্গলবার সকালে নদী নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা অলস সমায় কাটাচ্ছেন। সেখানে দেখা হয় জেলে জুবাইদুল ইসলামের (২৫) সঙ্গে। সাগর উত্তাল থাকায় গত সাত দিন ইলিশ ধরতে যেতে পারেননি। সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনায় দিন কাটছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরি সাগরত ইলিশ ধরিত ন পারির। সাগর বেশি গরম। ট্রলারত বই বই টেনশন গরির (করছি)-সংসার কেনে (কীভাবে) চালাইয়ুম। ঘরত মা-বাপ, বউ আছে। তারা ঠিক মতন একবেলা খাইত ন পারের। চোখেমুখে অন্ধহার দেহির।’
জুবাইদুলের বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ার আলী আকবরডেইল গ্রামে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় থেকে সাত বছর ধরে তিনি ট্রলারে জেলে শ্রমিকের কাজ করছেন। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়নি জানিয়ে জুবাইদুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ ১৭ জুন একটি ট্রলার নিয়ে তাঁরা ১৫ জন জেলে সাগরে ইলিশ ধরতে গিয়েছিলেন। ইলিশের সন্ধানে সাগরে তাঁরা সাত দিন অবস্থান করে গত ২২ জুন ঘাটে ফিরে আসেন। তত দিনে জালে ধরা পড়ে ১৪ মণ লইট্যা মাছ। বিক্রি করে পাওয়া গেছে ৫৬ হাজার টাকা। অথচ সমুদ্রযাত্রায় ট্রলারে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। লোকসান হলে জেলেদের সংকট বাড়ে।
পাশের আরেক ট্রলারের জেলে কামরুল হাসান (৪৫) বলেন, গভীর সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছে ভরপুর, কিন্তু সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। ১৩ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে।
আজ সকাল থেকেই কক্সবাজারের আকাশ ছিল মেঘলা। থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। এমন আবহাওয়ায় বাঁকখালী নদীর পাঁচ-ছয় কিলোমিটার এলাকায় অবস্থান করছে তিন হাজারের বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে জেলে থাকেন ১৬-২২ জন। কয়েকজন জেলে ট্রলার পাহারা দিলেও বেশির ভাগ বাড়িতে চলে গেছেন।
কক্সবাজার ফিশিং বোটমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। গত ১৮ দিনে সাগরে তিনটি লঘু ও নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এখনো সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অনিরাপদ। ফলে কক্সবাজার সদরসহ মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার ছোট–বড় অন্তত ৬ হাজার ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। কিছু ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সাগরের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে জাল ফেলে ছোট আকৃতির লইট্যা, ফাইস্যা, পোঁপা, ছুরি ধরে আনলেও ইলিশের দেখা নেই। ইলিশ ধরতে গেলে ৭০-৮০ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে যেতে হবে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো ট্রলার নেই। ২০ জুলাই পর্যন্ত সাগরের উত্তাল পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার উপকূলে জেলেরা ইলিশ ধরতে যেতে পারছেন না। কাটাচ্ছেন অলস সময়। আজ সকালে নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে