শুধু গ্রামে নয়, শহরেও বাল্যবিবাহ বাড়ছে। দেশের কিশোর–কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভের সুযোগ নেই বললেই চলে। বাল্যবিবাহ ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে যুব নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

এমন নেতৃত্বের জন্য কী ধরনের গুণাবলি থাকা প্রয়োজন? এসব প্রশ্নের উত্তরে কেউ বললেন, আত্মবিশ্বাস, স্বচ্ছতা, ভালো শ্রোতা। আবার কেউ বললেন, বিনয়ী হওয়া অথবা ভিন্নভাবে কিছু ভাবতে পারার কথা। এ কথাগুলোই উঠে আসে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও প্রথম আলো আয়োজিত যুব সম্মেলনে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে হয় এই যুব সম্মেলন। এতে সারা দেশের শতাধিক তরুণ অংশ নেন।

সম্মেলনে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস তরুণদের উদ্দেশে বলেন, জীবনের সব দিন এক রকম হয় না। ভারসাম্যের জন্যই কখনো খারাপ সময়, ভালো সময় আসে জীবনে। কিছু অর্জিত না হলেও হতাশ হওয়া যাবে না। নতুন উদ্যমে আরও ভালো করার চেষ্টায় এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল সব ক্ষেত্রে যুবকেন্দ্রিক কাজ করার চেষ্টা করে, যাতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব সব জায়গায় থাকে। সমাজ যেখানে এসেছে, সেখান থেকে পেছনে যাওয়া যাবে না। যুবরাই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার ও কণ্ঠ। তাঁরাই সব সমাধানের যোদ্ধা।

জীবনের সব দিন এক রকম হয় না। ভারসাম্যের জন্যই কখনো খারাপ সময়, ভালো সময় আসে জীবনে। কিছু অর্জিত না হলেও হতাশ হওয়া যাবে না। নতুন উদ্যমে আরও ভালো করার চেষ্টায় এগিয়ে যেতে হবে। কবিতা বোস, কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল সারা দেশের চারটি তরুণ সংগঠন—অদম্য ১৯ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন, সূর্যোদয় ইয়ুথ সোসাইটি, কাশফুল ফাউন্ডেশন এবং ভাস্ট যুব ফোরামকে তাদের কাজের জন্য পুরস্কৃত করে। পুরস্কার পাওয়া সংগঠনগুলোকে আর্থিক অনুদানের চেক এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

সম্মেলনে সূচনা বক্তব্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর (ইনফ্লুয়েন্সিং, ক্যাম্পেইনস এবং কমিউনিকেশনস) নিশাত সুলতানা বলেন, সময়টা এখন তারুণ্যের। তারুণ্যের ইতিবাচক শক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে সত্যিকার অর্থেই বদলে যাবে বাংলাদেশ। জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, মেধায়, মননে তরুণদের যোগ্যতর হয়ে উঠতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। তরুণ নেতৃত্ব বিকাশে সব সময়ই তাঁদের পাশে আছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।

জলবায়ু পরিবর্তন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিয়ে কাজ করে ময়মনসিংহের অদম্য ১৯ ইয়ুথ ফাউন্ডেশন। এর প্রতিষ্ঠাতা তায়েব মৃধা বলেন, দেশের ৭টি জেলায় তাঁদের কার্যক্রম। তাঁরা এখন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকারে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। সমাজে এ বিষয়টি নিয়ে নানা ট্যাবু রয়েছে। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে স্কুলগামী মেয়েদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ার মাধ্যমে ট্যাবু ভেঙে ফেলা।

ঢাকাভিত্তিক সূর্যোদয় ইয়ুথ সোসাইটির উদ্যোক্তা রায়হান নোমান নূরন্নবী জানান, তাঁরা তরুণদের মধ্যে ক্লাইমেট জাস্টিস, জেন্ডার জাস্টিস বিষয়ে দক্ষতা ও সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করেন। এসব বিষয় নিয়ে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চান তাঁরা।

বগুড়ার সংগঠন ভাস্ট যুব ফোরামের উদ্যোক্তা তানিয়া খাতুনরাও তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলার কাজ করেন। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে তরুণেরা যেন দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন এবং সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করতে পারেন।

ঢাকাভিত্তিক কাশফুল ফাউন্ডেশনের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন অনিমা তাবাসসুম তিথি। তিনি বলেন, তরুণদের মধ্যে ডিজিটাল রাইটস, জলবায়ু পরিবর্তনে নারীদের ভূমিকা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তাঁদের সংগঠন। তাঁদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নীতিনির্ধারণী প্রয়োজনে তরুণেরা যেন নিজেদের কণ্ঠ জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারেন।

সম্মেলনে যুব নেতৃত্ব, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তরুণদের করণীয় এবং প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। লিডারশিপ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন রিলার্নের প্রতিষ্ঠাতা মিফতাহ জামান। তরুণদের পারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক এই পর্বে মিফতাহ জামান জানতে চান নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পর্কে। তরুণেরাও নিজেদের মতো করে তুলে ধরেন। মিফতাহ বলেন, নেতৃত্বের জন্য সহনশীলতা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হয়। তাঁর কথা, এমন নেতা হতে হবে, যেন মৃত্যু হলেও নেতৃত্বের প্রভাব থেকে যায়।

এই সম্মেলনে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই বাল্যবিবাহ কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এই সেশনটি পরিচালনা করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জারফিশা আলম।

প্রশিক্ষণের শেষ পর্বে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরামর্শক (এসআরএইচআর) সৈয়দ নূরুদ্দিন।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী তরুণদের ধন্যবাদ দেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনের শেষ দিকে গান পরিবেশন করে এফ মাইনর ব্যান্ড। এই গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী যুব সম্মেলন শেষ হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রজনন স ব স থ য ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৫০৮৫ অভিযানে ১৩০১ মামলা, ১০৪৭ জনকে কারাদণ্ড 

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ ও টেকসই আহরণ নিশ্চিত করতে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপী "মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ চলছে।

দেশের উপকূলীয় নদ-নদী, মোহনা ও সাগরসহ ৩৮ জেলার ১৭৮টি উপজেলায় পরিচালিত এ বিশেষ অভিযান ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে ২৫ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত।

আরো পড়ুন:

মেঘনায় নৌ পুলিশের অভিযানে ২৮ জেলে গ্রেপ্তার

ঝালকাঠিতে ইলিশ ধরায় ৩ জেলের কারাদণ্ড

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫০৮৫টি অভিযান চালিয়ে ১১৭৫টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৩০১টি মামলা করা হয়েছে।

আইন ভঙ্গের অপরাধে ১০৪৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান এবং ৪২.৪৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এছাড়া ৪২৮.৪৭ লাখ মিটার জাল ও ৫৭.১ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত ইলিশ এতিম খানায় বিতরণ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে এবং নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিলামে বিক্রয়ের মাধ্যমে ৩১.১২৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ এর এ সময়কালে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, নিষিদ্ধ জাল ও ইলিশ জব্দ, জরিমানা এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণসহ ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

অভিযানে মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় একজন সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) মৎস্য অধিদপ্তরের দুই জন কর্মকর্তা, নৌ পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর, তিন জন কনস্টেবলসহ মোট নয় জন সদস্য আহত হন। "ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫’ পরিচালনা করছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫০৮৫ অভিযানে ১৩০১ মামলা, ১০৪৭ জনকে কারাদণ্ড 
  • যে দেশে বিড়ালের সংখ্যা মানুষের চেয়ে বেশি
  • আড়াইহাজারে মেঘনা নদী থেকে ২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ