রাশিয়া-ইউক্রেন ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে: ট্রাম্প
Published: 20th, May 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের অবসানের জন্য আলোচনা শুরু করবে। সোমবার (১৯ মে) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টা ফোনালাপের পর ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দেন।
আজ মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে তার কথোপকথনকে ‘খুব ভালোভাবে সম্পন্ন’ হয়েছে বর্ণনা করে বলেছেন, শান্তির জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা করা প্রয়োজন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন যে, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শর্তগুলো ‘দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা করা হবে’। তিনি বলেন, এটিই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়, ‘কারণ তারা এমন একটি আলোচনার বিশদ জানেন যা অন্য কেউ জানে না।’
আরো পড়ুন:
শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা রাশিয়ার
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিনকে ফোন করবেন ট্রাম্প
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তিনি ‘ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির স্মারকলিপি’ নিয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এটি একটি সংজ্ঞায়িত মুহূর্ত’। তিনি রাশিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি, ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেইন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতার পর, জেলেনস্কি ‘পূর্ণ এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির’ জন্য ইউক্রেনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, মস্কো যদি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত না হয়, তাহলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথনের আগে জেলেনস্কি এক বক্তব্যে বলেছিলেন, ইউক্রেন সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত তার দেশ ছাড়া নেওয়া উচিত নয়। তিনি এগুলোকে ইউক্রেনের ‘নীতিগত বিষয়’ বলে অভিহিত করেন।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ‘রাশিয়ার স্মারকলিপি’ সম্পর্কে তার কাছে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। তবে তিনি বলেছেন যে, রাশিয়ানদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পরে ইউক্রেন সে অনুযায়ী তার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবে।
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পরে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, “রাশিয়া এবং ইউক্রেন অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতি এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে, যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য আলোচনা শুরু করবে।” ট্রাম্প আরো জানান, তিনি জেলেনস্কিকে এ বিষয়টি ফোনে জানিয়েছেন, এসময় অন্যান্য বিশ্ব নেতারাও যুক্ত ছিলেন।
পোস্টে ট্রাম্প আরো লিখেছেন, “শান্তি আলোচনার শর্তগুলো উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা করা হবে। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া এ বিষয়ে যতটুকু যা জানে, তা অন্য কেউ জানে না।”
জেলেনস্কি বলেছেন, “আলোচনা প্রক্রিয়ায় উচ্চস্তরের আমেরিকান ও ইউরোপীয় উভয় প্রতিনিধিদের জড়িত থাকতে হবে। অন্যথায় দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় একমাত্র পুতিনই লাভবান হবেন।”
পরবর্তীতে হোয়াইট হাউজে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প জানান, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে না। তবে তার কাছে একটি রেড লাইন রয়েছে যে, কখন সরে আসতে হবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, ট্রাম্প বারবার সতর্ক করে বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা থেকে সরে আসবে কারণ তিনি মস্কো এবং কিয়েভ উভয় পক্ষের শান্তির পথে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন।
রাশিয়া সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কী বিশ্বাস করেন জানতে চাইলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মনে করেন পুতিন যুদ্ধে যথেষ্ট ভুগছেন এবং চান এটির অবসান হোক।
এদিকে, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে তার ফোনালাপকে ‘অকপট, তথ্যবহুল ও গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার কথাও বলেছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত হয়েছি যে, রাশিয়া ভবিষ্যতে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির জন্য একটি স্মারকলিপি প্রদান করবে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।”
পুতিন আরো বলেন, “এটি ‘বহুবিধ অবস্থান’ সংজ্ঞায়িত করবে, যার মধ্যে রয়েছে সমঝোতার নীতিমালা এবং সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি সম্পাদনের সময়সীমা.
চলতি মাসের শুরুতে পুতিন তুরস্কে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার জন্য মুখোমুখি বৈঠকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর নতুন পোপ ভ্যাটিকানকে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার স্থান হিসেবে প্রস্তাব করেছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর জ য ইউক র ন ইউক র ন র ত র জন য বল ছ ন প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার নোবেল সম্পর্কে যা বললেন সাবেক স্ত্রী
সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে সোমবার দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানা-পুলিশ। তার বিরুদ্ধে এক নারীকে সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেমরা থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে বলে জানান ডেমরা থানার ওসি মাহমুদুর রহমান।
তিনি জানান, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত কণ্ঠশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নোবেলের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ্য আসার পর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তার সাবেক স্ত্রী মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদ। মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে সালসাবিল লিখেছেন, ‘আমি বর্তমানে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছি এবং আমি কারও বিরুদ্ধেই কোনো প্রকারের মামলা দায়ের করিনি।’
২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদকে বিয়ে করেন। পরে তিনি নোবেলের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। পরে দুজনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
ডেমরা থানায় করা এক নারীর মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয় এবং নোবেলের সঙ্গে তার মাঝে মধ্যে মুঠোফোনে যোগাযোগ হতো। গত বছরের ১২ নভেম্বর নোবেল ওই নারীর সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গিয়ে দেখা করেন। তারপর নোবেল তার ডেমরার বাসার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ওই নারীকে বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আরও ২/৩ জনের সহযোগিতায় নোবেলের বাসায় তাকে আটক রাখেন। ঘটনার সময় নোবেল ভিকটিমের মোবাইল ভেঙে ফেলেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করেন। তারপর ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন।
ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গতকাল ১৯ মে পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নোবেলের বাসায় আটক রাখেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই নারীকে নোবেলের মারধরের একটি ভাইরাল হয়, যার মাধ্যমে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে। পরে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার ঘটিকায় ডেমরা থানা পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে।
দুই বছর আগেও নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সেবার প্রতারণার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একটা অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন নোবেল। কিন্তু পরে আর তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি। এ ঘটনায় ২০২৩ সালে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।