রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে এ পর্যন্ত সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এখন পর্যন্ত শুধু আশ্বাসের ওপরই রেখেছেন রাশিয়ান নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। গত সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর পুতিন আবারও শান্তি ফেরাতে ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছার আশ্বাস দেন। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, পুতিন কি আসলেই যুদ্ধবিরতি চান? নাকি তিনি হামলা আরও দীর্ঘায়িত করার জন্য আলোচনায় বসার নামে শুধু সময়ক্ষেপণ করছেন। ওই ফোনালাপের পর মস্কো-কিয়েভ পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলাও হয়েছে। 

সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়, একদিকে ট্রাম্প পুতিনের ওপর বিশ্বাস করতে চান, অন্যদিকে ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভালো ফল বয়ে আনতে পারে বলে মনে করেন পুতিন। এভাবেই দুই নেতা পরিস্থিতি শুধু অনিশ্চয়তার দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন। শান্তি কেবলই দূরে চলে যাচ্ছে। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই ইউক্রেনকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করার কথা বিবেচনা করছেন ইউরোপের নেতারা। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় বিমানবাহিনী ব্যবহার করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ‘স্কাইশিল্ড’ নামের অভিযান পরিকল্পনাটি প্রথমবারের মতো ন্যাটো বিমান ও পাইলটদের ইউক্রেনের আকাশসীমায় প্রবেশ করাতে পারে, যা রাশিয়াকে বার্তা পাঠাবে যে,  ইউরোপ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গার্ডিয়ান বলছে, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে। পুতিন-ট্রাম্প ফোনালাপের পর পুতিনের কাছ থেকে কোনো ভালো কিছু আশা করছেন না তারা। এ জন্য রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম, জ্বালানি রপ্তানি এবং তথ্য যুদ্ধকে সমর্থনকারী ও ইউক্রেনে আক্রমণের অর্থায়নে সহায়তাকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। 

ইইউর পররাষ্ট্রনীতিপ্রধান কাজা ক্যালাস এক্স পোস্টে বলেছেন, ‘রাশিয়ার প্রায় ২০০টি জাহাজের ছায়া নৌবহরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আরও নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়া চলছে। রাশিয়া যত দীর্ঘ যুদ্ধ চালাবে, আমাদের প্রতিক্রিয়া তত কঠোর হবে।’

সোমবার পুতিনের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বেশি আলাপ করেন ট্রাম্প। একই দিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও তিনি কথা বলেন। হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের স্পষ্ট আলাপ হয়েছে। পুতিন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন।  

তবে জেলেনস্কি এই আলাপের পর খুশি হননি। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও দখলদারিত্ব ধরে রাখার জন্য ‘সময় কিনে নেওয়া’র চেষ্টা করছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত প্রস্তাব থাকতে হবে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, পুতিন প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে আগ্রহী নন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার নামে কেবলই সময় নিয়ে খেলছেন।  

এর আগে ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তবে মস্কো তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, পুতিন চূড়ান্ত চুক্তির জন্য আলোচনায় জোর দিচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন মাসের পর মাস সময় নিয়ে আলোচনা চালানোর কৌশল নিয়েছেন। যাতে হামলা আরও বাড়ানো যায়। তাঁর এই কৌশলের প্রধান শিকার নিরীহ মানুষ।  

এদিকে ট্রাম্পের পদক্ষেপ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, পুতিন যুদ্ধবিরতি বারবার প্রত্যাখ্যান করায় ট্রাম্প এই প্রচেষ্টা থেকে সরে আসারও হুমকি দিয়েছিলেন। এই অবস্থায় বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প গাজায় যখনই যুদ্ধবিরতির কথা তোলেন, তখনই ইসরায়েল হামলা বাড়িয়ে দেয়। ইউক্রেনেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। 

মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক উপপরিচালক বেথ স্যানার মনে করেন, দুই ঘণ্টার ফোনালাপে শান্তিচুক্তির ব্যাপারে ট্রাম্প পুতিনকে সর্বোচ্চ অনুরোধ করেন। পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, দুই নেতা কেউই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে চাননি। 

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, ফোনালাপের পর রাশিয়া ১০৮টি শাহেদ ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। ৯৩টি ঠেকিয়ে দিয়েছে তারা। অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে রাশিয়ায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় সংস্থাটির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস কালামার মস্কোর কড়া সমালোচনা করেছেন। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ন ল প র পর ইউক র ন র র জন য ইউর প র ওপর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ