আমাদের শিশুরা না খেয়ে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে: ফিলিস্তিনি বাবার আর্তনাদ
Published: 21st, May 2025 GMT
ইসরায়েলের বর্বর হামলায় বিধ্বস্ত গাজার দাতব্য সংস্থার একটি স্যুপ কিচেনের চারপাশে জড়ো হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। খালি পাত্র হাতে এক কাপ ডালের আশায় ভিড় ঠেলে এগিয়ে যান চার সন্তানের বাবা মাহমুদ আল-হাও। সন্তানের মুখে কিছুটা হলেও খাবার তুলে দিতে প্রতিদিন মাহমুদ জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের ধ্বংসাবশেষের আশেপাশে ছুটে চলেন। ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোনো কোনো দিন তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় এবং ডালের স্যুপ খুঁজে পান। তবে মাঝেমধ্যে তাকে ফিরতে হয় খালি হাতে। সেই দিনগুলোয় তিনি সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারেন না।
৩৯ বছর বয়সী মাহমুদ রয়টার্সকে বলেন, আমার একটি অসুস্থ মেয়ে আছে। আমি তাকে কিছু দিতে পারি না। রুটি নেই, কিছুই নেই। সকাল ৮টা থেকে ৬ ঘণ্টা ধরে এক বাটি ডালের জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছি। একজনের জন্য যথেষ্ট না হলেও ডালটুকু আমার ৬ জনের পরিবারকে খেতে হবে।
মাহমুদ এক বাটি ডাল নিয়ে ঘরে ঢুকলে তার ছেলেমেয়ে চুপচাপ এগিয়ে এসে খাওয়া শুরু করে। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, আজকে খাবার পেয়েছি। আপনি যে খাবার দেখতে পাচ্ছেন, এটি আমাদের সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার। যদিও আগের দিন খাওয়ার জন্য কিছুই ছিল না। আমি চাই বিশ্বের সবাই অনুগ্রহ করে আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমাদের শিশুরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মার্চ মাসের শুরু থেকেই ইসরায়েল গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির আবাসস্থল অবরুদ্ধ এই এলাকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির পর সীমিত মানবিক সহায়তা বিতরণ পুনরায় শুরু করতে ইসরায়েল সম্মত হওয়ার পর সোমবার কিছু ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল অনুমতি না দেওয়ায় খাদ্যগুলো বিতরণ কেন্দ্রে নেওয়া যায়নি। এ কারণে বুধবার পর্যন্ত কোনও সাহায্য বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
খাবারসহ মৌলিক উপকরণের তীব্র ঘাটতির সঙ্গে সঙ্গে গাজায় হামলা জোরদার করেছে দখলদার দেশটি। অঞ্চলটির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় গত আট দিনে ৫০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ৪২ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৫৭৩ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সূত্র: রয়টার্স ও আল-জাজিরা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল আম দ র ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।