১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ তহবিল গঠনের আহ্বান
Published: 22nd, May 2025 GMT
দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে আগামী অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ (ঘূর্ণায়মান) তহবিল গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইনাফি বাংলাদেশের উদ্যোগে ’জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের পরামর্শ সভা’য় এই আহ্বান জানানো হয়। ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে সম্প্রতি এই সভা হয়।
পরামর্শ সভায় ২০২৪ সালের অর্থবিলে প্রস্তাবিত জটিল কর বিধানগুলো সরলীকরণেরও আহ্বান জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
ঋণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিটি
ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় গৃহবধূকে আটকে রাখার অভিযোগ
সভায় দেশের মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের নেতৃবৃন্দ আসন্ন জাতীয় বাজেট নিয়ে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরেন। পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)-এর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান (ইভিসি) অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্, আশার প্রেসিডেন্ট মো.
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনাফি বাংলাদেশ-এর ভাইস চেয়ারম্যান এমরানুল হক চৌধুরী। মূল প্রবন্ধে মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের প্রধান নীতিগত ও আর্থিক প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরে বলা হয়, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও দারিদ্র্য বিমোচনে মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের ভূমিকা অপরিসীম। এই খাতের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল জরুরি। পাশাপাশি করনীতিকে সরলীকরণ করা হলে আমরা আরও বেশি মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
পরামর্শ সভায় মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের পক্ষ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ (রিভলভিং) তহবিল গঠনের আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালের অর্থবিলে প্রস্তাবিত জটিল কর বিধানগুলো সরলীকরণের আহ্বান জানানো হয়। দাতাদের সহায়তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে উল্লেখ করে অনুদান-নির্ভর সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে সরকারি অনুদান বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়। মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের নেতৃবৃন্দ অর্থ মন্ত্রণালয় ও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিয়মিত প্রাক-বাজেট পরামর্শ সভাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যাতে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগেুলোতে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও চাহিদার প্রতিফলন দেখা যায়।
অধ্যাাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, “মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হলে নীতিনির্ধারক ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন আদায় আরো সহজ হবে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থায়নের সুযোগ বাড়াতে হবে। বড় মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ব্যাংকের মতো সঞ্চয় সংগ্রহ করতে পারে এবং সেটি ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়নে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে এই খাতের অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই দূর হবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, “অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা স্থিতিশীলতার দিকে এগুলেও সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। বর্তমানে দেশ নানা সংকটের মুখোমুখি। কোভিডের সময়ের মতো এই প্রেক্ষাপটেও মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু অভিযোজন ও নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে বেকারত্ব মোকাবিলার মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
“এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক খাতগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখা হলে আমরা এই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারব,” বলেন তিনি।
ইনাফি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ২০০৩ সাল থেকে প্রধানত গবেষণা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, কারিগরি সহায়তা, উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঋণ ১০ হ জ র ক ট র অর থ তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
হোয়াইট হাউসে থাকাকালে কি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘোষণা তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানা প্রশ্নকে আবার আলোচনায় এনেছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স যেমন বলেছেন, বাইডেনের উচিত ছিল জনসাধারণের সঙ্গে আরও স্বচ্ছ হওয়া।
রোম সফর শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভ্যান্স বলেন, মার্কিন জনগণ কেন তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাননি?
‘তাঁর আসলে কী সমস্যা হয়েছিল, কেন সে সম্পর্কে জনগণ যথাযথ তথ্য পাননি? এটা তো একটা গুরুতর বিষয়।’ তিনি শুভকামনা জানান, যাতে বাইডেন ঠিকভাবে সেরে ওঠেন।
তার পর থেকে আলোচনা চলছিলই। রিপাবলিক পার্টির নেতা ভ্যান্সের মন্তব্যটি ৮২ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য নিয়ে চলমান সেই বাহাসের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির সময় বাইডেনের মানসিক স্থিরতা নিয়ে তাঁর সহকারীরা এবং দলের অনেক নেতাই উদ্বিগ্ন ছিলেন।
বইটির উদ্ধৃত অংশের জের ধরে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জনগণের কাছ থেকে লুকানো হয়েছিল কি? তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকারীরা এসব আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বাইডেন তখনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পুরোপুরি সক্ষম ছিলেন।
এ বিষয়ে রয়টার্স বাইডেনর একজন মুখপাত্রের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়েছিল, তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া মেলেনি। তবে তিনি টেলিভিশনে এসে দাবি করেছেন, তাঁর মানসিক সক্ষমতা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। ৮ মে এবিসির ‘দ্য ভিউ’ অনুষ্ঠানে বাইডেন বলেন, ‘এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে পুনর্নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে বাইডেনের দুর্বল পারদর্শিতা ডেমোক্রেটিক পার্টি তাঁর সমর্থন কমিয়ে দেয়। এরপর ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস নিজে প্রার্থী হন, কিন্তু নভেম্বর ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পের কাছে হেরে যান।
চিকিৎসকদের বিস্ময়বাইডেনের দপ্তর বলেছে, শুক্রবার তাঁর প্রস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে এবং সেটা হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। রয়টার্সকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, সাধারণত এ ধরনের ক্যানসার এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই শনাক্ত হয়।
নর্থওয়েস্টার্ন হেলথ নেটওয়ার্কের ক্যানসার কর্মসূচির পরিচালক ডা. ক্রিস জর্জ বলেছেন, ‘আমি ধারণা করি, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রতিবছর খুব ভালো করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এমনটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, গত বছর তাঁর রক্তের পরীক্ষার ফল ভালো ছিল।’
এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গন হেলথের ইউরোলজিস্ট ড. হার্বার্ট লেপোর বলেছেন, আজকের দিনে এত রকম পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ আছে যে এমন দেরিতে ক্যানসার ধরা পড়াটা একটু অস্বাভাবিক।
সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যানসার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আগেই ধরা পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশিকাগুলো ৭০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের প্রতিবছর রক্ত পরীক্ষা করাতে বলে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় এই পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
সাংবাদিক জেক ট্যাপার ও অ্যালেক্স থম্পসনের নতুন বই ‘অরিজিনাল সিন’ ক্ষমতায় থাকার শেষ মাসগুলোতে বাইডেনের মানসিক সচলতার বিষয়টি সামনে এনেছে।
২০২৮ সালের ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন কনেকটিকাট থেকে আসা মার্কিন সেনেটর ক্রিস মারফি। রোববার সংবাদমাধ্যম এনবিসিতে তিনি বলেন, ‘আরও আগে ভোটারদের কথা না শুনে ডেমোক্র্যাটরা ভুল করেছেন।’
২০২৪ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের মধ্য থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বাইডেনের কোনো বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। দলের শীর্ষ নেতারা বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি দ্বিতীয়বার চার বছর মেয়াদে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। অথচ রয়টার্স/ইপসোসের জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৭৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করতেন, এই পদটির জন্য তাঁর বয়স অনেক বেশি।
বাইডেনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে তাঁর সমর্থক এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ প্রতিদ্বন্দ্বীরা একযোগে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বাইডেন তাঁর স্ত্রী জিল এবং নিজের পক্ষ থেকে সবাইকে তাঁদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ক্যানসার আমাদের সবার জীবন স্পর্শ করে। অনেকের মতো, জিল আর আমি শিখেছি যে আমরা নাজুক জায়গাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চার করতে পারি। আপনাদের ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।’