দাম বাড়ার আশায় ডলার ধরে না রাখতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান গভর্নরের
Published: 22nd, May 2025 GMT
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দাম বাড়ার আশায় ডলার ধরে রাখবেন না। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলেও ডলারের দর স্থিতিশীল থাকবে।
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আজ বৃহস্পতিবার ‘বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের প্রয়োগ ও প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গভর্নর। এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা। বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, জিপিএইচ ইস্পাত ও ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ফেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান রুহুল আলম আল মাহবুব, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী, মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের রিজিওনাল অপারেশন ম্যানেজার শিহাবুল হাসান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছিল আমাদের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার জন্য। কিন্তু কখন এটা করব? এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছিল। অনেকেই বলেছেন আইএমএফের শর্তগুলো আমরা পরিপালন করতে পারব না। আগের সরকার একটাও পূরণ করতে পারেনি এটা সত্য, কিন্তু আমরা সব কটি পূরণ করেছি।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কম থাকায় আমাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেওয়ার পক্ষে আমি না। আমি কর বাড়িয়ে দেব। যার সামর্থ্য আছে সে কিনবে। যার নাই, সে কিনবে না।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের এখন গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৪ শতাংশে নিয়ে আসা। আমার যেটা মনে হচ্ছে আগস্টের মধ্যে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে চলে আসবে। বছর শেষে এটা ৫ শতাংশের মধ্যে চলে আসবে বলে আমি মনে করি।’
অর্থ পাচারের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকের শত শত কোটি ডলার বিদেশে আছে। কেন তারা টাকা এখানে না এনে সেখানে রাখে? কারণ, তারা ভাবে বাংলাদেশে অর্থ নিরাপদ কি না? কারণ, বিদেশে অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। দেশের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। তাই এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে ভাবতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। অর্থনৈতিক যৌক্তিকতার দিক থেকে বিবেচনা করলে আমাদের একটা না একটা সময় বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের দিকে যেতেই হবে। আমি মনে করি বর্তমান পরিস্থিতি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য যথাযথ সময়।’
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিদেশ থেকে অনেক বিলাসী পণ্য আমদানি করি। এটা কমানো উচিত। সেটি করা গেলে ডলারের চাহিদা অনেক কমে যাবে।’
জিপিএইচ ইস্পাতের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আর্থিক খাতে বড় ধরনের একটা সংস্কার দরকার ছিল। বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে সেটি হয়েছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘২০১৮–১৯ সাল থেকে আমাদের বিনিময় হারকে জোর করে চেপে ধরে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে পরে একটা ফিক্সড জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে বিনিময় হার চাপিয়ে রাখা যায় না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
উ. কোরিয়ায় যুদ্ধজাহাজ উদ্বোধনের সময় দুর্ঘটনা
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন গতকাল বৃহস্পতিবার একটি নতুন যুদ্ধজাহাজ উদ্বোধনের সময় ঘটে যাওয়া গুরুতর দুর্ঘটনাকে ‘অপরাধমূলক কাজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি এমন একটি কাণ্ড, যা সহ্য করা যায় না।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর শহর চংজিনের এক জাহাজ কারখানায় পাঁচ হাজার টন ওজনের একটি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজের তলা নষ্ট হয়ে গেছে এবং জাহাজটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। কিম জং উন স্বয়ং উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং ঘটনাটি এক মুহূর্তের মধ্যেই জাতির মর্যাদা ও গৌরবকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুর্ঘটনার জন্য কিম নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োজিতদের চরম অবহেলা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অজ্ঞানতাকে দায়ী করেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী মাসে (জুন) অনুষ্ঠিতব্য গুরুত্বপূর্ণ পার্টি সম্মেলনের আগেই যুদ্ধজাহাজটি ফের সংস্কার করে প্রস্তুত করতে হবে এবং জাহাজের নকশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এই ঘটনায় কোনো হতাহত বা প্রাণহানির তথ্য পাওয়া যায়নি।
উত্তর কোরিয়ার মতো নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে এ ধরনের স্থানীয় দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ করা অত্যন্ত বিরল। তবে এর আগেও কিছু ঘটনার তথ্য সীমিতভাবে প্রকাশ পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে একটি সামরিক স্যাটেলাইটের মাঝ আকাশে বিস্ফোরণকে ‘গভীর ব্যর্থতা’ বলে স্বীকার করেছিল তারা। ২০২৩ সালের আগস্টে আরেকটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ব্যর্থতার কারণ হিসেবে জরুরি উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করা হয়েছিল।
সর্বশেষ দুর্ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগেই উত্তর কোরিয়া তাদের পশ্চিম উপকূলে একটি পাঁচ হাজার টন ওজনের নতুন যুদ্ধজাহাজটি প্রদর্শন করেছিল। দেশটির দাবি, এই জাহাজে ৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র বহনের সক্ষমতা রয়েছে। কিম এই যুদ্ধজাহাজকে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে ‘অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, এটি আগামী বছরের প্রথম দিকে মোতায়েন করা হবে।
উত্তর কোরিয়ায় মানুষের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক উদ্বেগ রয়েছে। অনেক সময় সাধারণ কাজের জন্যই কাউকে জেল খাটতে হয়। এখন দেখার বিষয়, এই যুদ্ধজাহাজের ব্যর্থতায় জড়িত ব্যক্তিদের কী ধরনের শাস্তির মুখোমুখি করা হয়।