হিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা
Published: 23rd, May 2025 GMT
আমরা অনেকেই শৈশবে ইসলামি মাসগুলোর নাম মুখস্থ করেছি বা আমাদের সন্তানদের সুর করে সেগুলো শিখিয়েছি। কিন্তু আজ কজন আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি বারোটি হিজরি মাসের নাম? বা চারটি পবিত্র মাস কোনগুলো বা এই মুহূর্তে কোন মাস চলছে? রমজান, ঈদ, আরাফা বা আশুরার মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিন ছাড়া হিজরি ক্যালেন্ডার এখন আমাদের জীবনে শুধু একটি সাংস্কৃতিক নিদর্শন ছাড়া কিছু নয়। অথচ এই ক্যালেন্ডার বা কালপঞ্জির সঙ্গে পুনঃ সংযোগ আমাদের ইমানকে গভীর করতে পারে, আমাদের জীবনকে আল্লাহর পথে নিয়ে যেতে পারে। হিজরি ক্যালেন্ডার শুধু সময় মাপার হাতিয়ার নয়, এটি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে।
হিজরি কালপঞ্জি: ইবাদতের একটি রূপ
কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সূর্যকে উজ্জ্বল ও চাঁদকে আলোকিত করেছেন এবং এর জন্য নির্দিষ্ট পর্যায় নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বছরের সংখ্যা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব সৃষ্টি করেছেন ‘হক’র উদ্দেশ্যে। তিনি জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন স্পষ্ট করেন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৫)
ইমাম কুরতুবি (মৃ.
আমরা রমজানের জন্য আগাম পরিকল্পনা করি, কিন্তু আরাফা বা আশুরার রোজার কথা প্রায়ই জুমার খুতবায় খতিব উল্লেখ না করলে ভুলে যাই। হিজরি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারি, যেমন গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে ছুটির জন্য আমরা পরিকল্পনা করি। পবিত্র মাসগুলো জানা আমাদের বেশি নেক আমল করার নিয়ত করতে উৎসাহিত করে। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ চারটি মাসকে পবিত্র করেছেন, যেখানে পাপের গুরুত্ব বেশি এবং নেক আমলের প্রতিদানও বহুগুণ।’ (তাফসির ইবন কাসির, সুরা তাওবা: ৩৬ সংশ্লিষ্ট আলোচনা)
আরও পড়ুনসাহাবিরা যেভাবে মহানবী (সা.)-কে মানতেন২৯ এপ্রিল ২০২৫সুন্নাহ পালনের পথে হিজরি কালপঞ্জি
নবীজি (সা.) আমাদের প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন, যা সারা বছরের রোজার সমতুল্য। (সুনান নাসাই, হাদিস: ২,৪৩৪)
এই সুন্নাহ আমরা তখনই পালন করতে পারি, যদি হিজরি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করি। নতুন চাঁদ দেখারও একটি সুন্নাহ আছে। নবী (সা.) নতুন চাঁদ দেখে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, এই চাঁদ আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করো। হে চাঁদ, আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। এটি হোক হিদায়াত ও কল্যাণের চাঁদ।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৫১)
চাঁদের চক্র অনুসরণ আমাদের কোরআনের আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তাশীল হতে উৎসাহিত করে, যেখানে চাঁদের নিখুঁত কক্ষপথের কথা বলা হয়েছে।
সুন্নাহ পুনরুজ্জীবনের পুরস্কার
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করে, যা আমার পরে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, সে তাদের সমান পুরস্কার পাবে, যারা তা পালন করবে, তাদের পুরস্কার কমানো ছাড়াই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০১৭)
হিজরি কালপঞ্জি অনুসরণ একটি ছোট পদক্ষেপ মনে হতে পারে, কিন্তু এটি নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহকে জীবিত করার একটি শক্তিশালী উপায়। আমরা আমাদের ঘরে হিজরি ক্যালেন্ডার টাঙাতে পারি, ফোনের ডিসপ্লেতে হিজরি তারিখ সেট করতে পারি বা প্রতি মাসে নতুন চাঁদ দেখতে যেতে পারি। এই ছোট ছোট পদক্ষেপ আমাদের পরিবার ও সম্প্রদায়কে আল্লাহর সময়ের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
আসুন, আমরা এই সুন্নাহকে পুনরুজ্জীবিত করি, আমাদের জীবনকে আল্লাহর নৈকট্যের পথে নিয়ে যাই। এটি কেবল একটি ক্যালেন্ডার নয়, এটি আমাদের ইমানের প্রতিফলন, আমাদের পরিচয়ের অংশ।
সূত্র: প্রোডাক্টিভ মুসলিম ডটকম
আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র জ র জন য ন আল ল হ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত