জ্যৈষ্ঠ মাসের ফলগুলো যেমন মিষ্টি, তেমনি পুষ্টিকর। সব ধরনের ভিটামিন আর খনিজে ভরপুর এসব ফল। এর মধ্যে লিচু অন্যতম আর এটা সবারই খুব প্রিয়। বিশেষ করে শিশুদের। আসুন জেনে নিই লিচু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। লিচু খাওয়ার সময় কিছু সতর্কতা নিয়েও আলাপ হোক।
উপকারিতা কী
লিচু স্বাদে ভরপুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল।
লিচুর ভিটামিন সি রক্তের শ্বেতকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। লিচুর লিচিট্যানিন শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করে। লিচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কপার আছে, যা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়। আয়রন, ফলিক অ্যাসিড শরীরে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।
লিচুতে আছে ফ্ল্যাভানল, যা প্রদাহ কমায়। লিচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার আছে। এসব মিনারেল হাড়ের যত্নেও সহায়ক।
লিচুর অলিগোনল নামের উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে কাজ করে। এই উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ত্বকে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
লিচুর অন্যতম উপাদান এপিকেচিন, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই চমৎকার একটি উপাদান। এপিকেচিন রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলো প্রতিরোধে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পাকা লিচুর চেয়ে কিছুটা কাঁচা লিচু বেশি কার্যকর। তবে অতিরিক্ত পাকা লিচু খেলে ডায়াবেটিক রোগীর ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
সতর্কতা
লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামের একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি করতে বাধা দেয়। এটি আমাদের যকৃতে গ্লুকোজ উৎপাদন ও চর্বি ভাঙতে বাধা দেয়। তাই খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুদের খালি পেটে কখনো লিচু দেওয়া যাবে না। হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে শিশুর শরীরে হঠাৎ করে গ্লুকোজের অভাব দেখা দেয়। কিছু টক্সিন তৈরি হয়, টক্সিনগুলো মস্তিষ্কে চলে যায়। ফলে শিশুর মাথাব্যথা, বমি, ঘাম, খিঁচুনি হতে পারে এবং শিশু অচেতন হয়ে পড়তে পারে। আধা পাকা ও কাঁচা লিচুতে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এভাবে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি শিশু মারা যায়। তবে যেসব শিশু বেশি অপুষ্টির শিকার, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
তাই শিশুদের লিচু খাওয়ানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, লিচু যেন পাকা হয় এবং শিশু যেন অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকার পরে লিচু না খায়। ২-১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ডায়াবেটিক রোগীরা দিনে ছয়-সাতটি লিচু খেতে পারবেন।
যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরাও পরিমিত পরিমাণে লিচু খাবেন।
প্রধান খাবারের পরপরই ফল খাওয়া উচিত নয়। এতে ওজন, ডায়াবেটিস—দুটিই বেড়ে যাবে। তাই স্ন্যাকস হিসেবে ফল খাবেন।
বিকেলের পরে আর কোনো ফল নয়, যা খাওয়ার তা বিকেলের আগেই খাবেন।
প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।
মো.
ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গৃহহীন মানুষের জন্য ৩৪০টি ঘর হস্তান্তর করল নৌবাহিনী
চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার উড়িরচরে গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য নির্মিত ৬৮টি পাকা ব্যারাক আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সোমবার এসব ব্যারাক স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌবাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসানের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই ব্যারাক হাউসগুলো নির্মাণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রতিটি ব্যারাকে পাঁচটি করে মোট ৩৪০টি ইউনিট রয়েছে। যার প্রতিটিতে একটি করে গৃহহীন পরিবার বসবাস করতে পারবে। প্রতিটি ব্যারাকে রয়েছে পৃথক রান্নাঘর এবং বাথরুমের সুবিধা। নৌবাহিনীর নবনির্মিত এসব ব্যারাক হাউস নৌবাহিনীপ্রধানের পক্ষ থেকে নৌবাহিনীর প্রতিনিধি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সন্দ্বীপ জেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে হস্তান্তর করেন।
এর আগেও আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাট, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কক্সবাজার জেলায় সর্বমোট ২৩৩টি প্রকল্পে মোট ৪ হাজার ৫৬০টি ব্যারাক হাউস নির্মাণ শেষে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে নৌবাহিনী। এসব ব্যারাকে আশ্রয় পেয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৫টি গৃহহীন পরিবার।