ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতি খতিয়ে দেখবে বিএসইসি
Published: 28th, May 2025 GMT
পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক হিসাবের অসঙ্গতি ও অন্যান্য বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
গত ১৭ মে সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সহায়তা তহবিলের আকার বাড়ানোসহ বিএমবিএর ৯ দাবি
৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসবে স্বতন্ত্র পরিচালক
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান, উপ-পরিচালক মো.
আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। তাই সার্বিক বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।’
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক বিবরণী যাচাই, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি ও ডিএসইর তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য বিষয় অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখবে।
এদিকে কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীতে সম্পদ, দায়, শেয়ারধারীদের মূলধন (ইকুইটি), মুনাফা ও নগদ প্রবাহের সত্য ও সঠিক চিত্র উপস্থাপন করেছে কি না এবং আর্থিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) এবং আন্তর্জাতিক অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডের (আইএসএ) সঙ্গে সামঞ্জস্যতা, প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারিজ, যন্ত্রপাতি ও ভবন, ভূমি ও ভূমি উন্নয়ন ইত্যাদির মালিকানা, প্রকৃত অস্তিত্ব যাচাই করা হবে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
২০২৩ ও ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ০.৫০ শতাংশ অন্তবর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি।
এদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২৫) কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ০.০৮ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.০১ টাকা। এদিকে নয় মাসে বা তিন প্রান্তিক (জুলাই-মার্চ) মিলে কোম্পানিটির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.৩৩ টাকা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০.৩১ টাকা। ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানির সমন্বিত শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২.৩১ টাকা।
ব্যবসায়িক পরিস্থিতি
২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানার ৭.৬১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেওয়ার অনুমোদন পায় মিনোরি বাংলাদেশ। এ প্রতিষ্ঠানটি এমারেল্ড অয়েলের মালিকানায় রয়েছে। মালিকানা বদলের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি। উল্টো বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে কোম্পানিটি আরো দুর্বল হয়ে গেছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিএসইসির আইন অনুযায়ী মিনোরি বাংলাদেশ ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণেও ব্যর্থ হয়েছে।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৭.৮৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৯.৫৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮২.৫৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২৪ স ল র ৩০ জ ন হ স ব বছর র র ব যবস থ ব এসইস র র আর থ ক সমন ব ত তদন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে বসবে স্বতন্ত্র পরিচালক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৬তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় আরো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বিও ফি ১৫০ টাকা করা সিদ্ধান্ত বিএসইসির
শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না ওয়ান ব্যাংক
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি এবং যেসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব কোম্পানিতে ‘কর্পোরেট গভার্নেন্স কোড ২০১৮’ পরিপালন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
ঢাকা/এনটি/রাসেল