গ্রীষ্মকাল মানেই উত্তপ্ত রোদ, তাপপ্রবাহ আর ঘামঝরা দিন। এ সময় প্রকৃতির রুক্ষতা যতটা তীব্র হয়, ত্বকের ওপর তার প্রভাব ততটাই প্রকট হয়ে ধরা দেয়। মুখের যত্ন নিয়ে সবাই যতটা সচেতন, হাত-পায়ের ব্যাপারে ততটা উদাসীন। অথচ রোদের তীব্রতায় মুখের পাশাপাশি হাত-পাও হয়ে পড়ে রুক্ষ, কালচে ও অমসৃণ। এ কারণে গরমের সময়ও দরকার কিছু টিপস; যাতে হাত-পা ফিরে পায় ঔজ্জ্বল্য আর কোমলতা।
প্রতিদিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
গরমকালে হাত-পায়ে ঘাম ও ধুলোবালি জমে সহজে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এ জন্য প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে হালকা গরম পানি দিয়ে হাত-পা ধুয়ে ফেলুন। চাইলে পানিতে অল্প লবণ ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশাতে পারেন। এটি ত্বক পরিষ্কার করার পাশাপাশি জীবাণু প্রতিরোধেও কার্যকর।
এক্সফোলিয়েশন
গরমে নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন অত্যন্ত জরুরি। রোদ ও ঘামের প্রভাবে ত্বকের ওপর জমে থাকা মৃত কোষ ত্বককে করে তোলে নিস্তেজ ও কালচে। সপ্তাহে অন্তত দু’বার স্ক্রাব করুন হাত-পা। ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক স্ক্রাব যেমন– চিনি, মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ কিংবা চালের গুঁড়া, দুধ ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এ মিশ্রণগুলো ত্বকের ময়লা তুলে ফেলে এবং প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে।
হাইড্রেটিং ও পুষ্টিকর মাস্ক: কোমলতার উৎস
প্রচণ্ড গরমে ত্বক ভেতর থেকে শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই সপ্তাহে একবার একটি হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করুন। পাকা কলা, মধু এবং এক চামচ দুধ দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে হাতে ও পায়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকে ময়েশ্চার জোগায়, টানটান করে এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। চাইলে অ্যালোভেরা জেল ও শসার রস মিশিয়ে আরও একটি ঠান্ডা প্যাক বানাতে পারেন, যা রোদে পোড়া ত্বকের জন্য আরামদায়ক।
সানস্ক্রিন ব্যবহার
অনেকে মনে করেন সানস্ক্রিন শুধু মুখে লাগানোর জন্য। বাস্তবে হাত-পা রোদে অনেক বেশি উন্মুক্ত থাকে। এ সময় প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে হাতে-পায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। রোদের নিচে দীর্ঘ সময় থাকলে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
রাতে বিশেষ যত্ন
দিনের শেষে হাত-পা পানিতে ডুবিয়ে রাখলে একটু আরাম দেয়, ক্লান্তি কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। গরম পানিতে লবণ ও কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল দিয়ে ১৫ মিনিট হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালো কোনো ময়েশ্চারাইজার (যেমন– শিয়া বাটার, নারকেল তেল বা ভ্যাসলিন) ভালোভাবে মালিশ করে মোজা বা গ্লাভস পরে ঘুমাতে যান। এতে রাতভর ত্বক গভীরভাবে পুষ্ট হয় এবং পরদিন সকালে হাত-পা হয় নরম ও মসৃণ।
ডিটক্স পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর
বাড়িতে মাসে অন্তত একবার ডিটক্স পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর করুন। পানিতে বেকিং সোডা, লেবুর রস ও টি ট্রি অয়েল দিয়ে হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর নখ পরিষ্কার করুন, কিউটিকল ট্রিম করুন এবং স্ক্রাব করে মাস্ক লাগান। এই পুরো প্রক্রিয়া ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে, দাগ কমায় এবং একটি সতেজ অনুভূতি দেয়।
গরমে হাত-পায়ের যত্ন নিয়ে রূপবিশেষজ্ঞ শোভন সাহা জানান, ‘গরমে হাত-পায়ের যত্নের জন্য পেডিকিউর-মেনিকিউর নিয়মিত করতে হবে। পায়ের স্বস্তির জন্য ঠান্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এই পানিতে যদি ম্যাগনেশিয়াম পাউডার ব্যবহার করা যায় তাহলে এটি আরও ভালো ফল দেবে। হাতের জন্য অবশ্যই ভালোভাবে স্ক্রাব করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাত-পায়ের যে অংশটুকু উন্মুক্ত থাকে সেটুকু রোদে যাতে না পোড়ে সে জন্য সানব্লক যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।’v
মডেল: অন্তরা; ছবি: কাব্য
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর পর ষ ক র র যত ন র কর ন র জন য ত বক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।