গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের রোগের প্রবণতা বাড়ছে। এ সময় বড়দের চেয়ে শিশুর অসুখ-বিসুখের প্রবণতা বেশি হচ্ছে। কারণ বড়দের চেয়ে শিশুর ত্বক অনেক বেশি নরম, কোমল ও তাপীয়ভাবে অপরিপক্ব। স্বভাবত বড়দের শরীরে যে তাপমাত্রা স্বাভাবিক, তা শিশুর বেলায় অসহ্যকর। এ জন্য তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিশুকে স্বস্তিতে রাখতে সঠিক কাপড় বেছে নেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপযুক্ত কাপড় নির্বাচন করুন
সুতির মতো প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি পোশাক সবসময়ই উপযুক্ত নির্বাচন। সুতির পাশাপাশি লিনেন, মসলিন কিংবা পাতলা সাটিন কাপড়ের হালকা রং– যেমন সাদা, হালকা নীল রং কিংবা গোলাপি আভার পোশাক নির্বাচন করাই ভালো। এ ধরনের কাপড় নরম, অ্যালার্জিমুক্ত, শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঘটায় এবং সহজে শরীরে বায়ু চলাচল বাড়ায়। অবশ্যই পোশাকের প্যাটার্নের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ছোট বাচ্চাদের জন্য এ সময় অতিরিক্ত নকশাযুক্ত বা অলংকৃত পোশাক নির্বাচনে এড়িয়ে চলুন। গরমে সিন্থেটিক, পলিয়েস্টার, নাইলন, মোটা ফেব্রিকস অথবা গাঢ় রং শিশুর শরীরে অস্বস্তি তৈরি করে। এ ধরনের কাপড় নির্বাচন করা থেকে বিরত থাকুন।
শিশুর গরমের পোশাক যেমন হওয়া উচিত
বয়সের তারতম্যের ভিত্তিতে এ গরমে শিশুর জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সমাহার রয়েছে।
(০-৩ মাস) বয়সী নবজাতকের জন্য ছোট হাতা বা হাতাহীন বডি স্যুট উপযুক্ত পোশাক। এ ধরনের কাপড় নবজাতকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও রক্ত চলাচলের বিঘ্ন ঘটায় না।
(৩-১২ মাস) বয়সী শিশু ঘরেই থাকে এবং অল্পবিস্তর ওঠাবসা করে। এ বয়সে ছেলেদের জন্য ছোট হাতা বডি স্যুট বা স্লিভলেস রম্পারের সঙ্গে সুতির প্যান্ট বা শর্টস ও টি-শার্ট নির্বাচন করুন। মেয়েদের জন্য স্লিভলেস ড্রেস বা বাবল রম্পার ব্যবহার করা ভালো।
(১-৩ বছর) বয়সী শিশুরা নড়াচড়া ও হাঁটাচলা শেখে। এ বয়সে ছেলেশিশুর জন্য ঢিলেঢালা সুতির টি-শার্ট ও শর্টস এবং মেয়ের জন্য প্লে-স্যুট কিংবা অর্গানিক কটনের পোশাক বেছে নিন।
(৩-৫ বছর) বয়সী শিশুরা বাইরে যায় ও দৌড়ঝাঁপ করে এবং কেউ কেউ নিজে নিজে পোশাক পরতে চায়। তাই ছেলেদের জন্য ইলাস্টিক ওয়েস্ট শর্টস এবং সুতির ঢিলেঢালা হাফ হাতা শার্ট ও মেয়েদের জন্য স্লিভলেস টপ, হালকা ফ্রক ও স্কার্ট গরমে আরামদায়ক বোধ করতে সাহায্য করে।
গরমে পোশাক পরিচর্যা টিপস
গ্রীষ্মে দুপুর ১২টা থেকে ৪টার মধ্যে শিশুকে বাইরে যেতে একেবারে নিরুৎসাহিত করুন। ঘামে ভেজা কাপড় পানিতে ভিজিয়ে ধুয়ে রোদে দিন। যেসব বাচ্চা ডায়াপার পরে তাদের দিনে নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অতিরিক্ত ডায়াপার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বাইরে গেলে শিশুকে লম্বা হাতা এবং প্রশস্ত ছায়াযুক্ত টুপি পরিয়ে দিন। এটি মাথা, গলা ও কানকে রক্ষা করে এবং হিটস্ট্রোক এড়াতে সাহায্য করে। তবে ইলাস্টিকযুক্ত টুপি এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি রক্ত সঞ্চালনের বাধা দিতে পারে।
কেমন দাম
সুতি ও সাদামাটা নকশা হওয়ায় এ ধরনের পোশাকের দাম অন্যান্য পোশাক থেকে একটু কম। পোশাকের ধরন ও স্থান অনুযায়ী এ ধরনের পোশাকের দাম পড়বে ৩০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে রাজধানীর নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, মৌচাক, মতিঝিল, মিরপুরসহ দেশের খোলা মার্কেটগুলোয় এর দাম পড়বে ৮০ থেকে শুরু করে ৫০০ কিংবা ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
কোথায় পাবেন
বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস যেমন– শৈশব, আড়ং, নিপুণ, রঙ বাংলাদেশ, যাত্রা, বিশ্ব রঙ ইত্যাদিতে পাবেন শিশুর জন্য উপযোগী বাহারি পোশাক।
তাছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, উত্তরার রাজলক্ষ্মীসহ বিভিন্ন শপিংমলে তো থাকছেই। ঘরে বসে অনলাইনেও কিনে নিতে পারেন আপনার শিশুর জন্য আরামদায়ক পোশাক।
দেশীয় ফ্যাশন হাউস ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর কর্ণধার সৌমিক দাস বলেন, ‘এই গরমে অবশ্যই আরামদায়ক সুতির কাপড়ে হতে হবে শিশুর পোশাক। সঙ্গে আঁটসাঁট প্যাটার্ন না হয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে মনোযোগ দিতে হয় শিশুর এ সময়ের পোশাকে।’ তিনি আরও জানান, রং এবং ভ্যালু অ্যাডিশনের দিক থেকে হালকা রং বা মিডিয়া ব্যবহার করতে হবে।
এ গরমে শিশুর যত্নে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাকে সঠিকভাবে পোশাক পরানো এবং হালকা আরামদায়কভাবে ঢেকে রাখা। এতে আপনার শিশু বিভিন্ন রোগবাহী জীবাণু থেকে সুরক্ষা পাবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে উঠবে। v
ছবি সৌজন্য: রঙ বাংলাদেশ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ র জন য দ র জন য এ ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বাজার চলছে ধনীদের ব্যয়ে, অন্যদের খরচ বাড়ছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে
যুক্তরাষ্ট্রের ভোগব্যয় বৃদ্ধিতে অসম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ধনীদের ব্যয় যে হারে বাড়ছে, অন্যদের ব্যয় সে হারে বাড়ছে না। ফলে সমাজে যেমন ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি অর্থনীতিতেও ভারসাম্য সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মহামারির পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে ভোগব্যয় বেড়েছে, তার প্রায় পুরোটাই করেছে ধনিক শ্রেণি। অন্যদিকে নিচের ৮০ শতাংশ আমেরিকান কেবল মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবন যাপন করছে। খবর ফরচুন ম্যাগাজিন।
মুডিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি সতর্ক করেছেন, দেশটির অর্থনীতি এখন ক্রমেই ‘ধনীদের আয় ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে।’ ধনীদের সম্পদ দ্রুত বাড়লেও চাকরির বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রবৃদ্ধি দুর্বল। সেই সঙ্গে পণ্যের দামও বেশি থাকায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না।
জান্ডি লিখেছেন, অনেক আমেরিকান মনে করেন, অর্থনীতি তাঁদের জন্য কাজ করছে না—এটাই সত্যি। তাঁর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মহামারির পর থেকে দেশের নিচের সারির ৮০ শতাংশ মানুষ কেবল মূল্যস্ফীতির সমান হারে খরচ বৃদ্ধি করেছে, অর্থাৎ তাদের ব্যয়ের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি নেই। অথচ আয়ের শীর্ষ ২০ শতাংশই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ব্যয়বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি।
ফেডারেল রিজার্ভের ভোক্তা জরিপ ও আর্থিক হিসাবের তথ্য বিশ্লেষণ করে মুডিস দেখিয়েছে, ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে ধনী ও মধ্যবিত্ত–নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আয়ের ব্যবধান দ্রুত বাড়ছে।
তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কেন সাধারণ আমেরিকানরা মনে করেন, এই অর্থনীতি তাঁদের জন্য নয়। যাঁদের বার্ষিক আয় প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলারের নিচে, তাঁরা শুধু মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খরচ বাড়াতে পেরেছেন। কিন্তু ওপরের ২০ শতাংশ, বিশেষ করে শীর্ষ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ, অনেক লাভবান হয়েছেন।
১৯৯৯ সালের শেষ প্রান্তিককে ভিত্তি ধরে মুডিস ব্যয়ের সূচক তৈরি করেছে। ওই সময়ের ভিত্তিমানকে ১০০ ধরা হলে এখন শীর্ষ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ আমেরিকানের ব্যয় সূচক প্রায় ১৭০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। অন্যদিকে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ব্যয় সূচক প্রায় ১২০ পয়েন্ট—অর্থাৎ মূলত মূল্যস্ফীতির সমান। অর্থাৎ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখন এক ক্ষুদ্র, ধনী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
জান্ডির ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন অনেকটাই ধনীদের খরচের ওপর টিকে আছে। যতক্ষণ তারা ব্যয় করছে, মন্দার আশঙ্কা কম। কিন্তু তারা যদি হঠাৎ সতর্ক হয়ে যায়, তাহলে বড় বিপদ হতে পারে।
ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেফেডারেল রিজার্ভের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা আরও দ্রুতহারে সম্পদশালী হচ্ছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে নিচের ৫০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪ ট্রিলিয়ন বা চার লাখ কোটি ডলার; আগের বছরের ৩ দশমিক ৮৪ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ৮৪ হাজার কোটি ডলার থেকে যা সামান্য বেড়েছে। মধ্যবিত্ত (৫০ থেকে ৯০ শতাংশ) শ্রেণির সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন বা ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার কোটি ডলার—গত বছর যা ছিল ৪৭ লাখ ০২ হাজার কোটি ডলার।
শীর্ষ ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। শীর্ষ ১০ শতাংশ শ্রেণির সম্পদ ৫৮ লাখ ৩৮ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ থেকে ১ শতাংশ ধনীর সম্পদ ২৭ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। শীর্ষ শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শ্রেণির হাতে আছে ২২ লাখ ১৯ হাজার কোটি ডলার—দেশটির নিচের সারির অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সম্পদের পাঁচ গুণেরও বেশি। শূন্য দশমিক ১ শতাংশ শ্রেণির সম্পদ আরও বাড়ছে।
ফোর্বসের হিসাব বলছে, এখন বিশ্বে বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি—এক বছর আগের তুলনায় আরও ২০০ জন বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ধনী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ মানুষের হাতে এখন দেশটির মোট পারিবারিক সম্পদের ১৪ শতাংশ, কয়েক দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। তাদের বিলাস্য–ব্যসনও বাড়ছে, যদিও দ্য ইকোনমিস্টের সংবাদে বলা হয়েছে, তার ধরন বদলে গেছে।
খুচরা বিক্রি এখনো শক্ত অবস্থানেযুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের গতি মন্থর। মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও ভোক্তারা এখনো খরচ কমায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের তথ্যানুসারে, আগস্ট মাসে খুচরা বিক্রি শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে—এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। সেপ্টেম্বর মাসেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।
বিশ্লেষকেরা বলেন, চাকরির বাজার কিছুটা দুর্বল হলেও স্কুল খোলার মৌসুমে খরচ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। যখন আর উপায়ান্তর থাকবে না, তখনই মার্কিনরা খরচের লাগাম টানবে, তার আগে নয়।
বিশ্লেষকদের সতর্কবার্তা হলো, সাম্প্রতিক তিন মাসে ব্যয়ের বড় অংশ এসেছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে, প্রকৃত ক্রয় থেকে নয়। তাঁরা আরও বলেন, সাম্প্রতিক চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় আগেভাগে কেনাকাটার প্রবণতাও কাজ করেছে—অক্টোবরে তা কমে যেতে পারে।