সেতুতে ওঠার আগে নির্ধারিত স্থান ‘ডেড স্টপে’ ট্রেন থামানোর নির্দেশনা ছিল। ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার) সেই সংকেত মানেননি। তিনি সংকেত উপেক্ষা করে ট্রেন চালিয়েছেন, তা–ও নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে। এভাবে একের পর এক নিয়ম ভেঙে ট্রেন চালানোর কারণে ঘটেছে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল মা-বাবার কোলে থাকা দুই বছরের এক শিশুসহ দুজনের।

পবিত্র ঈদুল আজহার দুদিন আগে ৫ জুন রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনার জন্য কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ট্রেনচালক গোলাম রসুল ও সহকারী ট্রেনচালক মোহাম্মদ আমিন উল্লাহকে দায়ী করেছে রেলওয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি। দুর্ঘটনার পরপরই এই দুই চালকসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল রেলওয়ে। তবে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ট্রেনের গার্ড সোহেল রানা ও অস্থায়ী গেটকিপার মো.

মাহবুবের দায় খুঁজে পায়নি কমিটি।

রেলের তদন্ত কমিটি আজ বৃহস্পতিবার বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) এ বি এম কামরুজ্জামানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তিনি প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৫ জুন রাতে এই সেতুর পূর্ব প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, দুটি মোটরসাইকেল ও একটি আইসক্রিমবাহী ভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে চুরমার করে দেয় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস। এতে অটোরিকশাচালক তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তুষার (২৯) এবং দুই বছরের শিশু মেহেরিমা নূরের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন অন্তত ১৬ জন। শিশু মেহেরিমা মা-বাবার সঙ্গে তৌহিদুল ইসলামের অটোরিকশার যাত্রী ছিল।

মেয়ের নিথর দেহ নিয়ে বাবা সাজ্জাদুন নূরের আহাজারির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এই দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই দুর্ঘটনায় সাজ্জাদুন নূরের স্ত্রী জুবাইরা ইসরাও আহত হয়েছেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীতে যাচ্ছিলেন সাজ্জাদুন।

আরও পড়ুন‘আমার মেয়েটা কী দোষ করেছে’, মেয়ের রক্তাক্ত দেহ নিয়ে বাবার আহাজারি০৫ জুন ২০২৫

রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান আজ প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন। কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনার জন্য কারা দায়ী, কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন সুপারিশ দিয়েছেন। এই প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। তবে তিনি প্রতিবেদনের বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি।

রেলওয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই দুর্ঘটনার জন্য ট্রেনচালক ও সহকারী ট্রেনচালকের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা সেতুতে ওঠার আগে ডেড-স্টপ রয়েছে। প্রথমে ট্রেন ওখানে এসে দাঁড়ানোর কথা। সেখানে নির্ধারিত বইয়ে সই করবেন। এরপর সংকেত মেনে সেতুতে উঠবেন। তখন ট্রেনের গতি থাকবে ১০ কিলোমিটার। কালুরঘাট সেতুর দুই প্রান্তেই ডেড-স্টপ রয়েছে। কিন্তু ট্রেনচালক ডেড-স্টপে এসে দাঁড়াননি। গেটকিপারের সংকেতও উপেক্ষা করেছেন। উল্টো ট্রেন চালিয়েছেন ২৬ থেকে ২৭ কিলোমিটার গতিতে। ট্রেনচালক যদি গেটকিপারের সংকেত দেখে ডেড-স্টপে থামতেন; তাহলে ওই সময়ের মধ্যে সেতুতে চলাচলরত গাড়িগুলো সহজে পার হতে পারত। এতে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে এখনো পড়ে আছে দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই দ র ঘটন দ র ঘটন র ড ড স টপ র লওয় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন।

এছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেয়।

সূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ