প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করা হোক
Published: 20th, June 2025 GMT
দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এর জন্য সেখানকার মানুষের অসচেতনতার কথা বলা হলেও মূল দায় স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষেরই। জনগণকে সচেতন করার দায়িত্ব তারা এড়াতে পারে না।
প্রথম আলোর সরেজমিন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যে কত কঠিন, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। ডেঙ্গু রোগীর রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের পরিমাপ করে দেখতে হয়। কিন্তু বরগুনার এই প্রধান হাসপাতালের এত রোগীর পরীক্ষা করার সামর্থ্য নেই। এ জন্য রোগীদের যেতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
চলতি বছরের শুরুতে কীটতত্ত্ববিদেরা বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন গুরুত্ব না দেওয়ায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া সব স্থানীয় সরকার সংস্থা ভেঙে দিয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো চলছে প্রশাসক দিয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসকেরা নিজ পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এটা করছেন। এ অবস্থায় রুটিন কাজ করা গেলেও এ রকম ‘মহামারি’ রোধ করা সম্ভব নয়।
বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ মাটির মটকা ও প্লাস্টিকের তৈরি পাত্রে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা। এসব পাত্রে অতিমাত্রায় এডিস মশার লার্ভা তৈরি হলেও স্থানীয় মানুষের বিকল্প সুপেয় পানি নেই। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য নদীর পানি খাওয়া যাচ্ছে না। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে রাখা সুপেয় পানিতেও এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
চলতি বছরই এক জরিপে দেখা যায়, দেশের ডেঙ্গুর প্রধান বিস্তারস্থল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার চেয়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। বিশেষ করে বরগুনা অঞ্চলে ঘনত্ব অনেক বেশি। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। গত বছর বা তার আগের বছর এপ্রিল-জুন মাসে ডেঙ্গুর যে প্রকোপ ছিল, চলতি বছর তার দ্বিগুণ হয়েছে। এর অন্যতম কারণ গ্রীষ্ম মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হওয়া।
প্রশ্ন হলো সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তথা সরকার কী করেছে? ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রথম কাজ হলো মশার লার্ভা যাতে জন্মাতে না পারে, সে জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। দ্বিতীয় কাজ হলো আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও বিধিনিষেধ মেনে চলা। চিকিৎসার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন। যেখানে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেই ডেঙ্গু রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না, সেখানে ঢাকার বাইরের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।
দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩০ জন।
অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী অভিযোগ করেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের যা করণীয় ছিল, সেটি করা হয়নি। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের মারা যাওয়ার কারণ পরীক্ষাও সম্ভব হচ্ছে না অর্থের অভাবে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর কারণ পরীক্ষার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতে যদি অর্থ না পাওয়া যায়, তাহলে স্বাস্থ্যসেবার অর্থ কোথায় যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন করার অধিকার নিশ্চয়ই দেশবাসীর আছে।
পূর্ববর্তী বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখনই জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুতি না নেওয়া হলে সামনে ভয়াবহ দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরগুনা, কক্সবাজারসহ সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে
১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।
এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।
আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।
এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪