ইরানিদের জীবনযুদ্ধ, যে যুদ্ধে সাইরেন বাজে না
Published: 21st, June 2025 GMT
‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।’ আর যাঁরা বেঁচে যান? তাঁদের কাছে যুদ্ধ মানে আতঙ্ক, মৃত্যু, ধ্বংস, আহাজারি, পঙ্গুত্ব, খাদ্যসংকট, বিভীষিকা—মানুষের তৈরি সবচেয়ে ভয়াল সম্মেলন। এ সবকিছুর সঙ্গে সামলে নিতে তাঁদের প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির সঙ্গে, নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয়। তার মানে রাজায় রাজায় যুদ্ধের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও একধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। যে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো সাইরেন বাজানো হয় না।
ঠিক তেমনি ইসরায়েল আগ্রাসন চালানোর পর থেকে ইরানে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষদের জীবনে নেমে এসেছে ভয় ও অনিশ্চয়তা। সংঘাত শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সাধারণ ইরানিদের বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট ও মুঠোফোন নেটওয়ার্ক বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, বাজার প্রায় বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে তেহরান ছাড়ছেন অনেকে। এ ছাড়া প্রতিদিন আরও নানা ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে ইরানিদের।
আরও পড়ুনতেহরান ছেড়ে যাচ্ছে ওরা, কোথায় তা জানা নেই১৯ জুন ২০২৫ধ্বংস ও হতাশা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে বলা হয়েছিল ‘আ ওয়ার টু এন্ড অল ওয়ারস’। কিন্তু সব যুদ্ধ শেষ করার জন্য এই যুদ্ধ হলেও ২০ বছর পেরোতে না পেরোতেই আবার যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ববাসী। তার মানে, যুদ্ধ চলতেই থাকবে। যাঁরা যুদ্ধে গেলেন, যাঁরা ঘরে অপেক্ষা করলেন—সবাই যুদ্ধের ভেতর আরেক ভয়ংকর যুদ্ধ করে চলেছেন। নেটফ্লিক্সে ‘পিকি ব্লাইন্ডার্স’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় তৈরি এই সিরিজে বার্মিংহাম শহরকে দেখানো হয়েছে। এই গল্পের নায়ক যুদ্ধ শেষের একজন সৈনিক। তিনি প্রতি রাতে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেন, যেন এখনো বাংকারে শুয়ে আছেন। তাঁর বন্ধুও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন। মাঝে মাঝেই এই বন্ধু হিংসাত্মক হয়ে যান। সে সময় সামনে যাকে পান, তাঁকেই মেরে ফেলতে চান।
বৃহস্পতিবার সিএনএনকে ঠিক একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ইরানের ২৭ বছর বয়সী এক সেনাসদস্য। সামরিক শৃঙ্খলার কারণে তেহরানে তিনি ফোন বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি বলেছেন, ‘মনে হয় যেন একটা ক্ষেপণাস্ত্র আমার পিছু নিয়েছে। আমি কারাজ যাই, ওরা সেখানে বোমা মারে। তেহরানে ফিরি, ওরা এখানেও আঘাত হানে।’
উত্তর-পূর্ব তুরস্কের রাজি-কাপিকোয় সীমান্ত পেরিয়ে অসংখ্য ইরানি তুরস্কে পৌঁছেছেন। ১৯ জুন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে
১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।
এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।
আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।
এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪