পন্টিং ও ফিঞ্চের চোখে রিশাদ কেন আলাদা?
Published: 21st, June 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় মৌসুমে বিগ ব্যাশে দল পেয়েছেন রিশাদ হোসেন। বিগ ব্যাগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হোবার্ট হারিকেনস এবারও ড্রাফট থেকে ২৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি স্পিনারকে দলে নিয়েছে। গত আসরে তাকে দলে নিয়েছিল হোবার্ট। কিন্তু নানা জটিলতায় সেবার তার খেলা হয়নি। এবার পুরো মৌসুম তাকে পাওয়া যাবে এমনটাই জানিয়েছে, বিগ ব্যাশ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশের এই স্পিনারকে এবার হোবার্ট নিজেদের ডাকেই ঘরে তুলেছে। গত বছর সাকিব আল হাসানের পর প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিগ ব্যাশে দল পান রিশাদ। তবে ড্রাফট থেকে সরাসরি সুযোগ পাওয়া তিনিই প্রথম।
রিশাদকে সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মনে ধরেছিল হোবার্টের। তখন থেকেই তাকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। দলটির মেন্টর রিকি পন্টিং চেয়েছিল রিশাদকে দলে নিতে। বিগ ব্যাশের অফিসিয়াল পোডকাস্টে সাবেক অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার অ্যারোন ফিঞ্চ সেই কথা বললেন, ‘‘রিকি পন্টিংও তার খুব প্রশংসা করেছে। ডানহাতি লেগ স্পিনার হিসেবে অন্য লেগ স্পিনাদের মধ্যে তাকে তারা বেছে নিয়েছে। আমার মনে হয় তৃতীয় বা চতুর্থ রাউন্ডেই (আসলে দ্বিতীয়) তারা তাকে তুলে নিয়েছিল। এটা একটা দারুন ব্যাপার। বল টস করতে ভয় পায় না। হোবার্ট হারিকেনসের একটা থিম আছে। তারা মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট চায়। রান নিয়ে তারা খুব বেশি চিন্তিত নয়।’’
আরো পড়ুন:
বিগ ব্যাশে আবারও দল পেলেন রিশাদ
রিশাদকে বিগ ব্যাশ-পিএসএল খেলার সুযোগ দিতে বললেন মালান
রিশাদের প্রশংসা করে ফিঞ্চ আরো বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশি একজন লেগ স্পিনার হিসেবে সে খুব ভালো করছে এবং ভালোমানের স্পিনারও সে। একেবারেই আলাদা। গত বছর সে খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। আমার মনে হয় হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে আধুনিক লেগ স্পিনারদের থেকে একেবারেই আলাদা সে। বল টস করে। যদি সে চাপের মধ্যে থাকে, তাহলে সে ধীরে চলে।’’
রশিদ খানের সঙ্গে তুলনা করে রিশাদের বোলিং বৈচিত্র্য নিয়ে আলাদা করে কথা বলেছেন ফিঞ্চ, ‘‘আমি তাকে এমন কারো সাথে তুলনা করি যাকে আমি বোলিং করতে দেখেছি এবং বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হয়েছি, সে বিগ ব্যাশেও খেলেছে। রশিদ খান, যিনি বাতাসে দ্রুত গতিতে বল করেন, সব সময় স্টাম্পে নির্ভুলভাবে বল করেন। এই ছেলেটা আলাদা। রিশাদ জানিয়েছে, সে টস করবে। সে তোমাকে আটকানোর চেষ্টা করবে এবং গতির বৈচিত্র্য ধরে রাখবে। সে খুব ভালো গুগলিও করতে পারে। ক্যারিবিয়ানে দুর্দান্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কেটেছিল তার।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘যদি কিনন চাঁই মাছর অভাব নাই’
টানা বৃষ্টিতে খাল-বিলে বাড়ছে পানি। নতুন পানিতে উজানে ছুটছে নানা প্রজাতির মিঠাপানির মাছ। বর্ষা মৌসুমে গ্রামে মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রির ধুম পড়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই বিক্রি হয় পটিয়ায়। দেশীয় পদ্ধতিতে বাঁশের শলাকা দিয়ে তৈরি হয় এই চাঁই। এটি তৈরিতে সহায়তা করেন গ্রামের মেয়েরাও। চাঁই দিয়ে চিংড়ি, পুঁটি, খৈলশা, দারকানা ও টেংরা, টাকিসহ ছোট মাছ শিকার করা হয়। বিভিন্ন ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরা গ্রামীণ ঐতিহ্য।
পটিয়া পৌর সদরের থানার হাটে শোনা যায় মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রেতার হাঁকডাক, ‘যদি কিনন চাঁই, মাছর অভাব নাই’ (যদি মাছ ধরার ফাঁদ ছাঁই কিনেন, তাহলে মাছের অভাব হবে না।’ দোকানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পলো, ছাঁই। হাটে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে মাছ ধরার নানা ফাঁদ। ক্রেতারা জানান, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বাড়ির পুকুর, আশপাশের জলাশয় পানিতে ডুবে গেছে। পুকুর-জলাশয়ের মাছ প্রবেশ করছে খাল-বিল, নদীতে। সেই মাছ ধরার জন্য বাঁশের তৈরি ফাঁদ বিক্রির ধুম পড়েছে। বছরের এ সময়ে এই চাঁই বেশি কেনাবেচা হয়।
কাশিয়াইশ ইউনিয়নের মাছ শিকারি খোরশেদ আলম বলেন, ‘বৃষ্টিতে এলাকার বিভিন্ন স্থানের ডোবা, নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে গেছে। এ সময় গ্রামের মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময় আমরা খাল-বিলে এক প্রকার ফাঁদ (চাঁই) দিয়ে মাছ ধরি। স্থানীয় হাটে এই ফাঁদ কিনতে পাওয়া যায়।
খরনা ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের ছাঁই কারিগর মোহাম্মদ জাফর জানান, তারা প্রথমে বাঁশ কেটে শলাকা তৈরি করেন। পরে সেগুলো হালকা রোদে শুকিয়ে নাইলনের সুতা দিয়ে বেঁধে চাঁই বা ফাঁদ তৈরি করেন। এ কাজে গৃহবধূরাও হাত লাগান। কচুয়াই ইউনিয়নের হাজমপাড়ার ফাঁদ তৈরির কারিগর আবদুস সালাম জানান, ‘একটি বাঁশের দাম ২৫০-৩০০ টাকা। একটি বাঁশে ৬-৭টা চাঁই তৈরি করা যায়। একটি তৈরি করতে ২ জনের ৩ দিন সময় লাগে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। প্রতিটি বড় চাঁই ৩৫০-৪০০ টাকা এবং ছোট চাঁই ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
একই এলাকার কারিগর আবদুর রহিম বলেন, ‘একটা বড় চাঁই তৈরিতে মজুরি লাগে ১৫০ টাকা, বিক্রি হয় ৩০০-৩৫০ টাকায়, লাভ থাকে ১৫০–২০০ টাকা। ছোট চাঁই তৈরিতে খরচ ১৮০ টাকা, বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়। কারিগররা বলেন, আমাদের মজুরি হিসাব করলে লাভ খুব বেশি লাভ হয় না। তবে এটা আমাদের পেশা, তাই পরিবারের বউ–মেয়েদের নিয়ে এটি তৈরি করা হয়।’
পৌর সদরের থানার হাটের মাছ ধরার ফাঁদ ছাঁই বিক্রেতা দিদারুল আলম বলেন, ‘আমাদের এই দোকান প্রায় ২০ বছরের পুরনো। আগে আমার বাবা করতেন। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই হাটে ছাঁই বিক্রি করি।’
পটিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে বলেন, ‘বর্ষায় নদী ও খাল–বিল পানিতে টইটুম্বর থাকে। সেই পানিতে দেশি মাছ ধরার জন্য সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। এসময় হাট-বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সরঞ্জাম কেনাবেচা হয়, চাঁই তেমনই একটি মাছ ধরার ফাঁদ। চাঁই বিক্রি করে কারিগররা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি যারা কিনছেন তারাও মাছ ধরে সংসার চালাতে বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় পঞ্চকবির গান