আগামী পাঁচ বছরে আইসিটি পণ্য রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে: ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব
Published: 21st, June 2025 GMT
দেশ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) পণ্যের রপ্তানি বেড়ে ৫ বিলিয়ন তথা ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া আমরা উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় তুলে ধরব। এর ফলে ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না।’
দেশে ষষ্ঠবারের মতো অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য তিনি এই মন্তব্য করেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সম্মেলনে রাজধানীর মিরপুরের সেনা প্রাঙ্গণে আজ শনিবার সকালে সম্মেলনটির আয়োজন করে।
সম্মেলনে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে প্রণোদনা, ‘পেমেন্ট গেটওয়ে সমস্যা নিরসন, অফিস সুবিধা—এই তিন চাহিদা অনুভব করে সরকার। ইতিমধ্যে আমরা গুগল পে চালু করতে সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়া পেমেন্ট গেটওয়ে ‘‘স্ট্রিপ’’–এর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। এ ছাড়া পে পালকে দেশের বাজারে আনতে আমাদের কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে এর জন্য বিডাসহ আমাদের অনেকগুলো টিম একসঙ্গে কাজ করছে।’
ঢাকায় একাধিক স্থানে সফটওয়্যার পার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন কামরাঙ্গীরচর ও মিরপুরের আশপাশে আমাদের বেশ কিছু জমি দেখিয়েছে। পাশাপাশি তেজগাঁওয়ে বিটিসিএলের পুরোনো জমি ও পূর্বাচলে হাইটেক সফটওয়্যার পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সফটওয়্যার পার্ক স্থাপিত হলে আপনাদের আমরা কম খরচে অফিস ভাড়া দিতে পারব।’
ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব আরও বলেন, দেশে এত দিন নানা ডিজিটাল উদ্যোগ থাকলেও সেগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ছিল না। একেকটি বিচ্ছিন্ন ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ ছিল। তাই ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ও এআই খাতকে অগ্রাধিকার দিতে প্রচলিত খাতগুলোতে প্রণোদনা কমিয়ে এবার এই খাতে প্রণোদনা বাড়ানো হতে পারে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) শিল্পের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের বিকাশে প্রয়োজন সমন্বিত নীতিমালা, আধুনিক অবকাঠামো ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যকর সমর্থন। গৃহায়ণ এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও স্মার্ট নগর-পরিকল্পনা, আইটি পার্ক ও অফিস অবকাঠামো উন্নয়নে প্রযুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ‘‘নাগরিক সেবাকেন্দ্র’’ তৈরি করেছি। এই কার্যক্রমের আওতায় দেশব্যাপী এ ধরনের সেবাকেন্দ্র চালু করা হবে। যেখানে “ওয়ান স্টপ সার্ভিস” পাওয়া যাবে। এগুলো সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে। সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসকে (আইটিএস) বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
বিপিও সম্মেলনে বিশেষ অতিথি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাঈদ বলেন, সরকার শুধু এই খাতে সহায়তাকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এই সামিট আয়োজনে যদি সামনের দিনগুলোতে সফলতা আসে, সেটি খাতসংশ্লিষ্ট অংশীদারদের প্রাপ্য। আর কোনো ব্যর্থতা হলে সেটি সরকারের দায়। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকারের দায়িত্ব শুধু জনগণের উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
আবু সাঈদ আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাজারের আকার ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন (আড়াই লাখ কোটি) ডলার, যা প্রতিবছর ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এটি ২০৩৩ সালে বেড়ে ১৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়নে উঠবে। এই বাজারের আমরা কতটুকু ধরতে পারব? আমাদের সক্ষমতাই বা কতটুকু? সেটাই এখন আমাদের ভাবনার বিষয়।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন, ‘এই বিপিও সামিট কেবল একটি ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলন নয়। এই আয়োজন দেশের তরুণদের প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
দুই দিনের এই সম্মেলনে ৯টি সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। থাকছে চাকরি মেলা ও উদ্যোক্তা বিষয়ে বিশেষ অধিবেশন। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি ও বিপিও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পণ্য ও সেবা প্রদর্শনী রয়েছে।
এ ছাড়া আসা দর্শনার্থীরা সরাসরি স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের পরিষেবা ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। সম্মেলনে জুলাই অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নির্মিত এআর (অগমেন্টেড রিয়েলিটি) ও ভিআর (ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি) অভিজ্ঞতা নেওয়া আলাদা স্টল রয়েছে। এর পাশাপাশি ড্রোন, সাবমেরিন প্রযুক্তি ও রোবট প্রদর্শনী রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আউটস র স আম দ র অন ষ ঠ সরক র আইস ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় বিপিও সামিট শুরু
দেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের সম্মেলন ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ-২০২৫’ শুরু হয়েছে আজ শনিবার। রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণ ভেন্যুতে আজ ও আগামীকাল দুই দিন ধরে চলবে এই সম্মেলন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করেছে।
আজ সকালে মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। ‘বিপিও ২.০: রেভল্যুশন টু ইনোভেশন’ প্রতিপাদ্যে এবারের সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের মহাপরিচালক মো. আবু সাঈদ, বাক্কোর সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম ও বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘কৃষি আর শিল্প খাতে আমাদের অর্থনীতি আর আটকে নেই। ডিজিটাল খাতে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প খাত ও অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে। প্রযুক্তিখাতনির্ভর বিশাল একটি মানবসম্পদ ক্ষেত্র বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে, আমাদের সরকার সে বিষয়ে কাজ করছে। আমরা স্মার্ট নগর পরিকল্পনা, আইটি পার্ক স্থাপনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করছি। বিপিও সামিটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির জন্য আমরা নতুন কী করতে পারি, তার অনেক কৌশল সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।’
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা এখন একটি রূপান্তরমূলক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কোভিড–পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আমাদের দেশে প্রযুক্তি খাতকে সেই পরিবর্তনকে মানিয়ে দ্রুত এগোতে হবে। এখনকার নয়া বাস্তবতা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানা প্রযুক্তি। বিপিওসহ প্রযুক্তি খাত–সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান যদি এআইকে গ্রহণ না করে, তাহলে নতুন চ্যালঞ্জে তৈরি হবে। সরকার ও সমাজের ডিজিটাল রূপান্তরের বিকল্প নেই। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের প্রযুক্তি খাতে আরও কর্মসংস্থান হবে। দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
বাক্কো সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন, এখনকার প্রযুক্তি দুনিয়া বেশ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সেই পরিবর্তন মাথায় রেখে বিপিও খাতে কর্মসংস্থান গড়ার সুযোগ বাড়ছে। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এবারের সম্মেলনে ৩০টি দেশি ও আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বা বিপিও প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করছে সামিটে। সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে দেশ–বিদেশের প্রযুক্তি–বিশ্লেষক, বিপিও–বিশেষজ্ঞ, দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ও আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞরা দুই দিনের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে তরুণদের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রদর্শন করা হচ্ছে। এক্সপেরিয়েন্স জোনে অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, ড্রোন, সাবমেরিন, রোবটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই সম্মেলনে বিশেষ একটি চাকরির মেলা আয়োজন করা হয়েছে। আগ্রহী তরুণদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
সম্মেলনে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) ও টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।