চট্টগ্রামে আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস। ঈদুল আজহার পর হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে দু’জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু শহর-গ্রামে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি কম। অনেক হাসপাতালে কিটের অভাবে হচ্ছে না পরীক্ষা। এ নিয়ে প্রিয় চট্টগ্রামের বিশেষ আয়োজন
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) কয়েকটি শয্যা নড়বড়ে হওয়ায় রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। মরিচা পড়ে যায় শয্যার লৌহদণ্ডে। কোনোটির স্ক্রু ছিল ভাঙা, অনেক শয্যার চাকা থেকে বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিই ছিল নষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে ছিল আইসিইউর গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম বাইপ্যাপ মেশিন, হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা, ইনফিউশন পাম্প, কার্ডিয়াক মনিটর, সিরিঞ্জ পাম্প। এখনও শয্যার সঙ্গে নেই ভেন্টিলেটর।
অযত্ন-অবহেলায় করোনা চিকিৎসার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৮ আইসিইউ শয্যার অবস্থা নাজুক। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য শয্যা ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সচলের চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। এটা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় করোনা পরীক্ষা ও যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। করোনা ইউনিটে ২২ জন চিকিৎসকের পদও এখন খালি।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে সরকারিভাবে হাসপাতালটিতে করোনা পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও সেটা হয়নি। এখন পরীক্ষা হলেও রয়েছে কিট ও জনবল সংকট।
আবার বন্দরনগর চট্টগ্রামে চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস (কভিড)। হঠাৎ করেই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে দু’জনের মৃত্যুতে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য প্রশাসন। তবে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি করোনা রোগীদের চিকিৎসা। চট্টগ্রামে আসেনি চাহিদামতো কিট। বর্তমানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও করোনা ডেডিকেটেড জেনারেল হাসপাতালে অনেক রোগী করোনা পরীক্ষা করাতে এলেও কিট সংকটের কারণে তারা ফিরে যাচ্ছেন। জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত কিট না থাকায় কয়েকদিন আগে চমেক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৫০টি কিট এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালটি করোনা রোগীদের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ বলা হলেও এটি এখনও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। কয়েকদিন আগে চমেক হাসপাতাল থেকে একটি ভেন্টিলেটর ধার করে এনেছে হাসপাতালটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক, কিটের চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল ১৮ আইসিইউ শয্যা। অনেক চিকিৎসা যন্ত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ যন্ত্রই সচল অবস্থায় নেই। করোনা ইউনিটের জন্য যে ২২ জন চিকিৎসককে এই হাসপাতালে সংযুক্তিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারাও অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। এখন ‘শূন্য’ চিকিৎসকদের সেই পদগুলো। তাই করোনা ডেডিকেটেড এই হাসপাতালটি পুরোপুরি চালু করতে আইসিইউ বিভাগের জন্য বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি নতুন প্রয়োজন হবে। নিয়োগ দিতে হবে চিকিৎসকও, যা সময়সাপেক্ষ।
এমন নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালটি পুরোপুরি প্রস্তুত করা চ্যালেঞ্জের মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় নষ্ট যন্ত্রপাতি সচল করে আপাতত পাঁচ থেকে ছয়টি আইসিইউ শয্যা চালু করতে চায় স্বাস্থ্য প্রশাসন। এজন্য কয়েকদিন ধরে তোড়জোড়ও শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালের দিকে করোনা মহামারির শুরুতে চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যার অভাবে বেশির ভাগ রোগী জরুরি মুহূর্তে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় তখন জেনারেল হাসপাতালে বিশেষায়িত করোনা চিকিৎসার জন্য ১০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়। পরে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮ করা হয়। ২০২০ সালে করোনা ইউনিটের জন্য ২২ জন চিকিৎসক সংযুক্তিতে দেওয়া হলেও গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাদের একসঙ্গে বদলি করা হয়। এরপর থেকে সেখানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
করোনা রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র সদর এই হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে এখন করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। সাধারণ রোগীদের জন্য থাকা আইসিইউ শয্যায় চিকিৎসা পাবেন করোনা রোগীরাও।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। করোনা রোগীদের আইসিইউর প্রয়োজন হলে সেটিরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এরইমধ্যে কিছু এসেছে, আরও আসবে বলে জানানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে কয়েকজনকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে একটি টিম এসেছে। তারা আইসিইউ বিভাগের নষ্ট-অচল যন্ত্রপাতিগুলো মেরামত করে ঠিক করার চেষ্টা করছেন। এরইমধ্যে ৫ থেকে ৬টি অনেকটা সচল হয়েছে। সংযুক্তিতে পাঁচজন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, চিকিৎসকসহ যাবতীয় বিষয়ে আমি প্রতিনিয়ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করছি আগামীতে আরও কিছু যন্ত্রপাতি এসে পৌঁছাবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ন জন চ ক ৎসক প রস ত ত পর ক ষ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর অন্তঃসত্ত্বা মায়ের আত্মহত্যার অভিযোগ
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় একটি ঘর থেকে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একই বাড়ির অন্য একটি কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে শিশুটির অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ। মর্মান্তিক এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ এটিকে হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যা বলে ধারণা করলেও, ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত হয়নি।
গত শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্বকান্দি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন হুজাইফা (৫) এবং তার মা সুমাইয়া আক্তার (২২)। সুমাইয়া অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর তার সিজারিয়ান ডেলিভারির তারিখ নির্ধারিত ছিল।
নিহত সুমাইয়ার শ্বশুর মোতালেব মুন্সি গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সময় তিনি বাড়ির কাছেই ঘাস কাটতে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ বাড়িতে চিৎকার শুনে ছুটে এসে তিনি এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন। পরে পুলিশকে জানানো হয়।
তিনি দাবি করেন, তার ছেলে রমজান মুন্সি এবং পুত্রবধূ সুমাইয়ার মধ্যে সম্পর্ক ভালোই ছিল এবং তাদের মধ্যে কোনো পারিবারিক কলহ ছিল বলে তার জানা নেই।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশী ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, দাম্পত্য জীবনে রমজান ও সুমাইয়ার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। রমজান মুন্সি কয়েক বছর সিঙ্গাপুরে প্রবাসে থাকার পর দুই বছর আগে দেশে ফিরে আসেন এবং বর্তমানে আবার বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ঘটনার খবর পেয়ে ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে কোনো পারিবারিক কলহের জেরে সুমাইয়া তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করে এবং এরপর নিজে আত্মহত্যা করেন।”
তিনি জানান, শিশুটিকে গলাকাটা অবস্থায় একটি কম্বলে মোড়ানো রাখা হয়েছিল। তার মাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় জানান, মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। স্বামী রমজান বর্তমানে ফরিদপুরে রয়েছেন, তবে তার সঙ্গে এখনও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ওসি বলেন, “তদন্ত শেষ হলে এই ঘটনার পেছনের আসল কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।”
ঢাকা/তামিম/এস