ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ–পশ্চিমের পাপুয়া প্রদেশের ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ রাজা আম্পাত নামে আলোচিত। একে প্রায়ই সমুদ্রের অ্যামাজন বলা হয়। এখানকার জীববৈচিত্র্য বেশ সমৃদ্ধ। বিশ্বের সমৃদ্ধিশালী সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোর একটি এটি। সাম্প্রতিক সময়ে এখনকার সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য হুমকি তৈরি হয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি ও স্টেইনলেস স্টিলের একটি অপরিহার্য উপাদান নিকেল। এই খনিজ উত্তোলনের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে বলে সমুদ্রের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।

রাজা আম্পাতের কাওয়েই দ্বীপে খনিজ উত্তোলনের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। দ্বীপের মূল অংশে বনভূমি পরিষ্কার করে বাদামি মাটি দেখা যায়। খনিজ উত্তোলনে যানবাহনের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল বিশাল ময়লা রাস্তা। খনির পানি জমে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন পুকুর। পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের দাবির মুখে ইন্দোনেশীয় সরকার সম্প্রতি এই অঞ্চলে পরিচালিত পাঁচটি খনিজ উত্তোলনকারী সংস্থার মধ্যে চারটির অনুমতি বাতিল করেছে। ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজা আম্পাতের জীববৈচিত্র্য একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। এটিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

গ্লোবাল উইটনেস নামের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা সামগ্রিকভাবে পুরো এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে ভয়ানক আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, অনেক বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিপুল পরিমাণ পলি সাগরের পানিতে মিশে যাচ্ছে। এই পলি এখানকার প্রবালপ্রাচীরের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এই দ্বীপপুঞ্জের একাধিক ছোট দ্বীপে খনিজ উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত মাটি ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫০০ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রায় ৭০০টি ফুটবল মাঠের সমান।

এখনো নিকেলের সমৃদ্ধ ভান্ডার থাকা গ্যাগ দ্বীপে খনি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। প্রবালপ্রাচীর সংরক্ষণবিদ ও পরিবেশবিদ মার্ক এর্ডম্যান বলেন, ‘খনিজ উত্তোলনের অনুমতি বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তে আমি বিস্মিত ও অত্যন্ত খুশি। এই এলাকা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের বৈশ্বিক কেন্দ্রের একটি। ইন্দোনেশিয়ার জনগণের ক্ষোভের কারণে সরকার খনির অনুমতি বাতিল করেছে।’

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী নিকেল খনিজ উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি এখন ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে। রাজা আম্পাত এলাকা নিকেলের অন্যতম উৎস। ফরেস্ট ওয়াচ ইন্দোনেশিয়ার গবেষণায় দেখা যায়, খনিজ উত্তোলনের কারণে বনভূমি ধ্বংস হয়েছে অনেক। এতে স্থানীয় বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খনিজ উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট দূষণের মধ্যে পলিমাটি অন্যতম। এই পলি সাগরে মিশে গিয়ে সামুদ্রিক জীবনের ক্ষতি করছে। আগের নীল সমুদ্রের পানি এখন বাদামি ও ঘোলা হয়ে গেছে।

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসিতে অনেক বড় আকারে খনিজ উত্তোলন করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার এই বৃহৎ দ্বীপটিতে দেশের বেশির ভাগ নিকেলের ভান্ডার রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, খনিজ উত্তোলন কার্যক্রমের কারণে দারিদ্র্য কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে পরিবেশগত অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বব্যাপী নিকেলের বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করলেও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।

জাকার্তার জতাম নামের পরিবেশ আন্দোলন সংস্থার কর্মী ইমাম শোফওয়ান বলেন, নিকেল জলবায়ু সংকটের সমাধান হলেও এর কারণে বন উজাড় হচ্ছে। কৃষিজমি ধ্বংস করছে।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ বব চ ত র য ইন দ ন শ য র পর ব শ আম প ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গায়েবি মামলার সংস্কৃতি ব্যবসায় পরিবেশকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলেছে: হোসেন জিল্লুর রহমান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, গায়েবি মামলার সংস্কৃতি দেশের পুরো ব্যবসায় পরিমণ্ডলকে একধরনের গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। এতে একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এটার পরিবর্তন আনার জন্য অর্থ উপদেষ্টা বাজেটে কিছুই রাখেননি।

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বাজেট নিয়ে সংলাপে এ কথা বলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। বাজেট নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পরশু চট্টগ্রাম থেকে একজন জানালেন, তাঁর নামে আরেকটা মামলা হয়েছে…হত্যা মামলা। ১১০ জন আসামি, উনি ৯৫ নম্বর। এভাবে গায়েবি মামলা হওয়ায় কে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য, সেটি আলাদা করতে পারছি না। আমরা একটা ‘ব্ল্যাঙ্কেট সাসপিশন’র (সামগ্রিক সন্দেহ/একজনের অপরাধে সবাইকে সন্দেহ) পর্দা পুরো সমাজের ওপর ঢেলে রেখেছি। এ অবস্থায় সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকা ও ভুক্তভোগী হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় নয়, পুরো সরকারব্যবস্থাকেই কাজ করতে হবে বলে জানান হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিচার বিভাগসহ প্রতিটি মন্ত্রণালয় যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে হবে না।

হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের রেগে যাওয়ার সময় হয়েছে। এটি অযৌক্তিক রাগ নয়। আমি এটাকে বলব পবিত্র রাগ। যে রাগের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করতে হয়। এখন ওই রেগে যাওয়ার মুহূর্ত হয়েছে। কারণ এই সরকারের মধ্যে একটা “পিকুলিয়ার সিনড্রোম” (উদ্ভট লক্ষণ) দেখতে পাচ্ছি। আমি বলব, একটি নতুন ধরনের কুম্ভকর্ণ “সিনড্রোম”, শোনে কিন্তু সাড়া দেয় না।’

বাজেটে বড় কোনো সিদ্ধান্তের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, অনেকে বলছেন বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। তারপরও কেন গতানুগতিক বাজেট হলো। আমি মনে করি উপদেষ্টা পরিষদের সবাই অর্থনীতিবিদ হলেও ব্যতিক্রম কিছু হতো না। কারণ বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে যে সাহস দেখাতে হয়, সেটির জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা, তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এনামুল হক খান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ ও বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সোশ্যালিস্ট লেবার ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, শুধু আকারে ছোট হয়েছে, এদিক থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি ব্যতিক্রম। বাজেটে মানুষের জন্য যেসব উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপের আলোচনা নেই। সার্বিকভাবে বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা দিতেও বাজেট ব্যর্থ হয়েছে। এসব বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটটি আগামী ছয় মাস পরে মধ্যবর্তী পর্যালোচনা করার প্রস্তাব দেন তিনি।

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, ‘আমরা অনেক অস্বস্তিকর সময় পার করছি। বর্তমানে আমরা দেখছি খুব সুন্দর সুন্দর মডেল তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে একটা মডেল হচ্ছে, কেউ লুট করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই লুটের টাকা আবার ব্যাংকে পৌঁছে দিয়ে আসে। ব্যাংকগুলো লুট করেছে, আর আমরা তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি চড়া সুদহার দিয়ে। আমার থেকে আপনি (সরকার) বাড়তি টাকা নিয়ে এই চুরির টাকার ভর্তুকি দেবেন, এটা হয় না।’ তিনি বেলন, ‘এখন পর্যন্ত একটা ব্যাংকের কর্মকর্তার জেল হয়নি, একজন গ্রাহকেরও (দোষী) জেল হয়নি। কারণ, যার কাছে টাকা, যে যত বড় চোর, সে তত বড় স্বচ্ছ—এটাই আমরা প্রতিফলন দেখছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ