রংপুর মহানগরের হাজীরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আল মামুন শাহকে বদলি করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার নিয়ে বিতর্কের মুখে গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে বদলি করা হয়।

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আবদুল আল মামুন শাহ রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাঁকে রংপুর মহানগর পুলিশের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজীরহাট থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনজুলাই অভ্যুত্থানে প্রতিবাদী শিক্ষক কেন কারাগারে, প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের১৪ ঘণ্টা আগে

এ বিষয়ে কথা বলতে আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনারকে কল করলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। এ কারণে এই বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আবদুল আল মামুন শাহ তাঁর বদলির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মাহমুদুল হককে রংপুর নগরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে হাজীরহাট থানা-পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে এ বছরের ৩ জুন রংপুর নগরের হাজীরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের স্ত্রী মাসুবা হাসানের অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, ‘যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি (ছমেস উদ্দিন) হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে হাজিরহাট থানার ওসি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে ইচ্ছামতো আসামি করেছেন। আমার স্বামীকে মূলত পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এর পেছনে আছেন দুজন—একজন চিকিৎসক, অন্যজন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আমি তাঁদের নাম এখন বলব না। এর আগেও ওই দুজন আমার স্বামীকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।’

আরও পড়ুন‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে২০ জুন ২০২৫

আজ মাহমুদুল হকের জামিন শুনানির কথা আছে। মাহমুদুল হকের আইনজীবী শামীম আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ (হাজীরহাট আমলি আদালত) এ মাহমুদুল হকের জামিন আবেদন করা হয়েছে। দুপুরে জামিন শুনানি হতে পারে। একটি মিথ্যা ও প্রহসনমূলক মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পরিকল্পিতভাবে তাঁর পেশা, সম্মান ও অবস্থানকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে। তাঁরা এটা আদালতকে বলবেন।

এদিকে শিক্ষকের জামিন শুনানির কথা শুনে রংপুর আদালত চত্বরে সকাল ১০টা থেকে জড়ো হচ্ছেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা শিক্ষক মাহমুদুল হকের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত ও সসম্মানে মুক্তির দাবিতে তাঁরা আদালত চত্বরে এসেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ রহ ট থ ন আল ম ম ন নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে

চট্টগ্রাম নগরে থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র-গুলি ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচায় পুলিশেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সে সময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ অস্ত্র-গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। তবে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

গত ২১ জুলাই নগরের চান্দগাঁওয়ে ‘সন্ত্রাসী’ ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পো ও শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইসার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে পুলিশ বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকায় সন্ত্রাসী শহিদুলের আস্তানার সন্ধান পায়। সেখানে লুট হওয়া দুটি গুলি ও গুলির খোসা পাওয়া যায়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুলের দখল করা একটি ফ্ল্যাট থেকে গুলি ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ফ্ল্যাটটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ-হাটহাজারী থানার সীমানাসংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সার ও মো. আনিস নামে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গুলির খোসা (শটগানের কার্তুজ) উদ্ধার করা হয়। সেগুলোও লুট করা গুলির খোসা বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

নিহত আনিসের স্ত্রী শামিম আকতারের অভিযোগ, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ পুলিশের গুলি ব্যবহার করে তাঁর স্বামীসহ দুজনকে খুন করেছেন। তবে সাজ্জাদ কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ৩ মার্চ সাতকানিয়ায় পিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যে পিস্তল উদ্ধার করে, সেটিও থানা থেকে লুট হওয়া।

১৭ এপ্রিল নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর আস্তানা থেকে একটি পিস্তল ও ৫০টি গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ স্বীকার করেন, এসব অস্ত্র-গুলি থানা থেকে লুট করা। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করেন।

গত ২৫ জানুয়ারি ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬টি গুলি, ১টি রাবার বুলেটসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী এলাকার চারিয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, এসব অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গুলি লুট হওয়া এবং গ্রেপ্তার ছয়জনই ছিনতাইকারী।

১৭ জুন নগরের মেরিন সড়ক থেকে পিস্তল-গুলিহ মো. রুবেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিস্তলটি থানা থেকে লুট হওয়া বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এদিকে পিস্তলটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২১ মার্চ মো. রিয়াদ নামের পুলিশের এক কনস্টেবলসহ ছয়জনকে পতেঙ্গা ও বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রিয়াদসহ তিনজন আদালতে অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র, গুলি উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা না করলে কিংবা মনোযোগ না দিলে জননিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ