চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চান মিয়া (২২) নামের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাঁঝরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত চান মিয়া ঝাঁঝরী গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। স্ত্রী, ১৪ মাস বয়সী ছেলে, বৃদ্ধ বাবা-মা এবং এক ভাইকে নিয়ে তাঁর পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কাছ থেকে ৩০ বিঘা আয়তনের পুকুরটি বন্দোবস্ত নিয়ে মাছ চাষ করছেন ঝাঁঝরী গ্রামের আব্বাস আলী। পুকুরের মাছ রক্ষায় তিনি চারপাশে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন। ওই ফাঁদে শিয়াল, কুকুরসহ নানা বন্য প্রাণী প্রায়ই মারা পড়ে।

নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই আবদুর রহমান বলেন, সকাল আটটার দিকে চান মিয়া গরুর জন্য ঘাস কাটতে মাঠে যান। পাশেই আব্বাস আলীর পুকুরে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছিল। চান মিয়া পুকুরের পাশের তার সরিয়ে পানি খাওয়ার জন্য শ্যালোমেশিনের কাছে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোহন আলী নামের এক কৃষক মাঠে গেলে চান মিয়ার লাশ দেখতে পান। তিনি নিহত চান মিয়ার স্বজনসহ গ্রামবাসীকে খবর দেন। পরে বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ করে লাশ উদ্ধার করা হয়।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, আব্বাস আলী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার মদদে মাদক ব্যবসায় জড়িত। তিনি পুকুরপাড়ে দোকান খুলে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করেন এবং আখড়ায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসান। চান মিয়ার মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ওই দোকান ও আখড়ায় আগুন দেন এবং তাঁর বাড়িতেও হামলা চালান। এ বিষয়ে আব্বাস আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।

‘মানবতার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা’র সভাপতি আহসান হাবীব বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এমন বৈদ্যুতিক ফাঁদ সম্পূর্ণ বেআইনি। বারবার বলার পরও আব্বাস আলী তা সরাননি। এমন মরণফাঁদে চান মিয়ার মতো নিরীহ মানুষ প্রাণ হারালেন।

দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক–সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ পেয়েছি, যাচাই না করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক, আন্দোলনরত ‘তথ্য আপা’দের কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান

টানা ৭২ দিন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় আন্দোলনের পর মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে একটি প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়। এ সময় উপদেষ্টা আন্দোলনরতদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

ঝালকাঠি সদরের তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও আন্দোলন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সংগীতা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে তথ্য আপা প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তাঁদের কাজে ফিরে যেতে বলেছেন উপদেষ্টা।

অবশ্য উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘এই সরকার কোনো প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করছে না। তাই এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তাঁদের জন্য বিকল্প কী প্রস্তাব নেওয়া যায়, সেটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। সেই বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে তাঁদের জানিয়েছি।’

২০১১ সালে পাইলট আকারে ১৩টি উপজেলায় তথ্য আপা প্রকল্প শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৪৯২টি উপজেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়। গত বছর আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন করা হয়।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’র বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের পুরো নাম ছিল ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘তথ্য আপা: তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ