পুকুর ঘিরে অবৈধ বৈদ্যুতিক ফাঁদ, পানি পান করতে গিয়ে প্রাণ গেল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর
Published: 22nd, June 2025 GMT
চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় বৈদ্যুতিক তারের ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চান মিয়া (২২) নামের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাঁঝরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত চান মিয়া ঝাঁঝরী গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। স্ত্রী, ১৪ মাস বয়সী ছেলে, বৃদ্ধ বাবা-মা এবং এক ভাইকে নিয়ে তাঁর পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের কাছ থেকে ৩০ বিঘা আয়তনের পুকুরটি বন্দোবস্ত নিয়ে মাছ চাষ করছেন ঝাঁঝরী গ্রামের আব্বাস আলী। পুকুরের মাছ রক্ষায় তিনি চারপাশে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করেছেন। ওই ফাঁদে শিয়াল, কুকুরসহ নানা বন্য প্রাণী প্রায়ই মারা পড়ে।
নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই আবদুর রহমান বলেন, সকাল আটটার দিকে চান মিয়া গরুর জন্য ঘাস কাটতে মাঠে যান। পাশেই আব্বাস আলীর পুকুরে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছিল। চান মিয়া পুকুরের পাশের তার সরিয়ে পানি খাওয়ার জন্য শ্যালোমেশিনের কাছে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সকাল সাড়ে আটটার দিকে মোহন আলী নামের এক কৃষক মাঠে গেলে চান মিয়ার লাশ দেখতে পান। তিনি নিহত চান মিয়ার স্বজনসহ গ্রামবাসীকে খবর দেন। পরে বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ করে লাশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, আব্বাস আলী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার মদদে মাদক ব্যবসায় জড়িত। তিনি পুকুরপাড়ে দোকান খুলে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করেন এবং আখড়ায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসান। চান মিয়ার মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ওই দোকান ও আখড়ায় আগুন দেন এবং তাঁর বাড়িতেও হামলা চালান। এ বিষয়ে আব্বাস আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।
‘মানবতার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা’র সভাপতি আহসান হাবীব বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এমন বৈদ্যুতিক ফাঁদ সম্পূর্ণ বেআইনি। বারবার বলার পরও আব্বাস আলী তা সরাননি। এমন মরণফাঁদে চান মিয়ার মতো নিরীহ মানুষ প্রাণ হারালেন।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদ তিতুমীর বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক–সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ পেয়েছি, যাচাই না করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাঁচানো গেল না আহত নবজাতককে
পৃথিবীর আলোতে আসার এক দিনের মাথায়ই মারা গেছে সেই নবজাতক। বরগুনার আমতলীতে শনিবার দুপুরের দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিল সে। ওই দুর্ঘটনায় তার মা মোসাদ্দিকা বেগম, নানা আব্দুল আজিজ খান ও দাদি খালেদা বেগম মারা যান। শনিবার রাত ৯টার দিকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এ নবজাতক।
আব্দুল আজিজ খান আমতলীর মধ্য সোনাখালী গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে তাঁর মেয়ে মোসাদ্দিকা তৃতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ায় নবজাতককে পটুয়াখালী নেওয়ার পরামর্শ দেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। শনিবার দুপুর ২টার দিকে তাদের বহনকারী অটোরিকশাটি কেওয়াবুনিয়া হাই স্কুলের উত্তর পাশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। পেছন থেকে ঢাকাগামী ইকরা লাক্সারি লিমিটেডের বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৮৯৫৩) ধাক্কায় সেটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই আজিজ খান ও খালেদা বেগম প্রাণ হারান। হাসপাতালে মারা যান মোসাদ্দিকা।
গুরুতর আহত হন মোসাদ্দিকার স্বামী মো. জাহিদুল ইসলাম, তাঁর নবজাতক মেয়ে ও অটোরিকশাচালক মো. আব্দুল হক। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের। সেখানেই নবজাতক মারা যায়। ওই হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মো. ওয়াহিদ শামীমের ভাষ্য, শিশুটি দুর্ঘটনায় মাথা-মুখসহ শরীরের নানা স্থানে আঘাত পায়। দীর্ঘ সময় পানিতে পড়ে থাকায় শরীরের তাপমাত্রাও কমে গিয়েছিল। আইসিইউতে রাখা হলেও বাঁচানো যায়নি শিশুটিকে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন।
ঝরল আরও সাতজনের প্রাণ
রোববার গোপালগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে তিনজনের। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার টুকুবাজারে প্রাণ যায় সরোয়ার খাঁ (৯০) নামের এক ব্যক্তির। শনিবার রাত ১২টার পর একই মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে দুটি দুর্ঘটনায় নিহত হন বিপুল কুমার পাল (৫২) ও শাওন শেখ (১৮)।
এদিকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কনটেইনারবাহী লরির পেছনে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ গেছে ড্রাম ট্রাকের চালক ও সহকারীর। রোববার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠাকুরদিঘি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ট্রাকের চালক ফারুক হোসেন (৪০) ও সহকারী ররিউল ইসলাম (৩৫)।
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা একটি বাসে চারটি গাড়ি ধাক্কা খেলে প্রাণ যায় দু’জনের। তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের বাগুন্দা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. টিপু সুলতান জানান, যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো উদ্ধার করে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের একাধিক দল।