Samakal:
2025-08-07@08:17:20 GMT

শিক্ষকই তো তিনি আমার

Published: 22nd, June 2025 GMT

শিক্ষকই তো তিনি আমার

প্রথাগত অর্থে তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন না। আমাকে পড়াননি। শ্রেণিকক্ষে তাঁর বক্তৃতা শুনতে বসিনি। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি, সেই বিভাগেরই ছাত্র ছিলাম না আমি। তবু তিনি আমায় শিখিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে ধার করে নানান শব্দ শিখেছি; সাধারণ বাক্য ভেঙেচুরে নতুন করে বাক্য গঠন শিখেছি। লেখার কায়দাও অনেকটা রপ্ত করেছি তাঁর কাছ থেকে। বক্তৃতার শব্দচয়ন, স্বর-প্রক্ষেপণ, উপস্থাপন– সেটাও অনেকটা শেখা তাঁর কাছে। তাই সরাসরি না পড়ালেও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমার শিক্ষক, যিনি সিক (এসআইসি) নামে পরিচিত আমাদের প্রজন্ম এবং পরবর্তী বহু প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে। আজ ২৩ জুন, তাঁর ৯০তম জন্মতিথি। জন্মদিনের অন্তর্ময় শুভেচ্ছা। 

সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন তাঁকে খুব কাছে থেকে চেনা-জানার একাধিক সুযোগ তেমন হয়নি আমার। হ্যাঁ, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভায় গিয়েছি বটে আমি কখনও-সখনও, তাঁর লেখাও পড়েছি এখানে-সেখানে। কিন্তু তাঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বকে চেনা-জানার জন্য যে নৈকট্য প্রয়োজন, তা সত্তরের দশকে আমার ছিল না।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে আমার চেনা-জানার বলয় দৃঢ় হয় আশির দশকে, আমি উচ্চশিক্ষা সমাপন করে দেশে ফিরে এলে। একাধিক অঙ্গনে তখন আমাদের যৌথ পদচারণা– সভা-সমিতি, লেখালেখির জগৎ, রেডিও-টিভির বলয়, বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায়। দেখা হতো, কথা হতো, আলাপ-আলোচনা হতো কখনও দু’জনে, কখনও অনেকের সঙ্গে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকার সম্পাদক। প্রায়ই গবেষণামূলক নানা প্রবন্ধ নিয়ে তাঁর কাছে যেতাম। বিষয়বস্তু নিয়ে আলাপ করতেন আমার সঙ্গে। ছেপেছেন আমার একাধিক প্রবন্ধ; প্রশংসা করেছেন লেখার; পরামর্শও দিয়েছেন নানান সময়ে নানান বিষয়ে। পত্রপত্রিকায় লেখা বেরোলে উল্লেখ করেছেন সে লেখার দেখা হলেই। 

রেডিও-টেলিভিশনের নানান অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলাম দু’জনে। বাংলাদেশ বেতারে প্রভাতি অনুষ্ঠান ‘আজকের ঢাকায়’ এক সপ্তাহে তাঁর ধারাবাহিক কথিকা ‘কথার কথা’ যেত; অন্য সপ্তাহে আমার নিয়মিত কথিকা ‘যা না বললেই নয়’। বাংলাদেশ বেতারের স্বর্ণকণ্ঠ বালক কৌশিক আহমেদের উপস্থাপনায় আর প্রয়াত কবি আবু তাহেরের প্রযোজনায় হতো জননন্দিত সে অনুষ্ঠান। তাঁর কথিকা ধারণের জন্য অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে নিয়ম করে উপস্থিত হতেন। আমার কথিকা ধারণের জন্য অনুষ্ঠান সংগঠক মনোয়ারা আপাকে বাতি নিয়ে আমাকে খুঁজতে বেরোতে হতো। অনেক সময় এমনও হয়েছে, অনুষ্ঠানের সময়েই স্টুডিওতে কৌশিকের পাশে বসে আমি পড়ে দিয়েছি আমার কথিকা। প্রযুক্তির কুশীলব এবং উপস্থাপকের উদ্বেগে স্টুডিওর বাতাস তখন ঘন হয়ে আসত। 
টেলিভিশনে আমার উপস্থাপিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বেশ ক’বার এসেছেন। মনে আছে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলতম  ছাত্রদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করার সময়ে আমি জোর দিয়েছিলাম যারা ব্যর্থ হয়েছে, তাদের ওপরে। সে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আমার বক্তব্যের জোর সমর্থন করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বড় গভীর বিশ্লেষণ করেছিলেন সে সমস্যার। জননন্দিত সে অনুষ্ঠান শেষে নানান গুণীজনের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক বার্তা পেয়েছিলাম দূরালাপনীতে। 
মধ্য আশির দশকে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে একটি ঘটনার কথা মনে আছে। প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার কলাভবনের ২০২৮-এ আমার ক্লাস থাকত; মঙ্গলবার আমার পরেই ওখানে ক্লাস নিতেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বৃহস্পতিবার প্রয়াত আশফাক মুনীর (মিশুকের পোশাকি নাম)।

মঙ্গলবার আমি সতর্ক থাকি। ঘণ্টা বাজলেই ক্লাস ছেড়ে দিই, স্যারকে যেন দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। অনেক সময় স্যার এসে গেছেন জানলে শিক্ষার্থীরাও আমাকে চোখ দিয়ে জানান দেয়। আমি মুখের বাক্য অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসি। একদিন স্যার আমাকে বললেন, ‘এত তাড়াহুড়ো কর কেন? পড়ানোটা শেষ করেই বার হও।’ ‘আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন!’ আমি নম্রস্বরে বলি। ‘তাতে কী? আমি তোমার বক্তৃতা শুনি। কত কিছু শিখি অর্থনীতির’– হাসতে হাসতে বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। নির্ভুলভাবে ‘কেইনসের মূল্যতত্ত্ব’ আউড়ে যান, তিন দিন আগে যা বলেছি শিক্ষার্থীদের। আমি হতবাক।
আর দশজনের মতো অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখার আমিও পরম ভক্ত। দেদার লেখা পড়েছি তাঁর। কিন্তু তাঁর অজস্র লেখার মধ্যে তিনটি আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। প্রথমটি ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’– তাঁর প্রয়াত স্ত্রী নাজমা জেসমিন চৌধুরীর স্মরণে লেখা; দ্বিতীয়টি ‘আমার পিতার মুখ’– তাঁর পিতাকে নিয়ে লেখা এবং তৃতীয়টি ‘আমার বান্ধবেরা’– তাঁর সমসাময়িক ছাত্রবন্ধুদের নিয়ে লেখা। অসামান্য সে লেখাগুলোর বহু অংশ আমি এখনও গড় গড়িয়ে বলে যেতে পারব।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাহিত্যবিষয়ক আলোচনায় অবধারিতভাবেই চলে আসে সমাজ ও রাজনীতি; প্রাসঙ্গিকভাবে অবশ্যই। সেসব আলোচনায় পুঁজিবাদের বিপক্ষে সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর পক্ষপাতও সর্বজনবিদিত। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, বিশেষত নারী চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিও পাঠক সবার চেনা।
শেষের কথা বলি। ঘটনাটি বেনুর মুখে শোনা। কোথাও বেনুর সঙ্গে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দেখা। নানান কথার মধ্যে বেনু আমার উল্লেখ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে তাঁকে বলেছিল, ‘ও তো আপনার পরম ভক্ত।’ সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্মিতহাস্যে বলেছিলেন, ‘আমিও তো ওর বিরাট ভক্ত।’ তাঁর জবাবে বেনু উদ্বেলিত হয়েছিল এবং বাড়ি ফিরে খুব গর্বিতভাবে আমাকে এ গল্প বলেছিল। নানাজনের কাছ থেকে বহু প্রশংসা আমি জীবনে পেয়েছি; কিন্তু অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এ প্রশস্তিটুকু আমি চিরকাল মাথায় তুলে রাখব। শুভ জন্মতিথি জানাই তাঁকে।

ড.

সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি,
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উপস থ প র দশক

এছাড়াও পড়ুন:

টানা তিন দিন ৪ ঘণ্টা করে ঘুমালে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে

সুস্থতার জন্য প্রতিদিন টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এর চেয়ে কম ঘুমালে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। গবেষণায় উঠে এসেছে, টানা ৩ দিন যদি কেউ ৪ বা তার কম সময় ঘুমান, তাহলে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হয় যা জটিল রোগের কারণ হতে পারে। শুধু বয়স্ক নয়, কমবয়সিরাও আক্রান্ত হতে পারেন নানা রোগে।

ব্যস্ততম জীবনে ঘুম কম হওয়ার সমস্যা সবারই আছে। অফিস থেকে ফিরে রাত জেগে কাজ করেন অনেকে। আবার সিনেমা-সিরিজ দেখতে গিয়েও ঘুম কম হয়। কিন্তু সকাল হতে না হতেই অফিস যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। সব মিলিয়ে রাতে পর্যাপ্ত ঘুম একেবারেই কম হয়। কিন্তু কম ঘুম হওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হলে, তখনই মুশকিল।

গবেষণা জানাচ্ছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে হৃদরোগের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। টানা তিন দিন রাতে ৪ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমোলে রক্তে এক ধরনের প্রদাহ ঘটানো প্রোটিনের জন্ম হয়। ওই প্রোটিন শরীরে তখন তৈরি হয়, যখন কেউ মানসিক চাপে থাকে কিংবা দীর্ঘ দিন শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই প্রোটিন দীর্ঘ দিন রক্তে থাকলে তা ধমনীর ক্ষতি করে এবং হার্টফেল, হার্টের অসুখ এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা তৈরি করে।

আরো পড়ুন:

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার স্বাস্থ্য উপকারিতা

নারীরা কেন পুরুষদের তুলনায় বেশিবার প্রস্রাব করেন?

গবেষকরা ১৬জন সুস্থ এবং কমবয়সি পুরুষকে গবেষণাগারে রেখে একটি সমীক্ষা চালান।শগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের সারা দিনের খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে শরীরচর্চা, কাজকর্ম এমনকী গায়ে সূর্যের গায়ে আলো লাগানোর সময়ও ঠিক করা হয় স্বাস্থ্যকর নিয়ম মেনে। শুধু ঘুমের সময় বদলে দেওয়া হয়। কখনও টানা ৩ দিন অংশগ্রহণকারীদের ৮ ঘণ্টা করে ঘুমোতে দেওয়া হয়। আবার কখনও টানা ৩ দিন সওয়া ৪ ঘণ্টা ঘুমোনোর পরেই ডেকে দেওয়া হয়। এর পরেই রক্ত পরীক্ষা করানো হয়।

শরীরচর্চা করলে শরীরের স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের মাত্রা বাড়ে। যা মস্তিষ্ক এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা যায়, যাঁরা কম ঘুমিয়েছেন, তারা শরীরচর্চা করলেও সেই প্রোটিনের মাত্রা বাড়ছে না। বিষয়টি চিন্তার বলে মনে করছেন গবেষকরা।

সূত্র: এই সময়

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টানা তিন দিন ৪ ঘণ্টা করে ঘুমালে শরীরে যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
  • আব্দুল কাদের শিবিরের সাথী ছিলেন, দাবি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতির