Samakal:
2025-09-21@21:08:24 GMT

শিক্ষকই তো তিনি আমার

Published: 22nd, June 2025 GMT

শিক্ষকই তো তিনি আমার

প্রথাগত অর্থে তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন না। আমাকে পড়াননি। শ্রেণিকক্ষে তাঁর বক্তৃতা শুনতে বসিনি। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি, সেই বিভাগেরই ছাত্র ছিলাম না আমি। তবু তিনি আমায় শিখিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে ধার করে নানান শব্দ শিখেছি; সাধারণ বাক্য ভেঙেচুরে নতুন করে বাক্য গঠন শিখেছি। লেখার কায়দাও অনেকটা রপ্ত করেছি তাঁর কাছ থেকে। বক্তৃতার শব্দচয়ন, স্বর-প্রক্ষেপণ, উপস্থাপন– সেটাও অনেকটা শেখা তাঁর কাছে। তাই সরাসরি না পড়ালেও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমার শিক্ষক, যিনি সিক (এসআইসি) নামে পরিচিত আমাদের প্রজন্ম এবং পরবর্তী বহু প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে। আজ ২৩ জুন, তাঁর ৯০তম জন্মতিথি। জন্মদিনের অন্তর্ময় শুভেচ্ছা। 

সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন তাঁকে খুব কাছে থেকে চেনা-জানার একাধিক সুযোগ তেমন হয়নি আমার। হ্যাঁ, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভায় গিয়েছি বটে আমি কখনও-সখনও, তাঁর লেখাও পড়েছি এখানে-সেখানে। কিন্তু তাঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বকে চেনা-জানার জন্য যে নৈকট্য প্রয়োজন, তা সত্তরের দশকে আমার ছিল না।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে আমার চেনা-জানার বলয় দৃঢ় হয় আশির দশকে, আমি উচ্চশিক্ষা সমাপন করে দেশে ফিরে এলে। একাধিক অঙ্গনে তখন আমাদের যৌথ পদচারণা– সভা-সমিতি, লেখালেখির জগৎ, রেডিও-টিভির বলয়, বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায়। দেখা হতো, কথা হতো, আলাপ-আলোচনা হতো কখনও দু’জনে, কখনও অনেকের সঙ্গে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকার সম্পাদক। প্রায়ই গবেষণামূলক নানা প্রবন্ধ নিয়ে তাঁর কাছে যেতাম। বিষয়বস্তু নিয়ে আলাপ করতেন আমার সঙ্গে। ছেপেছেন আমার একাধিক প্রবন্ধ; প্রশংসা করেছেন লেখার; পরামর্শও দিয়েছেন নানান সময়ে নানান বিষয়ে। পত্রপত্রিকায় লেখা বেরোলে উল্লেখ করেছেন সে লেখার দেখা হলেই। 

রেডিও-টেলিভিশনের নানান অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলাম দু’জনে। বাংলাদেশ বেতারে প্রভাতি অনুষ্ঠান ‘আজকের ঢাকায়’ এক সপ্তাহে তাঁর ধারাবাহিক কথিকা ‘কথার কথা’ যেত; অন্য সপ্তাহে আমার নিয়মিত কথিকা ‘যা না বললেই নয়’। বাংলাদেশ বেতারের স্বর্ণকণ্ঠ বালক কৌশিক আহমেদের উপস্থাপনায় আর প্রয়াত কবি আবু তাহেরের প্রযোজনায় হতো জননন্দিত সে অনুষ্ঠান। তাঁর কথিকা ধারণের জন্য অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নির্ধারিত সময়ে নিয়ম করে উপস্থিত হতেন। আমার কথিকা ধারণের জন্য অনুষ্ঠান সংগঠক মনোয়ারা আপাকে বাতি নিয়ে আমাকে খুঁজতে বেরোতে হতো। অনেক সময় এমনও হয়েছে, অনুষ্ঠানের সময়েই স্টুডিওতে কৌশিকের পাশে বসে আমি পড়ে দিয়েছি আমার কথিকা। প্রযুক্তির কুশীলব এবং উপস্থাপকের উদ্বেগে স্টুডিওর বাতাস তখন ঘন হয়ে আসত। 
টেলিভিশনে আমার উপস্থাপিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বেশ ক’বার এসেছেন। মনে আছে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলতম  ছাত্রদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করার সময়ে আমি জোর দিয়েছিলাম যারা ব্যর্থ হয়েছে, তাদের ওপরে। সে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আমার বক্তব্যের জোর সমর্থন করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বড় গভীর বিশ্লেষণ করেছিলেন সে সমস্যার। জননন্দিত সে অনুষ্ঠান শেষে নানান গুণীজনের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক বার্তা পেয়েছিলাম দূরালাপনীতে। 
মধ্য আশির দশকে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে একটি ঘটনার কথা মনে আছে। প্রতি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার কলাভবনের ২০২৮-এ আমার ক্লাস থাকত; মঙ্গলবার আমার পরেই ওখানে ক্লাস নিতেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বৃহস্পতিবার প্রয়াত আশফাক মুনীর (মিশুকের পোশাকি নাম)।

মঙ্গলবার আমি সতর্ক থাকি। ঘণ্টা বাজলেই ক্লাস ছেড়ে দিই, স্যারকে যেন দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়। অনেক সময় স্যার এসে গেছেন জানলে শিক্ষার্থীরাও আমাকে চোখ দিয়ে জানান দেয়। আমি মুখের বাক্য অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে আসি। একদিন স্যার আমাকে বললেন, ‘এত তাড়াহুড়ো কর কেন? পড়ানোটা শেষ করেই বার হও।’ ‘আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন!’ আমি নম্রস্বরে বলি। ‘তাতে কী? আমি তোমার বক্তৃতা শুনি। কত কিছু শিখি অর্থনীতির’– হাসতে হাসতে বলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। নির্ভুলভাবে ‘কেইনসের মূল্যতত্ত্ব’ আউড়ে যান, তিন দিন আগে যা বলেছি শিক্ষার্থীদের। আমি হতবাক।
আর দশজনের মতো অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখার আমিও পরম ভক্ত। দেদার লেখা পড়েছি তাঁর। কিন্তু তাঁর অজস্র লেখার মধ্যে তিনটি আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। প্রথমটি ‘আয়নায় বন্ধুর মুখ’– তাঁর প্রয়াত স্ত্রী নাজমা জেসমিন চৌধুরীর স্মরণে লেখা; দ্বিতীয়টি ‘আমার পিতার মুখ’– তাঁর পিতাকে নিয়ে লেখা এবং তৃতীয়টি ‘আমার বান্ধবেরা’– তাঁর সমসাময়িক ছাত্রবন্ধুদের নিয়ে লেখা। অসামান্য সে লেখাগুলোর বহু অংশ আমি এখনও গড় গড়িয়ে বলে যেতে পারব।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সাহিত্যবিষয়ক আলোচনায় অবধারিতভাবেই চলে আসে সমাজ ও রাজনীতি; প্রাসঙ্গিকভাবে অবশ্যই। সেসব আলোচনায় পুঁজিবাদের বিপক্ষে সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর পক্ষপাতও সর্বজনবিদিত। বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, বিশেষত নারী চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিও পাঠক সবার চেনা।
শেষের কথা বলি। ঘটনাটি বেনুর মুখে শোনা। কোথাও বেনুর সঙ্গে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দেখা। নানান কথার মধ্যে বেনু আমার উল্লেখ করে উচ্ছ্বসিত হয়ে তাঁকে বলেছিল, ‘ও তো আপনার পরম ভক্ত।’ সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্মিতহাস্যে বলেছিলেন, ‘আমিও তো ওর বিরাট ভক্ত।’ তাঁর জবাবে বেনু উদ্বেলিত হয়েছিল এবং বাড়ি ফিরে খুব গর্বিতভাবে আমাকে এ গল্প বলেছিল। নানাজনের কাছ থেকে বহু প্রশংসা আমি জীবনে পেয়েছি; কিন্তু অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এ প্রশস্তিটুকু আমি চিরকাল মাথায় তুলে রাখব। শুভ জন্মতিথি জানাই তাঁকে।

ড.

সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি,
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন উপস থ প র দশক

এছাড়াও পড়ুন:

রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে ঢাকার আদালতের আদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত এ আদেশ দেন।

গতকাল রোববার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার (৮ কোটি ১০ হাজার ডলার) বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক পাচারে জড়িত ছিল বলে সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত এ নির্দেশ দেন।

ছিবগাত উল্লাহ বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনার মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর আরসিবিসির মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। এখন আরসিবিসির কাছে পুরো ৮১ মিলিয়ন ডলারই ফেরত চাওয়া হচ্ছে, যেটা আদালত বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন।

আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে করা মামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, এর সঙ্গে সিআইডির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সিআইডির কাছে যে মামলা আছে, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। সমাপ্তির পথে, খুব দ্রুতই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

আদালতের আদেশে বলা হয়, তদন্তে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ এবং ফিলিপাইন সরকারের পাঠানো মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পর্যালোচনা করে প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে হ্যাকাররা অবৈধভাবে ৮১ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটর এহসানুল হক সমাজী বলেন, আদালতের আদেশ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশের কপি (অনুলিপি) পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে টাকা দেশে ফেরত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয়। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির তথ্য ১ দিন পর জানতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা ২৪ দিন গোপন রাখে। ৩৩তম দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।

সিআইডির ভাষ্য, জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম (ইউএনটিওসি), ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে এবং সর্বশেষ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইনের সরকারের কাছ থেকে এই অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে।

সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা (মেসেজ) পাঠিয়ে ফেডে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপাইনের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।

অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না।

২০২০ সালের ২৭ মে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় অর্থ রূপান্তর, চুরি, আত্মসাতের অভিযোগে রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এদিকে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় ১ কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করে আরসিবিসিকে। ওই সময় করা এক মামলায় ফিলিপাইনের আদালত ২০১৯ সালে আরসিবিসির শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগিতোকে মুদ্রা পাচারের আট দফা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটির সময় গত ৮ জুলাই আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ দেওয়ার কথা।

এর আগে গত ১১ মার্চ আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে প্রধান করে ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি করে সরকার। এ কমিটিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্তকাজের অগ্রগতি, এ-সংক্রান্ত সরকারি অন্যান্য পদক্ষেপের পর্যালোচনা, এ ঘটনার দায়দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এ জন্য ওই কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।

পর্যালোচনা কমিটির সদস্যরা হলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালক আলী আশফাক ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল হুদা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ