আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলমান আইনি কার্যক্রমে অর্থায়নে সহায়তা এবং কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য ওআইসি দেশসমূহকে আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

রবিবার (২২ জুন) বিকেলে তুরস্কের ইস্তানবুলে ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ৫১তম সম্মেলনে 'রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহিতা' বিষয়ে ওআইসি অ্যাডহক মিনিস্টারিয়াল কমিটির বিশেষ সেশনে বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “অপর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে কক্সবাজার ও ভাসানচরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তাও ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। ২০২৪ সালের জন্য জাতিসংঘের প্রাক্কলিত প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৬৮ শতাংশ গত বছর পাওয়া গেছে।”

তিনি জানান, তহবিল সংকটের কারণে গত ৩ জুন থেকে ইউনিসেফ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে । তাছাড়া, ডব্লিউএফপি খাদ্য রেশন কমিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে তহবিল না পাওয়া গেলে তা আরও কমবে।

গাম্বিয়া থেকে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে  মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ওআইসি সদস্য দেশসমূহের প্রতি আহ্বান জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে আমাদের পূর্ণ সংহতি, সমর্থন ও সহযোগিতা গাম্বিয়ার প্রয়োজন হবে।”

আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের আস্থা বাড়বে বলে জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি তিনি তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন।  বাস্তুচ্যুত ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অসাধারণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত আরো ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর ফলে বাংলাদেশের  অর্থনীতি, পরিবেশ এবং স্থানীয় জনগণের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ক্রমবর্ধমান মানবিক, উন্নয়নমূলক এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি।”

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ তার সামর্থ্যের চেয়েও বেশি ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা এখন ওআইসি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে আছি, যেন তারা তাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালন করে।”

“বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের প্রতি মুসলিম উম্মাহর সংহতি একটি নৈতিক ও ঐতিহাসিক অপরিহার্যতা” উল্লেখ করেন তিনি।

সম্মেলনের সাইডলাইনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আব্দেল্লাত্তি, আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেইহুন বাইরামভ,  আলজেরিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আহমেদ আতাফ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী খালিফা বিন শাহিন আল মারার এর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট র পরর ষ ট র মন ত র আহ ব ন সহ য ত র জন য তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘আরব’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ এবার কি আলোর মুখ দেখবে

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে কাতারের দোহায় আলোচনায় বসেন হামাসের নেতারা। এ সময় একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে শুরু করে দোহার আবাসিক এলাকায় হামাস নেতাদের ভবনে। কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায় দোহার আকাশে।

অবশ্য ৯ সেপ্টেম্বরে ওই হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান দোহায় অবস্থানরত হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতারা। এতে নিহত হন হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হায়ার ছেলেসহ পাঁচজন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কাতারের একজন নিরাপত্তাকর্মীও রয়েছেন। বাকিরা হামাস নেতাদের নিরাপত্তারক্ষী।

কাতারে ইসরায়েলের এই হামলার পর নড়রচড়ে বসেছে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের কৌশলগত সম্পর্ক থাকার পর ইসরায়েলের এমন ‘স্পর্ধা’ হজম করা কঠিন হয়ে উঠেছে উপসাগরীয় নেতাদের জন্য। বিশেষ করে হামলার আগে ইসরায়েল বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, এমন খবর প্রকাশ্যে আসার পর আরব নেতারা ‘বিকল্প’ চিন্তা করতে শুরু করেছেন, এমন গুঞ্জন উঠেছে।

ইসরায়েলের হামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় কাতার। ১৫ সেপ্টেম্বর দোহায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) জরুরি সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সেখানে প্রায় ৬০টি দেশের নেতা ও কর্মকর্তারা অংশ নেন। বেশির ভাগ নেতাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর ন্যাটোর আদলে ‘আরব ন্যাটো’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ ধারণাটি আবার সামনে এসেছে। মিসরের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল নিউজ জানিয়েছে, কাতারে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মিসরের পক্ষ থেকে আরব সামরিক জোটের প্রস্তাব দিয়েছে কায়রো। এ ছাড়া ওআইসির সম্মেলনে ইরাকের পক্ষ থেকে ‘মুসলিম ন্যাটো’ গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

ছয় আরব দেশের সমন্বয়ে গঠিত জিসিসি জোটের বৈঠকে নেতারা যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সচলের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ সেপ্টেম্বর জোটটির যৌথ প্রতিরক্ষা কাউন্সিল দোহায় এক বিশেষ অধিবেশনে যেকোনো ধরনের বিদেশি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক যৌথ ব্যবস্থা নিতে সম্মত হয়।

এ ছাড়া সৌদি আরব ও পাকিস্তান ১৭ সেপ্টেম্বর ‘কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সই করলে নতুন করে পালে হাওয়া পায় ‘আরব ন্যাটো’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ ধারণাটি।

প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর শেষে আলিঙ্গন করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আরব’ বা ‘মুসলিম ন্যাটো’ এবার কি আলোর মুখ দেখবে