এক মাঘে শীত যায় না, মব সৃষ্টি করে মারার বিচার হবে, বললেন শাজাহান খান
Published: 23rd, June 2025 GMT
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মব সৃষ্টি করে মারা হচ্ছে। এসবের বিচার হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক নৌমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান।
আজ সোমবার আদালতে হাজিরার এজলাস থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। শাজাহান খান বলেন, ‘এটি ঠিক হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মব সৃষ্টি করে মারা হচ্ছে। এই যে মব জাস্টিস করে মানুষ হত্যা করলো.
এ সময় দেশ কেমন চলছে- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি দিয়ে বলেন, ‘আপনারা তো দেখছেনই। এক হাতে তালি বাজে না।’ তারপর তিনি সাংবাদিকদের ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করেন হাসিমুখে।
এদিন সকাল ১০টার দিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় তাদের হাতে হ্যান্ডকাফ, বুকে বুলেট প্রুভ জ্যাকেট, ও মাথায় হেলমেট পরানো ছিলো। কাঠগড়ায় তোলার পর পুলিশ তাদের হ্যান্ডকাফ ও হেলমেট খুলে দেন। তারপর শাহজান খান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একে অপরের সঙ্গে গল্প করতে থাকেন। নিজ নিজ আইনজীবীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও করেন তারা। পরবর্তীতে বিচারক এজলাসে এলে তারা নিশ্চুপ হয়ে যান। এদিন আদালতের দিকে মুখ করে সারিবদ্ধ লাইনের প্রথমে আনিসুল হক ও শাজাহান খানকে কাঠগড়ার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে একদম পিছনের সারিতে দাড়িয়ে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
আদালতে পুরোটা সময় সালমান এফ রহমানকে চুপচাপ ও নিরিবিলি থাকলে দেখা যায়। এদিন তার পরনে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি ও পায়ে দুই ফিতার বার্মিজ সেন্ডেল দেখা যায়। আদালত শেষে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলেও কোন উত্তর দেননি তিনি।
এদিন সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলায় সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম।
রিমান্ড শুনানিকালে কথা বলেন শাজাহান খান। তিনি পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিজ্ঞ পিপি সাহেব উনি বিএনপির বড় নেতা। ভুতুড়ে মামলায় বারবার আমাদের রিমান্ডে নিচ্ছেন কেন?’
এ সময় উত্তরে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে তারা গণভবনে বসে নীতিনির্ধারণী বৈঠক করেছে। তিনি (শাজাহান খান) আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারা সাধারণ আসামি নয়। তারা মিডিয়ায় এসে স্বীকার করেছেন, আন্দোলনকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না, দমন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তো এসব ঘটনায় কোনো মামলা করিনি। ভুক্তভোগীদের আত্মীয়রা করেছেন। রিমান্ডেও তো আমরা নেই না। আমাদের শুনানি করার কাজ। সেটা আমরা করি।’ এরপর শুনানি শেষে এ মামলায় শাজাহান খান, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ডে আনিসুল-সালমান-শাজাহানসহ ৫
জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিন একই থানা এলাকায় রিটন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলায় ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে এক দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। তবে যাত্রাবাড়ী থানায় করা রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরে পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইলের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
আনিসুল হক, শাজাহান খান, সালমান এফ রহমানের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী সংস্থা পিবিআইর এসআই আমিরুল ইসলাম মীর। মনিরুল ইমলাম মনুর দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পিবিআই। সোহাইলের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই বিমান তরফদার। শুনানি শেষে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন।
সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২১ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন সাজেদুর রহমান ওমর। বিকেলে আসামিদের আক্রমণে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় সৈয়দ তানভীর আহমেদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকারের গুম, খুন, নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দল মহাসমাবেশের ডাক দেয়। ভুক্তভোগী গণ অধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনও সমাবেশে অংশ নেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আসামিরা অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় আসামিদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে সায়মন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন তিনি। এ ঘটনায় গত ২৯ এপ্রিল ভুক্তভোগী বদরুল ইসলাম সায়মন বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন মডেল থানা হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪৫ জনকে আসামি করা হয়।
রিটন হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন রিটন উদ্দিন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই দিন সকাল ৮ টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফুটওভার ব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হন রাসেল। পরে তিনি মারা যান।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর পল্টন থানায় করা রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ স জ দ র রহম ন ওমর বদর ল ইসল ম স র হত য মন ত র এ সময় আওয় ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের শুভেচ্ছা পোস্টার
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের দেয়ালসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাঁটানো হয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টার।
সোমবার (২৩ জুন) সকালে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পোস্টারগুলো দেখার পর সেগুলো অপসারণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক শাহিন বলেন, ‘‘রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করেছে। যেখানে একটি দলের কার্যক্রম আদালতের সিদ্ধান্তে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেই দলের কোনো কার্যক্রম চালাতে পারে না।’’
আরো পড়ুন:
প্রবাসীকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
মেয়াদ ও বার এই দুই শব্দ ঘিরে বহু ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছে: সালাহউদ্দিন
উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী ইমাম ইনোকি বলেন, ‘‘বিএনপির প্রতি শুভেচ্ছা জানাতেই তাদের দলীয় কার্যালয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে।’’
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিষয়টি জানিয়ে আমাদের ফোন দেওয়া হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে, সেখানে গিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। বিএনপির নেতাকর্মীরা তার আগেই পোস্টারগুলো অপসারণ করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।’’
ঢাকা/এনাম/রাজীব