গত ৬ দিনে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে রহিমা ফুডের
Published: 23rd, June 2025 GMT
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সোমবারও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল রহিমা ফুড। এদিন কোম্পানিটি এই তালিকায় প্রথম অবস্থানে উঠে এসেছে। সোমবার ডিএসইতে রহিমা ফুডের প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে ৭ টাকা বা ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৩ টাকায়। গত ছয় কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৫ টাকা বেড়েছে। এতে গত তিন মাসের মধ্যে এটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল রহিমা ফুড।
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হঠাৎ কোম্পানিটির শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই; বরং কোম্পানিটি সর্বশেষ গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এটির মুনাফা কমে গেছে। গত বছরের প্রথম তিন মাসে রহিমা ফুড প্রতিটি শেয়ারে ২৪ পয়সা মুনাফা করেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
ঢাকার বাজারে আজ মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল দেশের পোশাক খাতের শুরুর দিকের প্রতিষ্ঠান দেশ গার্মেন্টস। স্বল্প মূলধনি এই কোম্পানির শেয়ারের দাম গতকাল প্রায় ১০ শতাংশ বা ৯ টাকা ২০ পয়সা বেড়েছে। তাতে দিন শেষে এটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১০২ টাকা। দেশ গার্মেন্টস মাত্র ৮ কোটি টাকার মূলধনি একটি কোম্পানি। এটির শেয়ারের সংখ্যা ৮২ লাখ ৮৮ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। ফলে বাজারে এটির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কম। এ কারণে কোম্পানিটির অল্প শেয়ার লেনদেনেও সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। মাঝারি মানের কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত দেশ গার্মেন্টস ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শেয়ারধারীদের ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় অবস্থানে ছিল ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস। সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দামও প্রায় ১০ শতাংশ বা ১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকায়। কোম্পানিটি ২০২৪ সালে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, ২০২২ সালে ১ শতাংশ ও ২০২১ সালে শেয়ারধারীদের ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত।
ঢাকার বাজারে আজ মূল্যবৃদ্ধির চতুর্থ অবস্থানে ছিল বিমা কোম্পানি সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স। এদিন এটির শেয়ারদর প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বা ৩ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকায়। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৩ সালে শেয়ারধারীদের ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির পঞ্চম অবস্থানে ছিল বিমা খাতের আরেক কোম্পানি ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সোমবার সোয়া ৮ শতাংশ বা ২ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সায়। ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত এই কোম্পানি সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০২৩ সালে, সেটি ছিল ১২ শতাংশ নগদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবস থ ন স মব র শ নগদ
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্ক ও এনবিআরে কর্মবিরতির কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১২%
বিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক এপ্রিল–জুনে দেশ থেকে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি তার আগের জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।
তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, গত এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন, যা ওই প্রান্তিকের রপ্তানি দক্ষতাকে দুর্বল করে দেয়। নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ (পরে কমে হয়েছে ২০ শতাংশ) পাল্টা শুল্ক আরোপ। তখন পর্যন্ত সেটি কার্যকর না হলেও তা ক্রয়াদেশ স্থগিত ও অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছিল।
মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য অনেক দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে। এবারে বাংলাদেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। কারণ, এ বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। আর চীনের শুল্ক এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। সময়মতো পণ্য পাঠানোকে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত করে। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় ও রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা ইত্যাদি কারণে রপ্তানির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটের কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দেরি হয়, যা পণ্যের চালান প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে পণ্য পাঠানো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। আবার বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতি, উৎপাদন ব্যয় ও বাজারের বৈচিত্র্যহীনতা রপ্তানির গতি শ্লথ করে দেয়।গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি পালনের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণে আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কমেছেবিদায়ী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল–জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কিছুটা কমেছে। এই প্রান্তিকে দেশ থেকে মোট ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়। তার মানে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তার আগের প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, পোশাক রপ্তানি থেকে তুলা, সুতা, কাপড় ও সরঞ্জামের আমদানি ব্যয় বাদ দিয়ে নিট রপ্তানি বা মূল্য সংযোজন হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেকে প্রকৃত রপ্তানি আয়কে পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।
গত ২০২২–২৩ ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তখন রপ্তানির পাশাপাশি মূল্য সংযোজনও কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যানের গরমিলের বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সামনে আনে। এরপর রপ্তানির পরিসংখ্যান সংশোধন হয়। তাতে গত দুই অর্থবছরের সাত প্রান্তিকে পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমে যায়।
রপ্তানি আয় বাড়িয়ে দেখানোর কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর–ডিসেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন একলাফে ৫৯ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তারপরের পাঁচ প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন আরও বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশের মধ্যে ছিল। যদিও সংশোধনের পর দেখা যায়, ওই অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে ৬২ শতাংশে নেমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে সাড়ে ৫৭ থেকে সাড়ে ৬১ শতাংশ হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই–সেপ্টেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন ছিল ৫৭ শতাংশ। পরের প্রান্তিকে, অর্থাৎ অক্টোবর–ডিসেম্বরে সেটি বেড়ে ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়। তারপরের দুই প্রান্তিকে মূল্য সংযোজন কমে হয় যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৯০ ও ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।