দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সোমবারও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল রহিমা ফুড। এদিন কোম্পানিটি এই তালিকায় প্রথম অবস্থানে উঠে এসেছে। সোমবার ডিএসইতে রহিমা ফুডের প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে ৭ টাকা বা ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৩ টাকায়। গত ছয় কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৫ টাকা বেড়েছে। এতে গত তিন মাসের মধ্যে এটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল রহিমা ফুড।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, হঠাৎ কোম্পানিটির শেয়ারের এমন মূল্যবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই; বরং কোম্পানিটি সর্বশেষ গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকের যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এটির মুনাফা কমে গেছে। গত বছরের প্রথম তিন মাসে রহিমা ফুড প্রতিটি শেয়ারে ২৪ পয়সা মুনাফা করেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার বাজারে আজ মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল দেশের পোশাক খাতের শুরুর দিকের প্রতিষ্ঠান দেশ গার্মেন্টস। স্বল্প মূলধনি এই কোম্পানির শেয়ারের দাম গতকাল প্রায় ১০ শতাংশ বা ৯ টাকা ২০ পয়সা বেড়েছে। তাতে দিন শেষে এটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১০২ টাকা। দেশ গার্মেন্টস মাত্র ৮ কোটি টাকার মূলধনি একটি কোম্পানি। এটির শেয়ারের সংখ্যা ৮২ লাখ ৮৮ হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে। ফলে বাজারে এটির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কম। এ কারণে কোম্পানিটির অল্প শেয়ার লেনদেনেও সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। মাঝারি মানের কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত দেশ গার্মেন্টস ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শেয়ারধারীদের ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় অবস্থানে ছিল ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস। সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের দামও প্রায় ১০ শতাংশ বা ১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকায়। কোম্পানিটি ২০২৪ সালে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ, ২০২২ সালে ১ শতাংশ ও ২০২১ সালে শেয়ারধারীদের ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত।

ঢাকার বাজারে আজ মূল্যবৃদ্ধির চতুর্থ অবস্থানে ছিল বিমা কোম্পানি সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স। এদিন এটির শেয়ারদর প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ বা ৩ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ টাকায়। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৩ সালে শেয়ারধারীদের ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির পঞ্চম অবস্থানে ছিল বিমা খাতের আরেক কোম্পানি ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সোমবার সোয়া ৮ শতাংশ বা ২ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সায়। ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত এই কোম্পানি সর্বশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০২৩ সালে, সেটি ছিল ১২ শতাংশ নগদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন স মব র শ নগদ

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্ট্রাল ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিরীক্ষকের শঙ্কা, পরিদর্শনের নির্দেশ

পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক। কোম্পানিটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় এমন শঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিদর্শন করে খতিয়ে দেখার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা সাপেক্ষে বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

সপ্তাহের শুরুতে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন

সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে শ্যামপুর সুগার মিলস কোম্পানি

আগের সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ৩০ জুন ২০২৩-২৪ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষিক বেশকিছু বিষয়ে আপত্তি বা মতামত জানিয়েছে। ওই মতামতের ভিত্তি কোম্পানির সার্বিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিদর্শন করা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।

অতএব, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ এর রেগুলেশন ৫৪(১) এর অধীনে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিষয়গুলোর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে একটি পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করার নির্দেশ দেগওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
৩০ জুন, ২০২৩-২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির  লোকসান ১,০৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯১০ টাকা এবং ঋণের পরিমাণ ২৬ কোটি ৮৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫১ টাকা। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি কোম্পানিটি। ফলে স্ট্যাটুটরি অডিটর (বিধিবদ্ধনিরীক্ষক) কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সাথে ব্যবসা অব্যাহত রাখার ক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছে। এই পরিস্থিতিতে, কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরীক্ষা করা এবং চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ সংক্রান্ত কোনো হুমকি আছে কিনা তা পরীক্ষা করবে পরিদর্শন কমিটি।

এদিকে, ৩০ জুন ২০২৩-২৪ সমাপ্ত অর্থবছরে নিরীক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে ব্যাংক ব্যালেন্স নিশ্চিতকরণসহ প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল শাখার কোম্পানির বর্তমান আমানত এবং অন্যান্য আমানত পরীক্ষা করবে পরিদর্শন কমিটি।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্যামলী শাখায় কোম্পানির বর্তমান আমানত এবং অন্যান্য আমানত পরীক্ষা করা হবে। এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো পরিদর্শন করে দেখবে পরিদর্শন কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, “২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষায় সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক। তাই কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিদর্শন করে উল্লিখিত অমসঙ্গিতিগুলো খতিয়ে দেখার জন্য ডিএসইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “এসব বিষয়ে গত ডিসেম্বরে নিরীক্ষক মতামত দিয়েছে। কিন্তু ডিএসইর পক্ষ থেকে পরিদর্শনের বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি।”

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। এদিকে সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে (০৩৫) টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.৩৭)। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭.০৬ টাকা।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৩ সালে। ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১১৯ কোটি ৮০ লাখ ৮৪৪টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪৪টি। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৭.৬৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬.২০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮৬.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। রবিবার (২২ জুন) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯.৭০ টাকায়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার মিলবে দু-এক দিনের মধ্যে
  • স্নাতকের ফলাফল ছাড়াই স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নিল চবির ফিন্যান্স বিভাগ
  • তৃতীয় ওপেনার হিসেবে দলে নাঈম শেখ, সৌম্যকে কড়া বার্তা
  • দণ্ডবিধিতে যে সংশোধনী আনতে হবে
  • সেন্ট্রাল ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিরীক্ষকের শঙ্কা, পরিদর্শনের নির্দেশ