সৌদি, আরব আমিরাত, ওমানে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা কেন কমছে
Published: 24th, June 2025 GMT
বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের শুরু থেকেই শীর্ষে আছে সৌদি আরব। এখন পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া কর্মীদের ৩৪ শতাংশেরই গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশ। চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে কাজের জন্য দেশ ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের ৭৩ শতাংশই গেছেন সৌদিতে। তবে এ শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে।
অন্যদিকে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। তৃতীয় শীর্ষে থাকা ওমানের বাজারও বন্ধ রয়েছে গত বছর থেকে। গত বছরের জুন থেকে বন্ধ হয়ে আছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অবশ্য এটি দ্রুত চালু করতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় চাহিদামতো কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। ইউরোপে কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনাও সেভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রমবাজারের ওপর নির্ভরতার কারণেই বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার বাড়ছে না। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সৌদি আরবের চাহিদা একই রকম থাকবে না। ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে সৌদিতে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কর্মীর চাহিদা বেড়েছিল। তবে এরই মধ্যে তা কমতেও শুরু করেছে। চলতি জুন মাসে ভিসা বন্ধ রেখেছে
মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া সৌদিতে বাসাবাড়ির কাজে যে শ্রম দিতে হয়, সে তুলনায় তেমন আয় হয় না। বিভিন্ন অভিযোগ তো আছেই। তাই নারীদের আগ্রহ কমে গেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিকল্প উৎস হিসেবে আফ্রিকার দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে।বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলামসৌদি। জুলাইয়ে নতুন ঘোষণা দিতে পারে দেশটি। বিকল্প শ্রমবাজার চালু করা না গেলে কর্মী পাঠানো কমে যাবে।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ১১ লাখের বেশি কর্মী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখে। তবে ২০২৪ সালে ৩ লাখ কমে হয় ১০ লাখ।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশ ছেড়েছেন ৪ লাখ ২০ হাজার কর্মী। তাঁদের মধ্যে তিন লাখই গেছেন সৌদি আরবে। এরপর রয়েছে কাতার। দেশটিতে ৪০ হাজার কর্মী গেছেন। ২৬ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন সিঙ্গাপুরে।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সৌদি যেতে অধিকাংশ কর্মী পরিচিত বা স্বজনের মাধ্যমে নিয়োগের চাহিদাপত্র সংগ্রহ করে থাকেন। এ নিয়ে একটি দালাল শ্রেণিও তৈরি হয়েছে। তারা নকল নিয়োগপত্র গছিয়ে দেয়। তাই কেউ কেউ সৌদিতে গিয়ে কাজ পান না, প্রতারিত হন। এটি বন্ধ হলে দেশটিতে গিয়ে বেকার থাকার অভিযোগ কমে আসবে।
রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবে এক মাস ভিসা বন্ধ। নতুন চাহিদাও কমে গেছে। জুলাইয়ে দেশটি কী ধরনের ঘোষণা দেয়, সে জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কর্মী নিয়োগে তারা আরও যাচাই–বাছাই চালু করতে পারে। তাই বিকল্প শ্রমবাজার চালু করতেই হবে।
বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ার তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নতুন শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যেসব দেশে সম্ভাবনা আছে, সেটিও কাজে লাগানো হচ্ছে না। শাকিরুল ইসলাম, চেয়ারপারসন, ওকাপকমছে নারী কর্মীওবিদেশে কর্মসংস্থানে বাংলাদেশি নারীদের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। অধিকাংশ নারীই যান গৃহকর্মী হিসেবে। তাঁদের কেউ কেউ নানা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। যৌন নিপীড়নের অভিযোগও আছে। এতে নারীদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার উৎসাহ কমছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিদেশে নারী কর্মী গেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৬ হাজার ১০৮, অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় কমে ২৮ শতাংশ। গত বছর এটি আরও কমে ৬১ হাজার ১৫৮–তে নেমে এসেছে। কমার হার ২০ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে গেছেন ২৪ হাজার ৬১৭ নারী। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন ১৭ হাজার ৭৮৬ জন। সাড়ে চার হাজার নারী গেছেন জর্ডানে।
অর্থাৎ গত কয়েক বছরে বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও আনুপাতিক হারে নারী কর্মীর সংখ্যা কমছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল—এই তিন বছর বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। এ সময় বিদেশে গেছেন ৩৪ লাখের বেশি কর্মী। এর মধ্যে নারী কর্মী গেছেন আড়াই লাখের কম। অথচ ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর লক্ষাধিক নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এ সংখ্যা কমে আসে। পরের দুই বছর আবার বাড়ে। তবে দুই বছর ধরে কমছে।
বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের (বিএনএসকে) নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া সৌদিতে বাসাবাড়ির কাজে যে শ্রম দিতে হয়, সে তুলনায় তেমন আয় হয় না। বিভিন্ন অভিযোগ তো আছেই। তাই নারীদের আগ্রহ কমে গেছে। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিকল্প উৎস হিসেবে আফ্রিকার দেশ থেকে কর্মী নিচ্ছে।
সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদবৈদেশিক শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসার প্রধান কারণ একক দেশের ওপর নির্ভরতা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, একটা সময় কোনো এক দেশে বিপুল হারে কর্মী যেতে শুরু করেন। এরপর নানা সমস্যা তৈরি হওয়ার পর ওই শ্রমবাজার কয়েক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তখন আরেক দেশে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এভাবে ঘুরেফিরে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারে সীমিত হয়ে আছে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান।
পরিস্থিতি আসলেই হতাশাজনক বলে মনে করেন তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসীকর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম। প্রস্তাবিত বাজেটে আগের চেয়েও এ খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ার তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নতুন শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যেসব দেশে সম্ভাবনা আছে, সেটিও কাজে লাগানো হচ্ছে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ রমব জ র চ ল কর ম দ র র কর ম ব কল প চ ত হয় ইসল ম প রথম বছর র বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নারী অভিযাত্রীর খোঁজে ‘ ট্র্যাক উইথ নিশাত’
এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার অনেক দিন ধরে চিন্তা করছিলেন, পর্বত আরোহণে নারীকে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করা যায়। অভিযাত্রী গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে আলাপও করেছেন এই বিষয়ে। আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়– মেয়েদের নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কাজটি শুরু করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সদস্যরা সবাই ঠিক করলেন এই আয়োজনের নাম হবে ‘ট্র্যাক উইথ নিশাত’।
২০২২ সালে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। ট্র্যাক উইথ নিশাতে অংশগ্রহণকারী মেয়েদের বয়স ২৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। মৌখিক ও ফিটনেস পরীক্ষার মাধ্যমে এখান থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হয়। এই ১০ জন ১৫ কেজি ওজনের ব্যাগ কাঁধে বহন করে সিলেট অঞ্চলের কালাপাহাড়ে সারাদিন হাঁটতে হবে। ফিরে এসে লিখিত পরীক্ষা হবে। এর পর শেষে ভোটের একটি ব্যবস্থা থাকবে; যেখানে ভলান্টিয়াররা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শেষ পর্যন্ত যে ক’জন টিকে থাকবেন, তাদের মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করবে।
আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ফিটনেস পরীক্ষা কীভাবে নিতে হবে। আমিও এর মধ্যে ফিটনেস পরীক্ষার একটি পরিকল্পনা তৈরি করে ফেললাম। নিশাত মজুমদার তাদের অভিযাত্রী দলের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলে দিন-তারিখ ঠিক করে ফেলেন। অভিযাত্রী সদস্যরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত এই আয়োজনের জন্য।
তারিখ ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমাদের একটা চিন্তার বিষয় ছিল। এ রকম একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক নারী রেজিস্ট্রেশন করবেন কিনা। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো– শেষ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা এবং এর বাইরে থেকে রেজিস্ট্রেশনকারীর সংখ্যা আমাদের ধারণার থেকেও বেশি। এ রকম উৎসাহ দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। বিষয়টি ভালো লাগল যে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মৌখিক পরীক্ষায় এমনও নারী পেয়েছি– যিনি কখনও খেলাধুলা করেননি। এর পরও আমরা তাদের বাদ দিইনি। আমরা চেয়েছি তিনি ফিটনেস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জানুন, তাঁর শরীরের কী অবস্থা?
এর মাধ্যমে পরে অনেক মেয়ের আগ্রহ আরও বেড়েছে। তারা কল দিয়ে জানতে চাইতেন ফিটনেস ভালো করার জন্য আর কী কী করতে পারি? আমি মনে করি, এই জায়গাতেও ট্র্যাক উইথ নিশাতের বড় সফলতা।
ফিটনেস পরীক্ষায় এমনও দেখা গেছে, বমি করেও কেউ থেমে থাকেননি। কী অসম্ভব আগ্রহশক্তি! আমাদের এই আয়োজনে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক আছেন।
ট্র্যাক উইথ নিশাতের ২০২২ সালের প্রথম প্রতিযোগিতায় সব বিষয়ে সফলভাবে শেষ করে নির্বাচিত হন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। নিশাত মজুমদার প্রজ্ঞাকে নেপালের ৮ হাজার মিটারের পর্বত মানাসলুর বেসক্যাম্পে নিয়ে যান এবং তিনি বেসক্যাম্প সফলভাবে শেষ করে ফিরে আসেন। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় বছর প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত নারীর নাম তাহুরা সুলতানা রেখা। নিশাত মজুমদারের সঙ্গে আমাদাবলাম বেসক্যাম্প সফলভাবে অভিযান শেষ করে ফিরে আসেন তিনি। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে নিশাতের সঙ্গে শীতকালীন অভিযানে যে পাঁচজন নারী অংশগ্রহণ করেন, তার মধ্যে রেখা একজন। এখন রেখা অভিযানের জন্য নেপালেই সময় কাটাচ্ছেন। ২০২৪ সালে তৃতীয় আয়োজনে নির্বাচিত হন উম্মুল আখিয়ার। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তিন বিজয়ীর বাড়িই চট্টগ্রামে।
এ বছর শুরু হয়েছে ট্র্যাক উইথ নিশাতের চতুর্থ আয়োজন। নারীদের এখন পর্বত অভিযানের ইচ্ছা আগে থেকে অনেক বেড়েছে। ট্র্যাক উইথ নিশাত মূলত এক বছরের মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম। নিশাত মজুমদারের কাছ থেকে এক বছর মেন্টরিং পাবে। তারপর বছর শেষে এই মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের শেষ ধাপ হলো হিমালয়ে নিশাত মজুমদারের কাছ থেকে ট্র্যাকিংয়ে হাতেখড়ির সুযোগ। নিশাত মজুমদার প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে নারীদের হিমালয়ের বিভিন্ন অভিযানে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে আবেদন আহ্বান করা হয়ে থাকে। এবারের রেজিস্ট্রেশন শেষ। জুন মাসের শেষ নাগাদ বাছাই পর্ব শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য তারিখ কিছুদিনের মধ্যে জানানো হবে। v