জাবিতে সেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ফেরানোর দাবি
Published: 26th, June 2025 GMT
অনিয়ন্ত্রিত গতির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে বন্ধ করা হয়েছিল অবৈধ যানটির চলাচল। ‘যাতায়াতে ভোগান্তির’ কারণে এখন সেই অটোরিকশাই ফেরানোর দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। গতকাল বুধবার এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। ভবনের মূল ফটকে তালাও দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছরের ১৯ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় ৫৩ ব্যাচের ছাত্রী আফসানা করিম রাচির মৃত্যু হয়। এর পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে শুধু প্যাডেলচালিত রিকশা চলছে। তবে তা শিক্ষার্থীদের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এর মধ্যে যাতায়াতে ভোগান্তি কমাতে গত ১৩ এপ্রিল চারটি এবং পরবর্তী সময়ে আরও চারটি ইলেকট্রিক কার্ট চালু করে প্রশাসন। তবে এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাশ্বত প্রামাণিক বাবাই বলেন, সব শিক্ষার্থীর ভোগান্তির কথা ভেবেই আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। বর্তমানে ক্লাসে যাওয়া-আসা থেকে শুরু করে অধিকাংশ সময়ই শিক্ষার্থীরা রিকশা পান না। এমনকি অসুস্থ হলেও যানবাহন পাওয়া যায় না। শুধু প্যাডেলচালিত রিকশা থাকায় ভাড়াও বেশি দিতে হয়। আর ইলেকট্রিক কার্ট প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ কারণে আমার ক্যাম্পাসে ফের অটোরিকশা চালুর দাবি জানিয়েছি।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন বলেন, রাঁচির মৃত্যুতে অটোরিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ এবং আসামির শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু প্রশাসন শুধু অটোরিকশা বন্ধ করেই দায় সেরেছে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে উপাচার্যকে জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে একটি কমিটি করে এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে শিক্ষার্থীরা তালা ঝুলিয়ে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন। এ ছাড়া উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা কমনওয়েলথ গুড অফিসেস সেকশন গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পিস ডিরেক্টরেটের উপদেষ্টা মিশেল স্কোবি আটকে পড়েন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের দাবি, কমনওয়েলথের প্রতিনিধি আসার পর তালা খুলে দেওয়া হয়। বের হওয়ার সময়ও তালা খোলা হয়। এ সময় কিছুটা সময়ক্ষেপণ হয়েছে শুধু।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৬ ভিপি-জিএসসহ হলের ১৯ পদ পেল ছাত্রদল
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। ছাত্রদলের প্রার্থীরা ৬ ভিপি–জিএসসহ বিভিন্ন হলের ১৯ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা জিতেছেন বিভিন্ন হলের ৮ ভিপি–জিএসসহ ৭৬টি পদে।
গত বুধবার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রশিবির একচেটিয়া জয় পেয়েছে। তবে হলে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়।
ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা তিনটি হলে—সোহরাওয়ার্দী, আবদুর রব, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ভিপি-জিএস দুটি পদেই জিতেছেন। এ ছাড়া সংগঠনটি শাহজালালে ভিপি ও শাহ আমানতে জিএস পদও পেয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রদল ভিপি-জিএস দুটি পদেই জিতেছে এ এফ রহমান ও সূর্যসেন হলে। এ ছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে ভিপি ও আলাওল হলে জিএস পদে জিতেছে ছাত্রদল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) শুধু জগন্নাথ হলে ভিপি পদে ছাত্রদলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল। অন্যদিকে চাকসুর পরদিন হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে হলের শীর্ষ তিন পদের একটিতেও ছাত্রদলের প্রার্থীরা জিততে পারেননি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রদের জন্য ৯টি আবাসিক হল রয়েছে। প্রতিটি হলে ১৪টি করে পদ। এবার ছাত্রদল হলে প্যানেল ঘোষণা করেনি। তবে সংগঠনের কর্মীরা কৌশল নেন অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোট বেঁধে বা স্বতন্ত্রভাবে লড়ার। এর ফলে ছয়টি হলে গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থীরা।
অন্যদিকে ছাত্রশিবির সাতটি হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়। সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে তারা পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে জয় পেয়েছে। অন্য হলে তেমন সাফল্য পায়নি।
একসময় এ এফ রহমান হলে ছাত্রশিবিরের প্রভাব ছিল। এবার এই হলে ভিপি-জিএস দুটিতেই হেরেছে তাদের প্রার্থী। উল্টো ছাত্রদল এখানে ভিপি-জিএসসহ তিন পদে জয়ী হয়ে শক্ত অবস্থান দেখিয়েছে। এটি ছাত্রদলের জন্য নির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রতীকী সাফল্য বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও পর্যবেক্ষকেরা।
একইভাবে আলাওল হলে শিবির পেয়েছে মাত্র চারটি পদ—এর মধ্যে এজিএস (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) ও দুটি সম্পাদকীয় পদ। বিপরীতে ছাত্রদল পেয়েছে পাঁচটি পদ—এর মধ্যে আছে জিএস, লাইব্রেরি ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক, খেলাধুলা সম্পাদক, স্বাস্থ্য সম্পাদক এবং একটি সদস্য পদ। এই হলে জয়ী প্রার্থীদের অনেকে হলকেন্দ্রিক জনপ্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত।
শাহজালাল হলে ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা জিএস, এজিএস ও দুই সম্পাদকীয় পদে হেরে যান। এখানে ছাত্রদল এজিএস এবং সমাজসেবা ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে জয় পেয়েছে। শাহ আমানত হলে শিবির হারিয়েছে ভিপি পদ, যেখানে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সমাজসেবা সম্পাদক পদটিও গেছে ছাত্রদলের হাতে।
মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলে শিবির প্যানেল দেয়নি। সূর্যসেন হলে ভিপি, জিএস ও লাইব্রেরি সম্পাদক পদে জিতেছে ছাত্রদল। বাকি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। একইভাবে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলেও প্যানেল দেয়নি শিবির। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছাত্রদলের প্রার্থীরা ভিপি, দপ্তর সম্পাদকসহ চারটি পদে জয়ী হয়েছেন। ছাত্রীদের নবাব ফয়জুন্নেসা হলে যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদেও জয় পেয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থী।
মোট ৯টি হল ও ১টি হোস্টেলের ১৪০টি পদে নির্বাচনের ফল অনুযায়ী শিবির পেয়েছে ৭৬টি পদ, ছাত্রদল পেয়েছে ১৯টি। বাকি ৪৫টি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র ও বাম সংগঠনের প্রার্থীরা। তবে এ সংখ্যা ছাত্রদলের জন্য আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। কারণ, কেন্দ্রীয়ভাবে একচেটিয়া পরাজয়ের পর হলে এই ফল তাদের জন্য ইতিবাচক।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল। আমরা আশা করেছিলাম কেন্দ্রীয় সংসদে আরও ভালো করার, কিন্তু হয়নি। তবে হল সংসদগুলোতে ভিপি, জিএস ও এজিএসে আমাদের কর্মীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করে সামনে এগিয়ে যাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
ঐতিহাসিক নির্বাচন, শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস
এবারের চাকসু নির্বাচন নানা দিক থেকে ঐতিহাসিক ছিল। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নির্বাচনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৮ আগস্ট তফসিল ঘোষণা করে গঠন করা হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর টানা এক মাস ধরে ক্যাম্পাসে তৈরি হয় নির্বাচনী উত্তেজনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ।
২৭ হাজার ৫১৬ ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ১৫৬ জন ছিলেন নারী। মোট প্রার্থী ছিলেন ৯০৮ জন—এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ পদে ৪১৫ জন এবং হলে ১৪টি হল ও ১টি হোস্টেলে ৪৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট হয় ৫টি কেন্দ্রের ৭০০ বুথে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ।
কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর মো. ইব্রাহিম হোসেন নির্বাচিত হন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে। একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে হন জিএস। অন্যদিকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জিতেছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের আইয়ুবুর রহমান, যিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট।
হলে ছাত্রদলের কৌশল
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই। প্রভাবও তুলনামূলক দুর্বল। তবু এ নির্বাচনে সংগঠনটি ভিন্ন কৌশল নেয়। প্যানেল না দিয়ে কর্মীদের স্বাধীনভাবে বা জোট বেঁধে অংশ নিতে উৎসাহিত করে। এ কারণেই ভিপি-জিএসসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন ছাত্রদলের নেতারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদের হলে জোট বেঁধে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। আমাদের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ কৌশল সফল হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০টি পদে আমাদের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন।’
আবদুল্লাহ আল নোমান আরও বলেন, ‘এই ফল আমাদের জন্য নতুন সূচনা। আমরা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক রাজনীতির নতুন ধারা তৈরি করতে চাই। কেন্দ্রীয় সংসদে পরাজয়ের পর হলে এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।’
চাকসু ও হল নির্বাচন শেষে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সংসদে ছাত্রশিবিরের জয় সংগঠনের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন হলেও আবাসিক হলে ছাত্রদলের সাফল্য ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন এক ছাত্ররাজনীতির সম্ভাবনার। কেননা হলগুলোতে ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এর মধ্য থেকে ছাত্রদল প্রার্থীদের জিতিয়ে এনেছে।