দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ এখন ভয়াবহ সংকটে। একদিকে জনস্বাস্থ্যের হুমকি বাড়ছে, অন্যদিকে পরিবেশদূষণের প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অন্তরায়। দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা তার কারণ। অথচ এ দুটি খাত রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি হওয়া উচিত। কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প ও ডিজিটাল হেলথ সল্যুশন বাস্তবায়নে রয়েছে সরকারের সীমাহীন ঘাটতি। জনবল সংকট, ওষুধ সরবরাহে দুর্নীতি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দুর্বল কাঠামো এবং গবেষণাভিত্তিক সিদ্ধান্তের অভাব এ খাতকে বারবার ব্যর্থ করছে।
ঢাকার বাতাসে ধুলাবালি, নালায় জমে থাকা প্লাস্টিক, সড়কে উন্মুক্ত নর্দমা নগরবাসীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। অথচ রাষ্ট্রীয় নীতিতে ‘পরিবেশ সুরক্ষা’ এবং ‘স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ’ দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চারিত। সাভার, নারায়ণগঞ্জ কিংবা গাজীপুরে শিল্পকারখানার পাশের গ্রামগুলোতে নদীর পানি দিয়ে কৃষি বা মাছ চাষ প্রায় অসম্ভব। ধলেশ্বরী নদীর পাশে থাকা অনেক চাষি এখন পানি সংগ্রহ করতে কয়েক কিলোমিটার দূরে যান। কারণ কলকারখানার বর্জ্যে সবকিছু হারিয়ে গেছে। সেখানকার শিশুদের মধ্যে বেড়েছে চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্ট। কিন্তু স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই প্রয়োজনীয় ডাক্তার কিংবা ওষুধ।
অন্যদিকে রংপুরের পীরগঞ্জ কিংবা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকায় এখনও শিশুদের ডায়রিয়া, টিকা গ্রহণ না করা এবং নিরাপদ পানি না পাওয়ার মতো সমস্যা এখনও নিরসন সম্ভব হয়নি। অনেক উপজেলায় নেই এমবিবিএস ডাক্তার, নার্স; নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসার বদলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হয়রান হতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। একই সঙ্গে রাজধানীতে প্রাইভেট হাসপাতালের সংখ্যা ও খরচ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ প্রায় অসম্ভব।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য খাতের এ সংকটের পেছনে যেমন রয়েছে বাজেটস্বল্পতা, তেমনি রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন বলতে বোঝেন রাস্তা বানানো, আর সরকারের বরাদ্দ যায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল কিংবা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পে, যা জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধানে অপর্যাপ্ত। অথচ পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি এসব উন্নয়নের সবচেয়ে
বড় অন্তরায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা, স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ কাগজে-কলমে চমৎকার হলেও বাস্তবে বারবার প্রশাসনিক দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের ঘাটতিতে মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ বিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য কিংবা মেডিকেল শিক্ষায় গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ সীমিত এবং শিক্ষার্থীদের কমিউনিটি পর্যায়ে সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ– এ দুটি ক্ষেত্রেই তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রবল
সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনের দায়িত্ব শুধু পাঠদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গবেষণা, মাঠ পর্যায়ের কাজ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করার দিকেই মনোনিবেশ করা উচিত। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং জনমুখী বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত না হলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতের উন্নয়ন কেবল ভাষণেই
আটকে থাকবে।
সমন্বিতভাবে বলতে গেলে, দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাত আজ যেভাবে জরাজীর্ণ কাঠামোয় দাঁড়িয়ে আছে, তার সংস্কার না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জর্জরিত হবে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, দুর্বিষহ পরিবেশ ও অনিরাপদ জীবনের ঝুঁকিতে। তাই আজ প্রয়োজন বাস্তবতানির্ভর প্রয়োগ, যেখানে গ্রামের মানুষটি অন্তত জানবে– কীভাবে পরিষ্কার পানি পাবে; শহরের শ্রমজীবী মানুষটি জানবে কোথায় কম খরচে চিকিৎসা পাবে এবং প্রত্যেক নাগরিক জানবে– তারা নিঃশ্বাসে নিচ্ছে বিষ নয়, বিশুদ্ধ বাতাস।
শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন: যুগ্ম সদস্য সচিব, বাংলাদেশ
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য ও পর ব শ সমন ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কাঁটা লাগা গার্ল’ শেফালির প্রথম সংসার কেন ভেঙেছিল?
‘কাঁটা লাগা গার্ল’খ্যাত তারকা অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা। গত ২৭ জুন মারা যান তিনি। মাত্র ৪২ বছর বয়সে শেফালির মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। ফলে তাকে নিয়ে আলোচনা থামছেই না।
অল্প বয়সে তারকা খ্যাতি কুড়ানোর পর সংগীত পরিচালক হরমিত সিংহের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান শেফালি। ২০০৪ সালে হরমিতের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন এই অভিনেত্রী। কিন্তু এ সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। ২০০৯ সালে হরমিতের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় শেফালির। কিন্তু এই সংসার কেন ভেঙেছিল? ২০২১ সালে টাইমস নাউকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন এই অভিনেত্রী।
প্রথম স্বামী হরমিতের সঙ্গে শেফালি জারিওয়ালা
সংসার ভাঙার বিষয়ে শেফালি জারিওয়ালা বলেছিলেন, “আপনাকে কেউ মূল্যায়ন করছে না—এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্যাতন কেবল শারীরিকভাবেই করা হয় না। অনেক মানসিক নির্যাতনও রয়েছে, যা ঘটলে আপনি জীবনে খুবই অসুখী হবেন। আমার মনে হয়, নিজের জন্য এই সিদ্ধান্ত (ডিভোর্স) নেওয়ার এটি অন্যতম একটি কারণ।”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে শেফালি জারিওয়ালা বলেছিলেন, “আমি স্বাধীন ছিলাম, নিজে অর্থ উপার্জন করছিলাম। আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় ভয় সমাজ। বিবাহবিচ্ছেদকে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়! কিন্তু আমি যেভাবে বড় হয়েছি, তা হলো সমাজের কথা চিন্তা না করে, আমরা যা সঠিক মনে করি তা করা। আমি আমার জীবনে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পেরেছিলাম এবং আমার দৃঢ় সমর্থন ছিল।”
শেফালি জারিওয়ালা
যেসব নারীরা দাম্পত্য জীবনে সুখী নন, তাদের উদ্দেশ্যে শেফালি বলেছিলেন, “নারীদের উপলদ্ধি করতে হবে, সত্যি তারা স্বাধীন হতে চায় এবং পরিস্থিতি বুঝতে হবে। কখনো কখনো নারীরা বছরের পর বছর বুঝতে পারে না, তারা সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করছে না।”
প্রচলিত আইনের কথা উল্লেখ করে শেফালি জারিওয়ালা বলেছিলেন, “পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে পারে। আমাদের দুর্দান্ত আইনজীবী আছেন। দেশের আইন অনেক উপায়ে নারীদের রক্ষা করে। তাদের পরামর্শ নিতে হবে এবং শক্তিশালী হতে হবে। নারীদের নিজস্ব একটি সাপোর্ট সিস্টেম থাকা উচিত, জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ভালোবেসে ঘর বাঁধলেও হরমিতের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের ওশিয়ারা থানায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিলেন শেফালি। পরবর্তীতে আইনিভাবে আলাদা হয়ে যান এই দম্পতি। হরমিতের সঙ্গে প্রথম সংসার ভাঙার পর প্রায় পাঁচ বছর সিঙ্গেল ছিলেন শেফালি। পরে কমন এক বন্ধুর মাধ্যমে এক ডিনার পার্টিতে পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে পরিচয় হয় এই অভিনেত্রীর।
দ্বিতীয় স্বামী পরাগের সঙ্গে শেফালি জারিওয়ালা
পরাগের সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়ে শেফালি বলেছিলেন, “আমি তখন সিঙ্গেল ছিলাম। এটা ছিল একটা সাজানো ডেট। আমরা একে অপরকে সত্যিই খুব পছন্দ করতাম। তাৎক্ষণিকভাবে ভালোবেসে ফেলি। পরাগ আর আমি অনেক দিক থেকে একই। যদিও কিছু বিষয়ে আলাদা। আমার মনে হয়, আমরা একে অপরের ভারসাম্য বজায় রাখি।”
২০১২ সালে ‘নাচ বালিয়ে’-এর সেটে শেফালিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন পরাগ ত্যাগী। কিন্তু তার কয়েক বছর আগে থেকেই তারা সম্পর্কে ছিলেন। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন শেফালি-পরাগ। এ দম্পতির কোনো সন্তান নেই। তবে সন্তান দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শেফালি। যদিও তার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল!
ঢাকা/শান্ত