Samakal:
2025-11-17@10:23:12 GMT

ট্রাম্প ‘যুদ্ধবিরোধী’ বটে

Published: 30th, June 2025 GMT

ট্রাম্প ‘যুদ্ধবিরোধী’ বটে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘যুদ্ধবিরোধী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কিন্তু হিসাব করলে দেখা যায়, ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার মূল প্ররোচনাদাতা ছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং ইরানকে কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্রের মালিক হতে দেওয়া যাবে না। ট্রাম্প ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করার জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর, ৬১তম দিনে ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা চালায়। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, এ হামলার পেছনে সরাসরি মদদ ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের। যদিও হামলার পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়– যা ছিল সম্পূর্ণ অসত্য। যুদ্ধের ক্ষেত্রে আমেরিকান রাজনীতিবিদদের অসত্য বলা নতুন কিছু নয়।

বস্তুত ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন। অভ্যন্তরীণভাবে যেমন মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের প্রচেষ্টা, সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর নানা সিদ্ধান্ত ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, ন্যাটো ও ইউক্রেনকে সমর্থন হ্রাস, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা এবং ইউএসএইড বন্ধের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলা– এসবই তাঁর একচেটিয়া ও বিতর্কিত নীতির প্রমাণ। বিশেষভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাঁর অবস্থান ছিল আরও আগ্রাসী ও অমানবিক। 

২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ঘোষণা দেন যে যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ হিসেবে পুনর্গঠন করবে। তাঁর এই পরিকল্পনায় প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক গাজা থেকে সরিয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে স্থানান্তরের প্রস্তাব ছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার উদ্যোগ নেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেয়। সব মিলিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে মৌলবাদী ও চরমপন্থি মানসিকতা প্রকাশ পায়, যেখানে মানবিকতা ও বিশ্বশান্তি নয়; ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আধিপত্যই প্রাধান্য পেয়েছে। 

অন্যদিকে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটি জন্মলগ্ন থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার সাধারণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, তাদের জমি জবরদখল এবং পশ্চিম তীরে শত শত অবৈধ বসতি নির্মাণ– এসবই ঘটছে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে। এসব কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই একজন চরমপন্থি ও আগ্রাসী শাসক হিসেবে পরিচিত। তাঁর একগুঁয়ে ও উগ্র নীতির কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আজ অস্থিরতা ও সংঘাতের পরিবেশ বিরাজ করছে।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশটির উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তা ও পরমাণু স্থাপনা। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের ৮০টিরও বেশি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। অন্যদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিবের বহুতল ভবন, হাইফার তেল শোধনাগার এবং জেরুজালেমের আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইরানের এই হামলায় ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা প্রকট হয়ে ওঠে, বিশেষ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে গিয়ে। 

ক্ষমতা ও যুদ্ধ পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত।  ইরানের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক হামলাও মূলত ইসরায়েল ও আমেরিকার ক্ষমতা ধরে রাখার একটি প্রচেষ্টা। তবে এ প্রেক্ষাপটে বহু আগে থেকে ধর্মীয় বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইসরায়েল বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিমদের ওপর অমানবিক নিপীড়ন চালিয়ে আসছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যখন ক্ষমতার লোভ মানবিক মূল্যবোধকে অতিক্রম করে যায়, তখন যুদ্ধের মাধ্যমে সহিংসতা, শোষণ ও ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। যুদ্ধের মাধ্যমে জয়লাভ অনেক সময় এক পক্ষের ক্ষমতা বিস্তারের সুযোগ এনে দিলেও, তা সমাজে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে।

ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন ইউরোপজুড়ে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন, যা বহু বছরের যুদ্ধের সূচনা করে। তাঁর ক্ষমতালিপ্সা ইউরোপকে রক্তাক্ত করে তোলে এবং অবশেষে ওয়াটারলু যুদ্ধে তাঁর পতন ঘটে। একইভাবে হিটলার ‘আর্য শ্রেষ্ঠত্ব’ এবং ভূখণ্ড বিস্তারের নামে পুরো ইউরোপকে যুদ্ধে জর্জরিত করেন। তাঁর ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা ছয় কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব পেয়েছে শুধু মানবিক বিপর্যয়– শান্তি নয়।

বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব ও মানবিকতা সর্বোচ্চ নৈতিক মানদণ্ডে পরিচালিত হওয়া উচিত। যারা প্রকৃত বিশ্বনেতা, তারা শুধু নিজেদের দেশের স্বার্থ রক্ষা করেন না; বরং বৈশ্বিক শান্তি, মানবাধিকার, পরিবেশ ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রেও সমানভাবে দায়িত্বশীল থাকেন। প্রকৃত বিশ্বনেতারা সহিংসতার বদলে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন; যুদ্ধ নয়, শান্তি ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলেন। প্রকৃত ক্ষমতা তখনই ইতিবাচক হয়, যখন তা শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহৃত হয়; যুদ্ধের মাধ্যমে নয়। আজকের পৃথিবী প্রকৃত বিশ্বনেতার অভাবের শিকার। আর যাই হোক, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বনেতা ননই; যুদ্ধবিরোধীও নন।

ড.

মো. আক্তারুজ্জামান খান: অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ব শ বন ত র ক ষমত ইসর য় ল প রক ত পরম ণ ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ফায়ারফক্সে আসছে এআই উইন্ডো

কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা এআইকেন্দ্রিক ব্রাউজারের বাজার দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই ফায়ারফক্সে নতুন এআই উইন্ডো নামের বিশেষ সুবিধা যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মজিলা। সুবিধাটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় প্রয়োজন অনুসারে একটি সমন্বিত এআই সহকারীর সাহায্য নিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াই থাকবে ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণে।

এক ব্লগ বার্তায় মজিলা জানায়, এআই উইন্ডো ব্রাউজিংয়ে ক্ষেত্রে এআই নির্দেশনা ও ব্যক্তিগত সহায়তার সুবিধা দেবে। সুবিধাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় থাকবে না। আগ্রহী ব্যবহারকারীরা চাইলে নিজে থেকেই চালু করবেন। যেকোনো সময় বন্ধ করা যাবে। এআইনির্ভর এই সুবিধা ওপেন সোর্স প্রযুক্তির ভিত্তিতে তৈরি করা হচ্ছে।

ফিচারটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ কিছু ব্যবহারকারীর কাছে উপলব্ধ হয়েছে। মজিলা জানিয়েছে, যে কেউ চাইলে আগের মতোই ফায়ারফক্স ব্যবহার করে নিজের পছন্দমতো কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতা পাবেন। আরও বেশি গোপনীয়তা চাইলে প্রাইভেট উইন্ডো ব্যবহার করতে পারবেন। এআই উইন্ডো ব্রাউজিংকে আরও ব্যক্তিগত উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ দেবে।

এআই চালিত ব্রাউজারের ব্যবহার বাড়তে থাকায় বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি এখন সার্চবারের জায়গায় চ্যাটবট যুক্ত করা বা সম্পূর্ণ এআইনির্ভর ব্রাউজার তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস বা পারপ্লেক্সিটির কমেট পুরোপুরি এআই এজেন্টকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলনির্ভর ব্রাউজারের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিযোগিতার মধ্যেও ভিন্ন অবস্থান তৈরি করতে চেষ্টা করছে মজিলা। তারা বলছে, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা—এই তিন নীতি সামনে রেখে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দেওয়া হচ্ছে। ওয়েবকে সবার জন্য উন্মুক্ত, মুক্ত ও নিরাপদ রাখতে চায় মজিলা। মজিলার ভাষ্য অনুযায়ী, ফায়ারফক্সে কোনো একক ইকোসিস্টেমে ব্যবহারকারীকে আটকে রাখা হবে না। এআই ব্যবহারের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। কখন, কীভাবে বা আদৌ এটি ব্যবহার করবেন কি না, এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ব্যবহারকারীর।

এ বছরের জুনে ফায়ারফক্সের অ্যাড্রেসবারে থাকা ইউনিফায়েড সার্চ সুবিধায় সরাসরি পারপ্লেক্সিটি এআইয়ের মাধ্যমে অনুসন্ধানের অপশন যুক্ত করে মজিলা। নতুন এআই উইন্ডো ফিচার যুক্ত হলে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ