১ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে সংগঠিতভাবে আন্দোলন শুরু হয়। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের পর রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ হয়। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে কলাভবন ও মল চত্বর হয়ে মাস্টারদা সূর্য সেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বসুনিয়া তোরণ হয়ে আবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসেন। পরে সেখানে সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম (বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক) বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে আইনিভাবে আমাদের দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা করতে হবে। আমাদের আশ্বস্ত করতে হবে, যাতে কোটাব্যবস্থার চূড়ান্ত ফয়সালা করা হয়।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে গ্রন্থাগার খোলা থাকতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের হলসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো হল বন্ধ করা যাবে না, গ্রন্থাগারও বন্ধ করা যাবে না। প্রত্যয় স্কিমের (সরকারের সর্বজনিন পেনশন কর্মসূচি) বিরুদ্ধে শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করি; কিন্তু আমাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো (গ্রন্থাগার, হল ও মেডিকেল) যেন বন্ধ না হয়।’

সমাবেশে পরের তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। সেই ঘোষণার পর ২, ৩ ও ৪ জুলাই মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।

১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরাও।

কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে ছিল পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া।

এর আগে ২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ ছিল। যদিও ৪ জুলাই সেই শুনানি সেদিন হয়নি।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে মাঠপর্যায়ে সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু বাকের মজুমদার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়ক এখন নতুন ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। আন্দোলনের শুরুর দিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১ জুলাই দেশের ১১টি স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একই সঙ্গে আন্দোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া আরও ছয়-সাতটি জায়গায় ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে একই উদ্দেশ্যে আন্দোলন হয়। ১ জুলাইয়ের এটা একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল। সংগঠিত আন্দোলন জুলাই থেকে শুরু হলেও এর নেপথ্যে জুন মাসও ছিল অনেকাংশে গুরুত্বপূর্ণ।

বাকের প্রথম আলোকে বলেন, ৫ জুন আদালতের রায়ে কোটা পুনর্বহাল হয়। এর প্রতিবাদে ৫ থেকে ৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়। এরপর ৩০ জুন পর্যন্ত দাবি মেনে নেওয়ার সময়সীমা (আলটিমেটাম) দেওয়া হয়েছিল। ১ জুলাই থেকে সারা দেশে যাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সংগঠিতভাবে আন্দোলন করা যায়, সেটি তাঁদের পরিকল্পনায় ছিল। সেই লক্ষ্যে ৯ থেকে ৩০ জুন সারা দেশে শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করা হয়। এরই ফল দেখা যায় ১ জুলাই থেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রন থ গ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ