শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। আন্দোলনের সঙ্গে একত্বতা প্রকাশ করে শুরুতে সামাজিক মাধ্যমে, এরপর সশরীরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথেও সরব ছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে সেই সময় ও এই সময় নিয়ে কথা জানালেন এই অভিনেত্রী।

সামাজিক মাধ্যমে বাঁধন লিখেছেন, ‘জুলাই আন্দোলন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই আন্দোলন আমাকে আশা দিয়েছিল। দেশের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছিল। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা কোনো সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। তবুও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা এক হয়েছিলাম এমন একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্র নিজের জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র তাক করেছিল তার জনগণের দিকে। কোনো কারণ ছাড়া মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। নির্দোষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিল। রিয়া মণির মতো ছোট ছোট শিশুরা জীবন দিয়েছিল। কিন্তু তারা বুঝেই উঠতে পারেনি কেন জীবন দিচ্ছে!’ 

অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা এক হয়েছিলাম আমাদের অধিকার আর দেশকে ভালোবেসে। সেটা ছিল স্মরণীয় মুহূর্ত। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম ভালো কিছুর। আমি সেই আশা সব সময় বুকে ধারণ করেই চলব।’

এর আগে বেশ কয়েকবার নিজের বক্তব্য পরিস্কার করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়েন নি। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নিত্যখাদ্যপণ্যে ভ্যাট, করনীতি সংস্কার যেখানে জরুরি

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, যার ফলে দরিদ্র জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিবর্তনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয় সংস্কার পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। বরং সরকার গত জানুয়ারিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যসহ শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

বাংলাদেশের করব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত সমস্যায় জর্জরিত। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) একটি পরোক্ষ কর, যা পণ্য ও সেবার মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা হয়। এটি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হলেও, বাস্তবে এর প্রভাব গরিব জনগণের ওপর বেশি পড়ছে।

গত জানুয়ারিতে যেসব পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নিত্যখাদ্যপণ্য যেমন পাউরুটি, বিস্কুট এবং কেক; যেগুলো সাধারণত দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের খাদ্য হিসেবে পরিচিত। গত ১৬ মে ‘বিস্কুট, পাউরুটি, কেকের প্যাকেট ছোট হচ্ছে, কষ্টে শ্রমজীবী মানুষ’ শিরোনামে প্রথম আলোর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব নিত্যখাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, অথবা প্যাকেটের আকার ছোট হয়ে গেছে।

ভ্যাট একটি ‘রিগ্রেসিভ’ করব্যবস্থার অংশ, যেখানে করের পরিমাণ সাধারণত ধনী-গরিব সব শ্রেণির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে এটি বৈষম্যমূলক। কারণ, ধনীরা সবচেয়ে বেশি সেবা পেয়ে থাকে, যেমন সড়কে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ব্যবহার করে ধনীরাই। তাই ধনী ও গরিবের জন্য কর সমান হওয়াটাও ন্যায্য নয়। অথচ আমাদের করনীতিতে উচ্চবিত্তদের ছাড় দিয়ে দরিদ্রদের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রবণতা দৃশ্যমান, যা রিগ্রেসিভ করনীতির থেকেও আরও বৈষম্যমূলক।

এই পণ্যগুলো শ্রমজীবী মানুষের জন্য সস্তা খাবার হিসেবে পরিচিত এবং ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন খাবারের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। নিত্যখাদ্যপণ্যে ভ্যাট দরিদ্রদের জীবনে আর্থিক চাপ বাড়াচ্ছে। কারণ, তাঁদের আয়ের সিংহভাগ খরচ হয় খাবার কেনার জন্য। বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট সামাজিক ন্যায্যতার পরিপন্থী। মানুষের বেঁচে থাকা ও কর্মক্ষমতা সবই নির্ভর করে খাবারের ওপর।

সুপারশপগুলোতে সাধারণত মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্তরা কেনাকাটা করেন, অথচ সেখানে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই বৈষম্য সমাজে কেবল অস্থিরতাই সৃষ্টি করছে তা নয়; বরং এটি অর্থনৈতিক সমতা এবং সামাজিক ন্যায্যতার পরিপন্থী।

ভ্যাট একটি ‘রিগ্রেসিভ’ করব্যবস্থার অংশ, যেখানে করের পরিমাণ সাধারণত ধনী-গরিব সব শ্রেণির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে এটি বৈষম্যমূলক। কারণ, ধনীরা সবচেয়ে বেশি সেবা পেয়ে থাকে, যেমন সড়কে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ব্যবহার করে ধনীরাই। তাই ধনী ও গরিবের জন্য কর সমান হওয়াটাও ন্যায্য নয়। অথচ আমাদের করনীতিতে উচ্চবিত্তদের ছাড় দিয়ে দরিদ্রদের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রবণতা দৃশ্যমান, যা রিগ্রেসিভ করনীতির থেকেও আরও বৈষম্যমূলক।

‘প্রগ্রেসিভ’ ট্যাক্সেশন হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ধনীদের ওপর কর বেশি আরোপ করা হয় এবং দরিদ্রদের জন্য কর কমানো হয়। উন্নত দেশগুলোর করনীতিতে আমরা এই প্রগ্রেসিভ ধারণা দেখতে পাই। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে উচ্চ আয়ের মানুষদের ওপর করের চাপ বেশি। ধনীদের কাছ থেকে নেওয়া কর সমাজের বৃহত্তর অংশের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। এই ধরনের করনীতি সব নাগরিকের জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে এই প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন কাঠামোটি কার্যকর নয়। এখানে কর প্রশাসন এবং নীতিনির্ধারণে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন বা ধনীদের ওপর বেশি কর আরোপের ধারণা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রশাসনিক কাঠামোর দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে আমাদের কর প্রশাসন যথেষ্ট দক্ষ ও কার্যকর নয়, ফলে তারা নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর ভ্যাটের পরিমাণ কতটা নির্ধারণ করা উচিত, তা ঠিক করতে সক্ষম নয়। তারা সহজে আদায়যোগ্য পণ্যগুলোতে কোনো বিবেচনা ছাড়াই কর বসিয়ে দেয়। এর ফলে যেসব পণ্য দরিদ্র জনগণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, যেমন খাদ্যপণ্য, সেখানে ভ্যাটের চাপ আরও বাড়ছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করব্যবস্থার কার্যকারিতা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সংস্কারের প্রয়োজন। যদি প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তবে আমাদের দরিদ্র জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। আমাদের নীতিনির্ধারণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। করব্যবস্থায় সুসংগঠিত সংস্কার আনা প্রয়োজন, যেখানে একদিকে গরিবদের জন্য খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে প্রগ্রেসিভ করব্যবস্থা প্রাধান্য পাবে।

সরকারের উচিত করনীতি প্রগ্রেসিভ করার পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে সমাজের সব শ্রেণি, বিশেষ করে গরিব জনগণ, এর সুস্পষ্ট ও কার্যকর সুবিধা পেতে পারে। এটি শুধু আমাদের দেশের দরিদ্র জনগণের জন্য নয়, বরং দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। 

হোসেন জিল্লুর রহমান চেয়ারম্যান, পিপিআরসি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ
  • জুলাই আন্দোলন ছিল জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা : বাঁধন
  • স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা
  • এই বিশাল প্রকল্প কি বৃথাই যাবে
  • গণসংহতি আন্দোলন কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ, বিক্ষোভ মিছিল
  • ৭ নং ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচির উদ্বোধন
  • রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য ছাড়া কী করে সংস্কার হয়
  • ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব জনপ্রত্যাশা নিয়ে কতটা সজাগ
  • নিত্যখাদ্যপণ্যে ভ্যাট, করনীতি সংস্কার যেখানে জরুরি