২০২৪ সালে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান বদলে দিয়েছিল দেশের রাজপথের দৃশ্যপট। সেই আন্দোলনের উত্তাপ, সাফল্যের প্রভাব চলচ্চিত্র জগতকেও আলোড়িত করে। অনেক নির্মাতা ঘোষণা দেন, জুলাই আন্দোলনকে উপজীব্য করে বড় পর্দায় তুলে ধরবেন ইতিহাস। কিন্তু ঘোষণার প্রায় এক বছর পার হতে চললেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির রেকর্ড বলছে, বেশ ক’জন নির্মাতা সিনেমার নাম নিবন্ধন করেছেন জুলাই আন্দোলন ঘিরে। ‘আয়নাঘর’, ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, ‘পরিবর্তন’ বা ‘৩৬শে জুলাই’ নামে চলচ্চিত্রের নিবন্ধন হয়েছে।  তবে এসবের বেশির ভাগই রয়ে গেছে কাগজ-কলমে। 

এই প্রেক্ষাপটে প্রথম এবং একমাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘দ্য রিমান্ড’। আশরাফুর রহমান পরিচালিত এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেন জাকিয়া বারী মম, পারভেজ আবির চৌধুরী, সালহা খানম নাদিয়া, লুৎফর রহমান জর্জ, কাজী হায়াৎ, মারুফ আকিবসহ অনেকে।
দীর্ঘদিন আগে সিনেমাটি জমা পড়ে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে। গত ৩০ ডিসেম্বর বোর্ডের পরীক্ষণ কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সনদপত্র পায়নি সিনেমাটি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।

অন্যদিকে ‘আয়নাঘর’ নাম নিয়ে রয়েছে অনেকের আগ্রহ। শোনা যায়, একাধিক নির্মাতা এই নামকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করেছিলেন। জয় সরকার নির্মাণ করছেন সরাসরি ‘আয়নাঘর’ নামেই, বদিউল আলম খোকন করছেন ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, জঁ নেসার ওসমান করছেন ‘অন্ধকারের আয়নাঘর’।

জয় সরকার বলেন, “আমরা অনেকটা কাজ গুছিয়ে এনেছি। আগামী বছরের জানুয়ারিতে সিনেমাটি মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে। দুই দিনের মধ্যে প্রযোজকের সঙ্গে মিটিং আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ‘আয়নাঘর’ মুক্তি পাবে সময়মতো।”

অন্যদিকে ‘৩৬শে জুলাই’ সিনেমা যেন হারিয়ে যাচ্ছে পথেই। সিনেমাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রযোজক এখন আর আগ্রহী নন সিনেমাটি নির্মাণে। পরিচালক রাশেদ শামীম স্যাম নতুন প্রযোজকের খোঁজ করছেন। বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মতে— সিনেমাটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

‘ভয়ংকর আয়নাঘর’ নিয়ে পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, “সিনেমাটির স্ক্রিপ্ট এখনো লেখা হচ্ছে। বড় ক্যানভাসে নির্মাণের পরিকল্পনা করছি, তাই সময় নিচ্ছি। এখন একটি নতুন সিনেমার কাজে ব্যস্ত, সেটি শেষ করেই প্রি-প্রোডাকশনে যাব।”

ঢাকা/রাহাত//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র পর চ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর কতটা গুরুত্ব পেল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আজ সোমবার শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই রায় নিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, গার্ডিয়ানসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি, আল–জাজিরা এবং ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম এই রায়ের খবর সরাসরি প্রচার করেছে।

বিবিসির খবরের শিরোনাম করা হয়েছে—‘নৃশংসভাবে বিক্ষোভ দমনের মামলায় বাংলাদেশের সাবেক নেতা শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা নিয়ে এখন ভারতের ওপর চাপ বাড়বে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে ঢাকার কাছে প্রত্যর্পণের তেমন সম্ভাবনা নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরের শিরোনাম করা হয়েছে—‘শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়নের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দীর্ঘ কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশের একটি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

রায় ঘোষণার আগে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণ–অভ্যুত্থানে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেন ট্রাইব্যুনাল। এমন এক সময়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে, যখন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যাবে। কিন্তু হাসিনার ছেলে এবং তাঁর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ রায়ের প্রাক্কালে রয়টার্সকে বলেন, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাঁরা আপিল করবেন না।

আজকের রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘মানবতাবিরোধী অপরাধে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়, ‘সোমবার বাংলাদেশের একটি আদালত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। বিচারক রায় পড়ার সময় জনাকীর্ণ আদালতে উল্লাসধ্বনি শুরু হয়।’

এএফপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আদালত ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণঘাতী দমন-নিপীড়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না, এ–বিষয়ক মামলায় তিনি অংশ নিতে পারেন। কিন্তু তিনি সেই নির্দেশ মানেননি।

এএফপির প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়, বহুল প্রতীক্ষিত এই রায় জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথম জাতীয় নির্বাচনের আগে এই রায় দেওয়া হলো।

আল–জাজিরার লাইভের শিরোনাম করা হয়েছে—‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ওপর সরকারের সহিংস দমন-পীড়নের জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থান দমনের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে ৭৮ বছর বয়সী পলাতক এই রাজনীতিবিদের অনুপস্থিতিতে তাঁর বিচার হচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের শিরোনাম—‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছরের ছাত্র বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই বিক্ষোভের মুখে তাঁর সরকারের পতন ঘটেছিল।

‘মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’ শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের ওপর প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ঢাকার একটি আদালত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন।

ভারতের গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের শিরোনাম—‘শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড: এখন কী হবে’। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক শত্রুদের তাড়া করতে ২০০৯ সালে তিনি নিজেই যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন, সেটাই তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

ভারতের আরেক গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর লাইভের শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ছাত্র দমন-পীড়নের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী কামালের মৃত্যুদণ্ড’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার বাংলাদেশের একটি আদালত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের ওপর সাংঘাতিক দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার দায়ে দীর্ঘ কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের একটি আদালত গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সোমবার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। কয়েক মাসের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে এ রায় দেওয়া হয়। এমন এক সময়ে এই রায় দেওয়া হলো, যখন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ