চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মহাসড়ক অবরোধের কারণে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পটিয়া বাইপাস এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। 

এর আগে সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পটিয়া থানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়কের পটিয়া সদরের কাগজীপাড়া এলাকায় সড়কে অস্থান নেয়। এসময় মহাসড়কের উভয় প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে দূরপাল্লার যাত্রীরা। আটকে পড়েছে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।  

গতকাল মঙ্গলবার রাতে পটিয়ায় পুলিশের সঙ্গে দুই দফা সংঘর্ষ হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল সাড়ে নয়টায় পটিয়া থানা ঘেরাও করেন তাঁরা। সেখান থেকে সড়ক অবরোধ শুরু হয়। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওই এলাকায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’ ব্যানারে এই অবরোধ হচ্ছে। পটিয়া মডেল মসজিদসংলগ্ন মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় তাঁদের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো.

নাজমুন নূর ও উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। 

অবরোধের কারণে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল কাজীরপাড়া এলাকা পর্যন্ত সড়ক অনেকটাই অচল হয়ে পড়ে। তবে পরীক্ষার্থী ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে এ সময় দেখা যায়নি।

অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, যান চলাচল করতে না পারায় অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কথা হয় জাকির হোসেন নামের এক বাসচালকের সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তিনি আটকে রয়েছেন। তাঁর বাসে ৩৫ থেকে ৪০ জন যাত্রী রয়েছে। অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম পৌঁছানো নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পটিয়া কাগজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী সমকালকে বলেন, চিকিৎসার জন্য তিনি চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিলেন। বেলা দুইটার দিকে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল তাঁর। তবে অবরোধের কারণে তা অনিশ্চিত। বাধ্য হয়েই তিনি হেঁটে রওনা হয়েছেন। সামনে থেকে কোনো গাড়ি পেলে তাতে উঠবেন।

আবদুর রহমান স্কুলের শিক্ষার্থী তাসনিয়া জাহান জানান, প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেটে আমজুরহাটে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। কোন ধরনের গাড়ি না থাকায় হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে পটিয়া সার্কেলের এএসপি আরিফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করারা চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা ও সাড়ে ১১টায় পটিয়া থানার পুলিশের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করে উভয় পক্ষ।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত ৯টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাঁকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয়। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উদ্দেশে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। এ বিষয়ে জানতে আজ পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাকে ফোন করা হয়। তবে তাঁরা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার বুকে স্বপ্নের গ্রাম

চারপাশে দালান, কংক্রিট, কাচ আর ধুলোর স্তূপ। ঢাকা শহরের এমন চেনা দৃশ্যের মাঝে হঠাৎ যদি কোথাও চোখে পড়ে ঘাসে মোড়া প্রান্তর, বাঁশ-কাঠের দোতলা ঘর, স্বচ্ছ লেকে মাছের লুকোচুরি, পাতায় পাতায় খেলা করা আলো! রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় বৃক্ষমেলায় দেখা মিলবে এমনই স্বপ্নঘেরা এক টুকরো গ্রাম। যেন শহুরে কোলাহল থেকে খানিকটা মুক্তির আশ্বাস; প্রকৃতির কোলে ফিরে যাওয়ার নীরব আমন্ত্রণ।

বৃক্ষমেলায় প্রবেশ করে ডান পাশে গিয়ে ঘাসের ওপর পা রাখতেই নরম পরশ লাগে। পাশেই পানির শব্দ, গাছের ফাঁকে দোল খাচ্ছে কাঠের দোলনা। কেউ বসে আছে, কেউ ছবি তুলছে। অনেকে নিঃশব্দে তাকিয়ে আছেন শুধু প্রকৃতির দিকে। 

এই সবুজ স্বপ্নের পেছনের কারিগর মো. রকিবুল আমিন। একজন প্রকৃতিপ্রেমী, যিনি শখ থেকেই গড়ে তুলেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ ল্যান্ডস্কেপ প্রতিষ্ঠান ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’। তাঁর স্বপ্ন শহরের প্রতি প্রান্তে এক চিলতে প্রকৃতি ফিরিয়ে আনা। ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’ গড়ে তোলে অনুভূতির পরিসর। ঘরের কোণা, ছাদ, বারান্দা, দেয়াল কিংবা সিঁড়ি, যেখানে খানিকটা জায়গা মেলে, সেখানে গাছ আর প্রকৃতির ছোঁয়া পৌঁছে দিতে চায় তারা।

গার্ডেনিং বাংলাদেশের কর্ণধার রকিবুল আমিনের শিকড় কুষ্টিয়ায়। ছোটবেলা থেকেই গাছের সঙ্গে তাঁর সখ্য। বাড়ির উঠোনে গড়া ফুলের বাগান, নানা রকম গাছের পরিচর্যা, পুকুরপাড়ে কাটানো দিন– সব মিলিয়ে প্রকৃতিই হয়ে ওঠে তাঁর প্রথম পাঠশালা। তাঁর ভাষায়, ‘বড় হয়ে দেখি শহরে মানুষ চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। সবুজ বলে কিছু নেই। এই অভাবটাই আমাকে নাড়া দেয়।’

ঢাকায় এসে বুঝলেন, এখানে গাছের চেয়ে ইটের দেয়াল বেশি। শিশুরা পাতার গন্ধ চেনে না; মাটিতে পা না দিয়েই বড় হয়। তখন তিনি ভেবেছিলেন, ‘মানুষের ঘরে যদি ফিরিয়ে দিতে পারি প্রকৃতির স্পর্শ, তাহলে তো শহরও একটু গ্রাম হয়ে উঠবে।’

ছাত্র অবস্থায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রাজধানীর শাহবাগে ১৪শ টাকার গোলাপ কিনে বিক্রি শুরু করেছিলেন রকিবুল। এক ঘণ্টা ভালো বিক্রির পরই নামল বৃষ্টি। এতে সব ফুল নষ্ট হয়ে যায়। লোকসান গুনলেন, কিন্তু পথ হারালেন না। ২০০৮ সালে বসুন্ধরা সিটিতে ভাড়া নিলেন ছোট দোকান; নাম দিলেন ‘একেশিয়া’। প্রথমে তেমন লাভ না হলেও একদিন ইনডোর প্লান্ট বিক্রি করে পেলেন চমক– ৭৫ হাজার টাকা! সেখান থেকে শুরু। পরে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখলেন ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’।

আজ তাঁর প্রতিষ্ঠান বছরে আয় করে প্রায় কোটি টাকা। ইতোমধ্যে শতাধিক ছোট-বড় ল্যান্ডস্কেপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে তারা। ‘গার্ডেনিং বাংলাদেশ’ গড়ে তোলে একেকটা জীবন্ত পরিমণ্ডল। টেরারিয়াম– কাচের পাত্রে তৈরি ক্ষুদ্র ইকোসিস্টেম। পেলুডারিয়াম– যেখানে জল আর স্থলের মিশেলে তৈরি হয় এক টুকরো বৃষ্টিবন। এসব তৈরি হয় পরম যত্নে; শিল্পের মতো। ঘরের ভেতরে এমন প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ হন অনেকেই। ছোট পাত্রে যেন সেঁধিয়ে আছে গোটা জঙ্গল কিংবা ঝরনার পাশে বসে থাকা এক পাখির সকাল।

রকিবুল বলেন, ‘সবুজটা হারিয়ে যাচ্ছে। গাছের পাতা ছুঁয়ে দেখার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে মানুষ। আমি চাই, প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন অন্তত একবার গাছের সঙ্গে কথা বলুক। তাদের ঘরে, ছাদে গাছ থাকুক। সবুজ দেখলে চোখের ক্লান্তি কেটে যায়; মন শান্ত হয়। আমি চাই মানুষ তাদের জীবনে সেই প্রশান্তিটুকু ফিরে পাক। এটাই আমার যুদ্ধ।’

রকিবুলের প্রতিষ্ঠান জিরো সয়েল ধারণা নিয়ে কাজ করছে। তিনি চান খোলা কোনো মাটিকে অনাবৃত রাখা যাবে না। ঘাস, লতা বা উদ্ভিদ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে সব ফাঁকা জায়গা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ