কানতারা টু: ‘রাজকন্যা কঙ্কাবতী’ রুক্মিণীকে কতটা জানেন?
Published: 17th, October 2025 GMT
কন্নড় ভাষার আলোচিত সিনেমা ‘কানতারা’। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ঋষভ শেঠি পরিচালিত ও অভিনীত এই সিনেমা। মুক্তির পর বক্স অফিস দাপিয়ে বেড়ায় এটি। নির্মিত হয়েছে এই সিনেমার প্রিকুয়েল। যার নাম রাখা হয়েছে—‘কানতারা লিজেন্ড: চ্যাপ্টার ওয়ান’ বা ‘কানতারা টু’। মুক্তির পর সিনেমাটি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে।
হোম্বেল ফিল্মস প্রযোজিত ‘কানতারা টু’ সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা, পরিচালনা ও প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋষভ শেঠি। সিনেমাটির অন্যতম প্রধান ‘রাজকন্যা কঙ্কাবতীর’ চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন রুক্মিণী বসন্ত।
আরো পড়ুন:
তামান্নাকে নিয়ে আন্নু কাপুরের ‘অশ্লীল’ মন্তব্য
কানতারা টু: ১০ দিনে আয় ৭৫৮ কোটি টাকা
১৯৯৬ সালের ১০ ডিসেম্বর কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন রুক্মিণী বসন্ত। তার বাবা বসন্ত বেনুগোপাল ভারতীয় সেনা বাহিনীর কর্নেল পদে চাকরি করতেন। ২০০৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরের উরি বর্ডারে মারা যান তিনি। রুক্মিণী পড়াশোনা করেছেন আর্মি স্কুল, এয়ার ফোর্স স্কুলে। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
২০১৯ সালে কন্নড় ভাষার ‘বারবল ট্রিলজি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে রুক্মিণীর। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন এম.
কয়েক বছর বিরতি নিয়ে অর্থাৎ ২০২৩ সালে কন্নড় ভাষার ‘সপ্তা সাগরদাছে এলো’ সিনেমায় অভিনয় করেন রুক্মিণী। এ সিনেমা দুই পার্টে নির্মিত হয়। তবে প্রথম পার্ট মুক্তির পর বেশ সাড়া ফেলেন এই অভিনেত্রী। একই সঙ্গে দর্শক-সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান রুক্মিণী। এ সিনেমার জন্য ফিল্মফেয়ারে ‘ক্রিটিক্স অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট এক্ট্রিস’ বিভাগে পুরস্কার জিতে নেন তিনি।
২০২৪ সালে কন্নড় ভাষার আরো দুটো সিনেমায় অভিনয় করেন রুক্মিণী। একই বছর ‘আপুডু ইপুডু এপুডু’ সিনেমার মাধ্যমে তেলেগু সিনেমায় পা রাখেন। চলতি বছরে ‘এইস’ সিনেমার মাধ্যমে তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক ঘটে রুক্মিণীর। তার অভিনীত তামিল ভাষার ‘মাদারাসি’ সিনেমাও চলতি বছরে মুক্তি পায়। তবে খুব একটা আলোর মুখ দেখেননি এই অভিনেত্রী।
গত ২ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কানতারা টু’ সিনেমা। এতে ‘রাজকুমারী কঙ্কাবতীর’ চরিত্রে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়াচ্ছেন রুক্মিণী বসন্ত। সিনেমাটিতে তার উপস্থিতি দর্শকদের যেমন নজর কেড়েছে, তেমনি সমালোচকদেরও মুগ্ধ করেছেন ২৮ বছর বয়সি রুক্মিণী।
‘কানতারা টু’ সিনেমার অংশ হতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত রুক্মিণী। তার ভাষায়—“ঋষভ স্যার আমার অভিনীত প্রথম ‘সপ্তা সাগরদাছে এলো’ সিনেমা দেখে আমার প্রশংসা করেছিলেন। তার মুখে প্রশংসাসূচক শব্দ শোনা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কখনো ভাবিনি, সেই সিনেমার কারণে এত বড় প্রজেক্টে সুযোগ পাব। আমাকে যখন এই সিনেমার প্রস্তাব দেন, তখন একেবারেই স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। চরিত্রটি যেমন বড়, কাহিনিতেও এর গুরুত্ব অনেক। শুরুতে অবশ্য একটু ভীত ছিলাম। কিন্তু ঋষভ স্যারের ভরসা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল।”
‘রাজকুমারী কঙ্কাবতী’ হয়ে ওঠা মোটেও সহজ ছিল না। এ বিষয়ে রুক্মণী বলেন, “এমন সিনেমায় কাজ করার সময় করাবলি সংস্কৃতির মধ্যে পুরোপুরি নিমজ্জিত হওয়াটা জরুরি। কারণ কানতারা শুধু কাহিনি নয়, করাবলি অঞ্চলের পরম্পরা ও বিশ্বাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আমার চরিত্রের কারণে ভূতপ্রেত ও দেব–দেবীর পূজা সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে হয়েছে। লেখক ও ঋষভ স্যার এ ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করেছেন। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, শারীরিক ভাষা আয়ত্ত করা। কঙ্কাবতীকে সঠিকভাবে জীবন্ত করে তুলতে তা শেখা জরুরি ছিল।”
কন্নড় সিনেমার জনপ্রিয় তারকা অভিনেতা যশের পরবর্তী সিনেমা ‘টক্সিক’। তারকাবহুল এ সিনেমায়ও অভিনয় করছেন রুক্মিণী। সিনেমাটিতে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন নয়নতারা, কিয়ারা আদভানি, হুমা কুরেশি, তারা সুতারিয়া, বিবেক ওবেরয়ের মতো শিল্পীদের। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। তাছাড়া তেলেগু ভাষার ‘ড্রাগন’ সিনেমার কাজও রুক্মিণীর হাতে রয়েছে।
রুক্মিণী তার পরবর্তী দুই সিনেমা প্রসঙ্গে বলেন, “গত অক্টোবর থেকে আমি যেসব সিনেমায় কাজ করেছি, সেগুলো একেবারেই ভিন্ন ধারার। এই ভ্রমণে ক্রমাগত নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করছি। এর মধ্যে আমি আমার দুটো জিনিস চিনেছি। এক. আমার শক্তি। দুই. আমার দুর্বলতা। সেই সঙ্গে ক্রমান্বয়ে নিজেকে উন্নত করছি।”
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ক ত র পর চর ত র কর ছ ন ক নত র বসন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানের হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্র কি ইচ্ছা করেই পার্ল হারবার অরক্ষিত রেখেছিল
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল রোববার। সকাল ৭টা ৫৫ মিনিট। সবাই ছুটির মেজাজে। কেউ কেউ তখন ধর্মীয় প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ওয়াহু দ্বীপের পার্ল হারবার। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের এই পার্ল হারবারে ছিল ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি।
পার্ল হারবারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের যুদ্ধজাহাজের সারি লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান থেকে একের পর টর্পেডো ছোড়া হচ্ছিল জাপানি যুদ্ধবিমান থেকে। সেই সঙ্গে চলে প্রচণ্ড বোমা হামলা ও মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ। হামলা চালানো হয় সেখানকার বিমানঘাঁটিতেও।
দুই ধাপে এ হামলায় অংশ নেয় জাপানের ৩৫৩টি যুদ্ধবিমান। দুই ঘণ্টার মধ্যেই পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও ১৬টি। ধ্বংস হয়ে যায় মার্কিন বাহিনীর ১৮৮টি যুদ্ধবিমান। জাপানের এই হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৪০০ জন সামরিক ও বেসামরিক নাগরিক। আহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০।
অতর্কিত আক্রমণে নৌঘাঁটির সদস্যরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। পাল্টা আক্রমণ করা দূরের কথা, আক্রমণ প্রতিহত করাই তাঁদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন বাহিনী আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। সকাল ১০টার মধ্যে জাপানি বাহিনী আক্রমণ শেষ করে জাহাজে ফিরে যাওয়ার আগেই মার্কিন বাহিনী তাদের ২৯টি বিমান ও পাঁচটি ছোট ডুবোজাহাজ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। মার্কিন পাল্টা হামলায় নিহত হন ৬৪ জাপানি সেনা।
আসলেই কি সেদিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা ঠেকাতে এতটাই অপ্রস্তুত ছিল? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য কিছু। এ নিয়ে রয়েছে ইতিহাসবিদদের নানা মত ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। যেমন, হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিমানবাহী রণতরির একটিও সেদিন পার্ল হারবারে ছিল না। সেগুলো অন্যত্র মোতায়েন ছিল। সাধারণত এই রণতরিগুলো পার্ল হারবারে থাকত। পরবর্তী সময়ে জাপানি বাহিনীকে এসব রণতরি দিয়েই কাবু করেছিল মার্কিন বাহিনী।
এ ছাড়া পার্ল হারবারে হামলায় জাপানের প্রস্তুতির বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনকে আগেই সতর্ক করেছিল জাপানস্থ দেশটির দূতাবাস। ছিল গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তাও। কেন মার্কিন প্রশাসন তা উপেক্ষা করেছিল। তাহলে এর পেছনে কি ছিল অন্য কোনো হিসাব–নিকাশ।
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি। ঘাঁটিটি বানানো হয় ১৯০৮ সালে। এরপর ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নৌঘাঁটি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে স্থানান্তর করা হয়। কৌশলগত দিক দিয়ে এই ঘাঁটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় দুই হাজার মাইল ও জাপান থেকে প্রায় চার হাজার মাইলে দূরে অবস্থিত ছিল এই নৌঘাঁটি।ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল অনেক দিন ধরেইদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই জাপান আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল। চীনের সঙ্গে পরপর দুটি যুদ্ধজয়ের পর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধজয়ে জাপান আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাঁচতে জাপান আধিপত্যবাদী নীতি নেয়। এরই অংশ হিসেবে ১৯৩১ সালে চীনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণের মধ্য দিয়ে জাপান তাদের আধিপত্য বিস্তার শুরু করে।
জাপানের এই আক্রমণাত্মক মনোভাব যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি। ১৯৪১ সালের জুলাই মাসে ফরাসি ইন্দোচীন দখল করার সময় জাপান জানত যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁদের যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
আগ্রাসী আচরণের বিষয়ে জাপানকে সতর্ক করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে ফল না আসায় ১৯৪০ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়। লৌহ আকরিক, স্ক্র্যাপ লোহা ও ইস্পাত রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। আশা ছিল, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা চীন ও ইন্দোচীনে জাপানের সাম্রাজ্যবাদী অগ্রযাত্রা থামাতে পারে। তবে এতে কোনো কাজ হয়নি।
১৯৪১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা জাপানের সব সম্পদ জব্দ করে। গ্রেট ব্রিটেন, চীন ও নেদারল্যান্ডস জাপানে তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের যুদ্ধজাহাজের সারি লক্ষ্য করে হামলা শুরু হয়