ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দোকান উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে ওষুধ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
Published: 17th, October 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ মার্কেটের দোকানঘর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে ‘জেলার সর্বস্তরের ওষুধ ব্যবসায়ী’ ব্যানারে তাঁরা এ কর্মসূচি পালন করেন।
মানববন্ধনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতা-কর্মীরাসহ জেলার ওষুধ ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি কুতুব উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ব্যবসায়ী নূর আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী খোকন খান, সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সানাউল হক ভূঁইয়া, সহসভাপতি এইচ এম মুরাদ প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে তাঁরা হাসপাতাল সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ মার্কেটের দোকানগুলো চুক্তিনামা অনুযায়ী বৈধ। ১৯৮৪ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দোকানের বিষয়ে পৃথক চুক্তি হয়। প্রত্যেক দোকানের বিপরীতে তৎকালীন ২৮ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। তাঁরা দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে সেখানে ওষুধের ব্যবসা করে আসছেন। নিয়মিত দোকানের ভাড়া পরিশোধ করে আসছেন। কিন্তু দুই মাস ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের ভাড়া নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তাঁরা তখন বিষয়টি বুঝতে পারেননি। কারণ, কর্তৃপক্ষ দুই মাস পরপর দোকানের ভাড়া নেয়। কিন্তু এবার ভাড়া বন্ধ করে দিয়ে হঠাৎ দোকান উচ্ছেদ করতে বলেছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী অন্তত ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হবে; কিন্তু তারা তা না করেই হঠাৎ উচ্ছেদের কথা বলছে। তাঁরা অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ ও সমস্যা ন্যায়সংগতভাবে সমাধানের দাবি জানান।
এদিকে গত বুধবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের সামনের এলাকা থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানাপ্রাচীরসহ দৃষ্টিনন্দন ফটক নির্মাণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধ দোকানপাট উল্লেখ করে দ্রুত অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে অধ্যক্ষের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
ওই বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজ-লাগোয়া স্থানে বাণিজ্যিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকতে পারে না। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও কলেজের সামনে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক স্থাপনা দিন দিন বাড়ছে। কলেজের ফটক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছেন। কলেজের সামনে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা শিক্ষার্থীদের চলাচলে বাধা তৈরি করেছে। তাঁরা দ্রুত এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দন ফটক ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দাবি জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল হান্নান খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো অযৌক্তিক না। তাঁদের দাবির পক্ষে শিক্ষা ও সংস্থাপন থেকে একাধিকবার চিঠিও এসেছে। কলেজের সীমানাপ্রাচীরসহ ফটকের একটি বরাদ্দও এসেছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন না হওয়ায় বরাদ্দের সেই টাকা ফিরে গেছে। এখন আবার বরাদ্দ এসেছে। কলেজের জায়গা ও সামনের দোকানগুলো ১ নম্বর খাস-খতিয়ানের জায়গা। এগুলো সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি সম্পত্তি। সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে এটি চলতে পারবে না। তাঁরা এবার সীমানাপ্রাচীরসহ ফটক নির্মাণের চেষ্টা করছেন। বরাদ্দ যেন ফিরে না যায় সে জন্যই শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি করেছেন। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জায়গায় দোকানপাট ও ব্যবসা থাকতে পারবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় কল জ র স ম বর দ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৭ বছর পর জাতীয় নির্বাচনে ফিরছে জেএসএস
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বড় আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) জাতীয় নির্বাচনের রাজনীতিতে ফিরছে। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি।
ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি—তিন আসনেই প্রার্থী দেবে দলটি। তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে জেএসএস।
২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন জেএসএসের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন হলে জেএসএস অংশ নেবে। নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ঊষাতন তালুকদার। তবে দেশের ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) প্রার্থী দীপংকর তালুকদারকে হারিয়ে জিতেছিলেন জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।
জেএসএস সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার।
জাতীয় নির্বাচনে জেএসএসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো। কেননা, ৫০ বছরের বেশি পুরোনো পাহাড়ের এই রাজনৈতিক দলের স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ প্রভাব রয়েছে।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনা কার্যত নেই। এতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও পাহাড়ে তা হচ্ছে না। এখানে অন্যতম মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকবে জেএসএস। ইউপিডিএফও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারে বলে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন ঊষাতন তালুকদার। তবে দেশের ওই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন তিনি।স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা জানান, পাহাড়ের স্থানীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখে আঞ্চলিক দলগুলো। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) না থাকায় এই দলগুলোর গুরুত্ব আরও বাড়বে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭২ সালে। সক্রিয় রাজনৈতিক দল না হলেও ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উপজাতি কল্যাণ পরিষদের’ ব্যানারে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমা। যিনি জেএসএসের প্রতিষ্ঠাতা।
পার্বত্য চুক্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ২০০৭ সালে জেএসএস ভেঙে তৈরি হয় জেএসএস (এম এন লারমা)। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইউপিডিএফ ভেঙে তৈরি হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)।
জেএসএসের সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার