যাদুকাটার ভাঙন ঠেকাতে কঠোর হতে হবে
Published: 17th, October 2025 GMT
সিলেট অঞ্চলের প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এক–দেড় দশক ধরে সেখানকার পাহাড়-টিলাগুলো উজাড় হতে শুরু করে। নদী ও খালগুলোতে শুরু হয় পাথর ও বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য। রাজনীতি ও ক্ষমতার পরিবর্তনেও বালু ও পাথর লুটপাটে কোনো পরিবর্তন নেই। সাদাপাথরের পাথর, চুনারুঘাটের মূল্যবান সিলিকা বালু লুটের পর যাদুকাটা নদীর বালু লুটের ঘটনা সামনে এল। বালুশ্রমিকদের দিয়ে মব তৈরি করে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকেও অকার্যকর করে তোলা হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই প্রাকৃতিক সম্পদ ঘিরে সেখানে পর্যটনও গড়ে উঠেছে। স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রও বলা যায় এ নদীকে। কিন্তু নদীটি থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা কেবল পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি। ১৫-২০ হাজার শ্রমিক একসঙ্গে দেড় থেকে দুই হাজার নৌকা নিয়ে গভীর রাতে অবৈধ বালু উত্তোলন করছেন। মামলা জটিলতার পর বালুমহাল ইজারা দেওয়া হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন ইজারা সীমানার বাইরে গিয়ে খাসজমি ও নদীর পাড় কেটে বালু লুট করছেন। এতে ব্যাপকভাবে নদীর পাড় ভাঙনের ফলে তীরের দিকে লাউড়েরগড় এলাকায় বিজিবির বিওপিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
বিজিবি জানায়, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি লাউড়েরগড় বিওপিতে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ও নৌযান মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেটি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের নৌকা ও শ্রমিকের তুলনায় অনেক কম। সেখানে শত শত শ্রমিক দিয়ে মব তৈরি করা হচ্ছে। ব্যাপারটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এসব ক্ষেত্রে আমরা শুধু গতানুগতিক অভিযান বা আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখি। সাদাপাথরের ঘটনায় যেভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তেমন পদক্ষেপ সব ক্ষেত্রে দেখা যায় না। শুধু অভিযানে গিয়ে শ্রমিকদের আটক, সাজা বা যন্ত্রপাতি জব্দ করলে বালু লুট কার্যকরভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রভাবশালী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে। অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। কারা অবৈধ বালু বেচাবিক্রি করছে, কোন পরিবহনে এ বালু বহন করা হচ্ছে—সেখানেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনায় বসতে হবে।
জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এখানে সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় এমন পদক্ষেপই নিতে হবে, দিন শেষে তা যেন কার্যকর ও টেকসই হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব ধ ব ল ব যবস থ পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ, ৪ হলে সভা বাতিল করল ছাত্রশিবির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ তুলে চারটি আবাসিক হলের প্রজেকশন মিটিং (পরিচিতি সভা) স্থগিত করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার রাতে শহীদ জিয়াউর রহমান হল, সৈয়দ আমীর আলী হল, নবাব আবদুল লতিফ হল ও শহীদ হবিবুর রহমান হলে প্রজেকশন মিটিং আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি বিশেষ গোষ্ঠীর চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন সকাল ১০টার দিকে আচরণবিধিতে নতুন নীতিমালা যুক্ত করেছে। সেখানে বলা হয়, হলের বাইরে থেকে চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেম আনা যাবে না। ছাত্রশিবিরের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের এই পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে তারা আজকের প্রজেকশন মিটিং স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল খালেদা জিয়া হল ও মন্নুজান হলে সভা আয়োজন করে। ওই সময় খালেদা জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাইরে থেকে চেয়ার ভাড়া করা হয়। কিন্তু হল প্রশাসন জানায়, হলের ভেতরের চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করতে হবে। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার (স্যান্ডউইচ, চকলেট, সস) আনা হলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোস্তফা কামাল আকন্দ ও অন্য কর্মকর্তারা এসে খাবার ঢোকাতে বাধা দেন।
এ ঘটনায় প্যানেলের প্রার্থী ও ছাত্রশিবির নেতারা নির্বাচন কমিশন ও হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানান।
নির্বাচন কমিশন আজ আচরণবিধির ৪ নম্বর ধারা ‘স্পষ্ট করে’ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলের অভ্যন্তরে নির্বাচনী সভায় বাইরে থেকে কোনো চেয়ার, আসবাব বা মাইক/সাউন্ডবক্স আনা যাবে না। হলের নিজস্ব আসবাব ও সাউন্ডসিস্টেম (যদি থাকে) ব্যবহার করেই নির্বাচনী সভা সম্পন্ন করতে হবে। সভায় কোনো প্রকার নাশতা বা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা যাবে না।
এর আগে হলের সভায় খাবার বিতরণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে নির্বাচন কমিশনে গত মঙ্গলবার ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল।
নির্বাচন ঘিরে তিন দিন মিছিল-সমাবেশ ও অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা
রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে তিন দিন মিছিল, সমাবেশ ও অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। আজ মঙ্গলবার বিকেলে আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৬ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৭ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তর ও চারপাশের ২০০ গজ এলাকায় সব ধরনের মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ, মাইকিং, আতশবাজিসহ ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার, অস্ত্রশস্ত্র, তলোয়ার, বর্শা, বন্দুক, ছোরা বা লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ থাকবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তাকর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই হাজার পুলিশ, ছয় প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র্যাবের সদস্য নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের কেউ কেন্দ্রের নিরাপত্তায়, কেউ ক্যাম্পাসে ও কেউ বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ দল নিরাপত্তা তদারক করবে।