সিলেট অঞ্চলের প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এক–দেড় দশক ধরে সেখানকার পাহাড়-টিলাগুলো উজাড় হতে শুরু করে। নদী ও খালগুলোতে শুরু হয় পাথর ও বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য। রাজনীতি ও ক্ষমতার পরিবর্তনেও বালু ও পাথর লুটপাটে কোনো পরিবর্তন নেই। সাদাপাথরের পাথর, চুনারুঘাটের মূল্যবান সিলিকা বালু লুটের পর যাদুকাটা নদীর বালু লুটের ঘটনা সামনে এল। বালুশ্রমিকদের দিয়ে মব তৈরি করে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকেও অকার্যকর করে তোলা হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। এই প্রাকৃতিক সম্পদ ঘিরে সেখানে পর্যটনও গড়ে উঠেছে। স্থানীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রও বলা যায় এ নদীকে। কিন্তু নদীটি থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা কেবল পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও চরম অবনতি। ১৫-২০ হাজার শ্রমিক একসঙ্গে দেড় থেকে দুই হাজার নৌকা নিয়ে গভীর রাতে অবৈধ বালু উত্তোলন করছেন। মামলা জটিলতার পর বালুমহাল ইজারা দেওয়া হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন ইজারা সীমানার বাইরে গিয়ে খাসজমি ও নদীর পাড় কেটে বালু লুট করছেন। এতে ব্যাপকভাবে নদীর পাড় ভাঙনের ফলে তীরের দিকে লাউড়েরগড় এলাকায় বিজিবির বিওপিসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।

বিজিবি জানায়, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি লাউড়েরগড় বিওপিতে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ও নৌযান মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেটি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের নৌকা ও শ্রমিকের তুলনায় অনেক কম। সেখানে শত শত শ্রমিক দিয়ে মব তৈরি করা হচ্ছে। ব্যাপারটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এসব ক্ষেত্রে আমরা শুধু গতানুগতিক অভিযান বা আইনি ব্যবস্থা নিতে দেখি। সাদাপাথরের ঘটনায় যেভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তেমন পদক্ষেপ সব ক্ষেত্রে দেখা যায় না। শুধু অভিযানে গিয়ে শ্রমিকদের আটক, সাজা বা যন্ত্রপাতি জব্দ করলে বালু লুট কার্যকরভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রভাবশালী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে। অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। কারা অবৈধ বালু বেচাবিক্রি করছে, কোন পরিবহনে এ বালু বহন করা হচ্ছে—সেখানেও ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনায় বসতে হবে।   

জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এখানে সমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় এমন পদক্ষেপই নিতে হবে, দিন শেষে তা যেন কার্যকর ও টেকসই হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অব ধ ব ল ব যবস থ পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ১৬ মাসে খুলনায় ট্রিপল ও ডাবলসহ ৪৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০টি। চলতি নভেম্বর মাসেই সাতজনকে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার (৩০ নভেম্বর) খুলনার আদালত পাড়ায় প্রকাশ্যে দুইজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইদিন রাতে নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় আরো এক যুবককে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

একের পর এক হত্যাকাণ্ডে ভয় আর আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা। দিন-দুপুরে আদালত এলাকার মতো জনবহুল জায়গায় হত্যাকাণ্ড স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

আরো পড়ুন:

আলোচিত রায়হান হত্যার রায় ৭ জানুয়ারি

খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন

পুলিশের তথ্য বলছে, গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারের কালভার্ট এলাকায় বাড়ির মধ্যে নানি মহিতুন্নেসা (৫৫), তার নাতি মুস্তাকিম (৮) এবং নাতনি ফাতিহাকে (৬) হত্যা করা হয়। ওই রাতেই করিমনগরে নিজ বাড়ির ভেতর আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ২৭ নভেম্বর রাতে খালিশপুর ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় যুবক ইমানকে। 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) কর্মচারী মো. মহসিন শেখ লিটুর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ২৮ অক্টোবর ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা খুঠিরঘাট এলাকার ওই বাড়িতে গুলিবর্ষণ হয়। তবে, কেউ আহত হননি।

গত ৯ অক্টোবর সকালে খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় সবুজ খান (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে খুলনার রূপসা উপজেলায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমরান হোসেন মানিক (৩৪) নামে এক যুবক নিহত হন।

সে সময় রূপসা থানার ডিউটি অফিসার জনি আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাতে মানিক একটি ভ্যানযোগে ইলাপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করেন। তারা মানিককে লক্ষ্য করে পরপর দুইটি গুলি ছোড়েন। একটি গুলি মানিকের মাথায় লাগে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।”

এর আগে, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা মহানগরীর রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে প্রকাশ্যে এক যুবককে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ওই যুবকের নাম নিক। তিনি নগরীর কালীবাড়ী এলাকার মন্টু দাশের ছেলে।

একের পর হত্যাকাণ্ডে উদ্বিগ্ন নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ধারাবাহিক হত্যা ও সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। এছাড়া, আইনশৃখলা পরিস্থিতি অবনতির প্রতিবাদে গত শনিবার নগরীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম। তার একদিন পরেই রবিবার দুটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটল। এর আগে, খুলনার আদালত চত্বর থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছিল পুলিশ। গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে বস্তুটি পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে চরমপন্থিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল খুলনা। নতুন শতাব্দির শুরুতেও তা বহাল ছিল। বোমা মেরে অথবা গুলি করে মানুষ হত্যা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারান সাংবাদিকসহ অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার দক্ষিণাঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব গঠন করে। যৌথবাহিনীর সমন্বয়ে শুরু হয় অপারেশন ক্লিনহাট, অপারেশন স্পাইডার ওয়েব। এসব অপারেশন অধিকাংশ চরমপন্থি সন্ত্রাসী নিহত ও অনেকে গ্রেপ্তার হন। ধীরে ধীরে শান্তি ফিরে আসে খুলনায়। খুলনার আইনশৃখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আবারো বিশেষ অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছেন নাগরিক নেতারা।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, “একের পর এক হত্যাকাণ্ড সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে। এ থেকে খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র স্পষ্ট হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমনে পুলিশ প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।” 

খুলনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি বিশেষ করে গতকাল রবিবার আদালত অঙ্গনে দিনে দুপুরে লোমহর্ষক জোড়া খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু এবং সদস্য সচিব শেখ নুরুল হাসান রুবা। আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদারসহ খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “বেশিরভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। রবিবার দুপুরে দুই হত্যার সঙ্গে জড়িতরাও দ্রুত গ্রেপ্তার হবেন।”

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই
  • নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে রোহিঙ্গা যুবক আটক
  • ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে শোকজ ছাড়াই প্রার্থিতা বাতিল’
  • মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত খুলনা: ১৬ মাসে ট্রিপল-ডাবলসহ ৪৮ খুন
  • হবিগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত
  • প্রতি ভোটকক্ষে ২টি গোপন বুথ থাকবে: ইসি সচিব