ফকির লালন শাহ: জীবন, দর্শন ও ভাবচর্চার প্রাসঙ্গিকতা
Published: 17th, October 2025 GMT
ফকির লালন শাহ পহেলা কার্তিক, বাংলা ১২৯৭ সালে (১৭ অক্টোবর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ) তিরোধান করেন। তাঁর অনুরাগী ও অনুসারীরা এই দিনটিকে শোক দিবস হিসেবে পালন করেন। লালন তাঁর ভাব-শিষ্য ও ভক্তদের নিয়ে জীবদ্দশায় দোলপূর্ণিমার তিথিতে সাধুসঙ্গ করতেন। তাঁর তিরোধানের পর থেকে ভক্তরা দোলপূর্ণিমার সঙ্গে তিরোধানের তিথিতেও সাধুসঙ্গের আয়োজন করে আসছেন।
লালন শাহ কবে, কোথায়, কীভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন—সেই তথ্য কারোরই জানা নেই। তিনি নিজে এ সম্পর্কে কখনো কাউকে কিছু বলেননি। অথচ তাঁর তিরোধানের পর একদল তাঁকে হিন্দু আর আরেক দল তাঁকে মুসলমান প্রমাণ করতে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। ফকির লালন শাহকে হিন্দু বা মুসলমান প্রমাণ করারটা বিপজ্জনক। কারণ এসবের মধ্য দিয়ে যে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা লালন আজীবন করেছেন, সেই সাম্প্রদায়িকতাতেই তাঁকে আটকে ফেলা হয়। লালনের দর্শনে যে কয়েকটি ভিত্তিমূল রয়েছে, তার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, জাতপাতবিরোধী, বর্ণবাদবিরোধী লিঙ্গীয় পরিচয়-বিরোধী অবস্থান অন্যতম। কার্যত যে কোনো পরিচয়বাদী অবস্থানেরই বিরোধিতা লালন আজীবন করেছেন, যা তাঁর দর্শনে বা গানে বা কালামে উঠে এসেছে।
লালন তাঁর জন্মের কোনো হদিসই রেখে যাননি। এই সত্যকে জানা ও প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমেই তাঁর নামে সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিপরীতে দাঁড়ানো সম্ভব। তাঁকে হিন্দু বা মুসলমান—কোনোটাই বানানো চলবে না। সাম্প্রদায়িকতাসহ সকল প্রকার পরিচয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই লালনের জীবন ও ভাবচর্চার মূল দরজা উন্মোচিত হবে।
লালনের জন্ম সম্পর্কে যেটুকু জানা যায়—তিনি কালীগঙ্গা নদীতে ভেসে এসেছিলেন। কারিগর মলম শাহ তাঁকে অজ্ঞান ও অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন। মলম শাহ ও তাঁর স্ত্রী মতিজান সেবা-শুশ্রূষা করে তাঁকে নতুন জীবন দেন। এরপর তিনি তাঁদের ছেড়ে যাননি। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তাঁর কবরের পাশেই ফকির মতিজানকে কবর দেওয়া হয়।
ছবি নিয়ে বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণা
ছেঁউড়িয়ায় নন্দলাল বসুর আঁকা ছবির এক বিরাট মুরাল রয়েছে। কিন্তু এটি লালনের আসল ছবি নয়, এটি শিল্পীর কল্পনা। যারা বিষয়টি জানেন না, তারা ধরে নেন এটিই লালন শাহের ছবি। সত্য হলো, লালনের কোনো ছবি নাই; তিনি কোনো ছবি রেখে যাননি। তাছাড়া লালনপন্থী সাধনায় ছবি পূজা বা কবর পূজার কোনো বিধান নেই। এই ধারায় গুরু ভজনা করা হয় এবং তারা নিজ নিজ গুরুর রূপ ছাড়া অন্য কোনো রূপ ভজনা করেন না।
লালন ‘বাউল’ নন, তিনি ‘ফকির’
লালনকে ‘বাউল’ বা ‘বাউল সম্রাট’ আখ্যা দিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে নেশাদ্রব্য গ্রহণ, গুহ্য দেহবাদীচর্চার ধারা এবং জগত-সংসার থেকে পলাতক উদাসীন জীবনযাপনের রোমান্টিকতাকে সহজে ন্যায্য ও বলবৎ রাখা যায়। কিন্তু লালন চিন্তা বা ভাবের ক্ষেত্রে শ্রীচৈতন্যের পর যে বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন, তা অনুধাবন করতে হলে তাঁর সাধনার ধারা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলে চলবে না। লালন নিজেকে কখনোই ‘বাউল’ বলেননি। বাউলরা তাঁর গান করেন, তাঁকে ভালোবাসেন—এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি বাউল নন। লালনপন্থীরা নিজেদের ‘ফকির’ বলেন। তাঁরা নদীয়ার ভাবুক, সাধক। তাঁরা শুধু লালনগীতি গেয়ে জীবনযাপন করেন না। লালনের ঘরে গুরু ও ঐতিহ্য পরম্পরায় জীবনচর্চার সুনির্দিষ্ট কিছু বিধিবিধান বা ধারা আছে। লালনপন্থীরা হোসেন শাহের আমলে শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক ও ভাবগত আন্দোলনের অভিমুখ ধারণ করেন; তাঁরা নদীয়ার ভাবের উত্তরাধিকারী।
নদিয়ার ভাবান্দোলন
বাংলার ভাবান্দোলন ও ভাবচর্চার সবচেয়ে ঊর্বর ক্ষেত্র হলো কুষ্টিয়া ও তার সন্নিহিত অঞ্চল—যা ১৯৪৭ সালের আগে সীমান্তের দুই পাশের ভূখণ্ড নিয়ে ‘নদিয়া’ নামে পরিচিত ছিল। ‘নদিয়া’ শব্দটি কখনোই ভৌগোলিক অর্থে ব্যবহৃত হতো না, এটি বরং একটি ভাবচিহ্ন, যার উৎপত্তি সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে।
সুলতানি আমলে ইসলাম জাতপাত-বিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে যেমন অনুপ্রাণিত করে। এই রাজনৈতিক আবহে সমাজের ক্ষমতার সম্পর্কে যে রূপান্তর ঘটছিল, তারই পরিণতি হিসেবে নদীয়ার তিন পাগলের আবির্ভাব— চৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্য। তাঁদের আবির্ভাবের আখ্যান পুরোপুরি জানা না থাকলেও, নদীয়ার বিপ্লব সুলতানি আমলেই ঘটেছিল।
দেহ, পরম ও ‘আমি’
কল্পনা, চিন্তা ও চর্চায় দেহ বা শরীর মুখ্য হলেই তাকে ‘তন্ত্র’বলা যায় না। ‘দেহ’বা ‘শরীর’ নিয়ে কোনো চর্চার কথা শুনলেই অনেকে একে তান্ত্রিক ব্যাপার বলে ভুল করে। দেহবাদী জীবনযাপন, সাধনপ্রণালী বা ধর্মচর্চা নিয়ে সুশৃঙ্খল গবেষণা আজও হয়নি। পাশ্চাত্যের প্রাচ্যবাদী লেখালেখির প্রভাবে এই অঞ্চলের সাধকদের সাধনপ্রণালী বোঝা কঠিন হয়েছে। এভাবে প্রাচ্যবিদ্যাকেন্দ্রিক বা বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তন্ত্রকে নিছকই একটি গুহ্য সাধন পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণ করে, সমাজে ও ভাবচর্চার বৃহত্তর পরিসরে লালনকে ‘বর্তমান’ করে তোলার পথ রুদ্ধ করা হয়। তাকে সমাজের বাইরে একটি প্রান্তিক বিষয়ে পরিণত করা হয়, যেন গুহ্য যৌনচর্চা ছাড়া তাঁর আর কোনো জীবন বা অনুসরণীয় দর্শন ছিল না। যারা লালনকে এক কথায় ‘তান্ত্রিক’ বলেন, তারা তাঁকে একজন যৌন সাধকের বেশি মর্যাদা দেন না। পশ্চিমবঙ্গের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও গৌতম ঘোষের মতো তারাও সেই নিন্দনীয় কাজটই করেন। লালনকে ‘তান্ত্রিক’ আখ্যা দিলে ‘তন্ত্র’ সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত অস্পষ্ট, অপরিচ্ছন্ন ও আজগুবি ধারণার ফ্রেমে তাঁকে আবদ্ধ করা হয়। অথচ, ফকির লালন শাহের দেহ সম্পর্কে একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং শরীরের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও চর্চা রয়েছে। এর মধ্যে নারী-পুরুষের সম্পর্কের দিক যেমন রয়েছে, তেমনি খাদ্যব্যবস্থা, সেবা আয়োজনের রীতি এবং সেবা দেওয়া-নেওয়ার বিধি-বিধানও অন্তর্ভুক্ত। এই দিকগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে গুহ্য যৌনচর্চার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হাস্যকর; লালনের ভাবগত বৈপ্লবিক চিন্তার খবর নেওয়া তো আরও দূরের বিষয়। এর চরম পরিণতি হয়—গাঁজা, নেশাদ্রব্য গ্রহণ এবং নারীসঙ্গলোভী কামার্ত জীবনের পক্ষে লালনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা।
জীবদেহ পরমকে উপলব্ধির স্রেফ ‘উপায়’ বা ‘হাতিয়ার’ নয়, বরং জীব ও পরমের এক যুগল লীলাভূমি—নদিয়ার ভাবচর্চা এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছে। এই পথেই জীবের জীবন ও পরমের উপলব্ধির সংযোগ অনুসন্ধান করা সম্ভব। জীব ও পরম তত্ত্বগতভাবে অদ্বৈত—তারা এক, দুই নয়। তবে একইসঙ্গে তাদের মধ্যে পার্থক্যও বিদ্যমান। কিন্তু এই সম্পর্কের স্বরূপ কেবল চিন্তা বা বুদ্ধির দ্বারা নির্ণয় করা যায় না; তা হলো ‘অচিন্ত্য’—যা চিন্তার অতীত, ধারণার অগম্য।
চিরাচরিত তন্ত্র চর্চাকারী শক্তি উপাসক, জীবাবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অলৌকিক শক্তি সঞ্চয় করতে পারেন, কিংবা কেবল তুরীয়ানন্দ লাভই তাঁর লক্ষ্য হতে পারে। এই ধারায় তাঁর কামনা বা ইচ্ছা এবং তাঁর কাম্যবস্তু দুটি বিচ্ছিন্ন জগত হিসেবে উপস্থিত হয়, আর মাঝখানে থাকে তাঁর দেহ। উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি নিজের বা অপরের শরীরকে অপরিহার্যভাবে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করেন। শরীরকে স্রেফ উপায়ে পর্যবসিত করার মাধ্যমে তিনি নিজের ইচ্ছা ও কামনার দাসত্ব স্বীকার করেন।
নদিয়ার ভাবুকদের মতে, শরীর কেবল ব্যবহার্য যন্ত্র বা হাতিয়ার নয়। ফকির লালন শাহ নির্বিচারে এই পথকে তাঁর নিজের পথ হিসেবে গ্রহণ করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘ভাব দিয়ে ভাব নিলে পরে তবেই রাঙ্গা চরণ পায়’। ভাব না থাকলে তন্ত্র বা ভক্তি—কোনোটাই ফলপ্রসূ হয় না। রসতত্ত্ব থেকে নদিয়ার ভাবান্দোলনে প্রবেশের এটিই মূল দ্বার।
শ্রীচৈতন্যের ‘অচিন্ত্যভেদাভেদ’ অবস্থান থেকে নদিয়া সরে আসেনি, তবে গৌড়ীয় বৈষ্ণবতত্ত্বের প্রতি তাদের আপত্তি হলো—পরমের আকাঙ্ক্ষায় তারা জীবের প্রকৃতি বা দাবিকে অস্বীকার করে, ‘কাম’ বর্জন করে শুধু বিশুদ্ধ প্রেমের কথা বলে। চৈতন্য জীব ও পরমের যে সম্পর্ককে ‘অচিন্ত্য’ বলেছেন, নদিয়ার কাছে তা আসলে ‘বিষ আর অমৃতের সম্বন্ধ’—যার প্রমাণ লালনের গানে, ‘বিষামৃতে আছে রে মাখা জোখা’।
নদিয়া বারবার সতর্ক করেছে যে কাম ছাড়া প্রেম নাই, কিন্তু দেহচর্চার নামে ‘খেলা’ বিপজ্জনক—যা অত্যন্ত কম মানুষেরই সাধ্য। অর্থাৎ, তিনি গুহ্য সাধনা চর্চাকে উৎসাহ দেননি, আবার বৈষ্ণব গোস্বামী বা রাধাকৃষ্ণের মতো শুদ্ধ প্রেম বা শুদ্ধ ভক্তির ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এর থেকে বোঝা যায়, তিনি প্রাচীন তন্ত্র থেকে যেমন ভিন্ন, তেমনি গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের ধারা ও ব্যাখ্যাকেও গ্রহণ করেননি। এছাড়া, গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের বিরুদ্ধে শ্রীচৈতন্যকে ব্রাহ্মণ বানিয়ে নদিয়ার জাতপাত ও নারী-পুরুষ ভেদবিরোধী আন্দোলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
নদিয়ার দাবি হলো—শরীর কেবল উপায় হতে পারে না, কারণ শরীরের মধ্যে যিনি বাস করেন, তিনিই ‘আমি’। এই ‘আমি’ একইসঙ্গে কর্তা (সাংখ্য দর্শনের পুরুষ বা পরম) এবং জীব। কিন্তু জীবদেহের বাইরে এই কর্তার কোনো আলাদা অস্তিত্ব নেই। এই সত্তা পরম, কারণ তাকে কেবল জীবদেহ হিসেবে সীমাবদ্ধ করা যায় না। মানুষ শুধু জীব নয়, সে একইসঙ্গে পরমার্থিক। এই দিব্য বা দিব্যগুণসম্পন্ন সত্তার বর্তমানতা কেবল জীবরূপেই। জীবের শরীরের বাইরে এর কোনো বিমূর্ত, রহস্যময়, বা পরাবিদ্যামূলক অস্তিত্ব নেই। এই দিব্যতা একান্তই রক্তমাংসের মানুষ রূপে হাজির। এই কর্তা কেবল ভাবচর্চার মাধ্যমেই নিজের জীবের চরিত্রকে অতিক্রম করে দিব্যরূপ পরিগ্রহণ করতে পারে। এই রূপান্তরই নিজের ও বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্কের রূপান্তরের প্রাথমিক শর্ত। নদিয়া এই বর্তমানেরই ভজনা করে। নদিয়ার ভাষা মূলত মানুষেরই ভজনা—যা কোনো অনুমানের ওপর চলে না।
পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের সঙ্গে সংযোগ
মানুষ দিব্যশক্তিসম্পন্ন, এবং তার দেহেই পরম বা ‘মনের মানুষে’র বাস। মানুষের নিজের বাইরে বিমূর্ত উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য সন্ধানের কোনো প্রয়োজন বা সুযোগ নেই, বরং তা বিপজ্জনক। নদিয়ার কাছে দেহ মুখ্য, কারণ এই দেহই ‘বর্তমান’—যা একইসঙ্গে জীব ও পরম, বা পুরুষ ও প্রকৃতির ঐক্য। এই বৃহত্তর অর্থে, দেহকে বাদ দিয়ে নদিয়ার কোনো সাধনা নেই।
এই দেহবাদ প্রাচীন তন্ত্র ও গুহ্য সাধনা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ এখানে দেহ কেবল মানুষের শরীর নয়; এই দেহ প্রকৃতির অংশ এবং একইসঙ্গে তা প্রকৃতি বা ব্রহ্মাণ্ডস্বরূপ। দেহকে যদি আমরা শুধু ভোগের উপায় মনে করি, তবে আমরা কেবল নিজেদেরই নয়, প্রকৃতির বাসভূমিকেও ধ্বংস করি। আমরা পরিবেশ, প্রাণ ও প্রাণের বৈচিত্র্য ধ্বংস করি। এই কারণেই নদিয়ার ভাব সরাসরি একালের পরিবেশ, প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করা যায়। নদিয়া নিঃসন্দেহে দেহবাদী, কিন্তু তার অনুমান, সিদ্ধান্ত ও করণকর্ম স্বতন্ত্র।
জাতপাত, নারী-পুরুষ ভেদাভেদের বিরুদ্ধে
চৈতন্যের সময়ে প্রভাবশালী ধারার মূল অনুমান ছিল—পূর্বজন্মে পাপের ফলস্বরূপ মানুষ বর্তমান জন্মে জন্ম নিয়েছে অর্থাৎ মনুষ্য জন্ম একটি শাস্তি, পাপের প্রায়শ্চিত্ত। তাদের মতে, মোক্ষ বা মুক্তির একমাত্র উপায় হলো—জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নমঃশূদ্র, শূদ্র বা যেকোনো বর্ণের অবস্থাকে অলঙ্ঘনীয় বলে গণ্য করা; বর্তমান অবস্থাকে মেনে নিয়ে উচ্চবর্ণের বিধিবিধান বিনা বিচারে পালন করে জীবন কাটানো, যাতে পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে না হয়। নদিয়া এই অনুমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। জাতপাত, নারী-পুরুষ ভেদাভেদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের উৎস এখানেই নিহিত।
লালন ফকির ছিলেন, তবে উদাসীন ছিলেন না। সমাজে বিদ্যমান জাতপাত, শ্রেণী ও নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়ে তিনি সচেতন ও সোচ্চার ছিলেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদের বিরোধিতায় তাঁর যুক্তি হলো—‘ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল, চামার, মুচি সকলেই এক জলে সূচি’। রজোবীজের প্রাকৃতিকতায় সব মানুষের সূচনা ঘটেছে ‘একই জলে’। লালনপন্থীরা মানুষের ভজনা করেন; কিন্তু তিনি বুর্জোয়া ‘মানবতাবাদ’ বা ‘মানবধর্ম’ প্রচার করেননি। তাঁর বিরোধিতা ছিল ভেদবুদ্ধির রাজনীতির। তিনি জাতি, বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলেছেন—
‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে
লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে’।।
তাঁর গানে আরও এসেছে—
‘যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান, নারীর তবে কি হয় বিধান?
বামন চিনি পৈতা প্রমাণ, বামনী চিনি কিসে রে’।।
গুরুবাদ ও সাংখ্য দর্শনের প্রভাব
গুরুবাদ লালন দর্শনের অন্যতম দিক। গুরুর প্রতি ভক্তি ও নিষ্ঠা ছাড়া পরমের সন্ধান সম্ভব নয়। এই গুরুতেই পরমের অস্তিত্ব বিরাজমান। লালনের দর্শন সনাতন ধর্ম, বৈষ্ণব মতবাদ, বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদ এবং ইসলামের সুফি মতবাদের আধ্যাত্মিক মেলবন্ধন। তবে এতে সাংখ্য দর্শনের বিশেষ প্রভাবও লক্ষণীয়। সাংখ্য দর্শনের মূল ভিত্তি হলো অস্তিত্বের দুটি উপাদান—পুরুষ ও প্রকৃতি (পরমাত্মা ও জীবাত্মা)।
লালনের মতে, শরীর কেবল উপায় মাত্র নয়, শরীরের মাঝেই ‘আমি’র বাস। সেই ‘আমি’ একইসঙ্গে কর্তা (পুরুষ/পরমাত্মা) এবং প্রকৃতি বা জীবসত্তা। জীবদেহের বাইরে এই কর্তার আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। এই সত্তা এমন যে, জীবের প্রবৃত্তি এবং দিব্যগুণ একইসঙ্গে বিরাজমান। ভাবচর্চার মধ্য দিয়ে এই কর্তা জীবের চরিত্র অতিক্রম করে দিব্যরূপ পরিগ্রহ করতে পারে।
বর্তমানেই পরম
ফকির লালন শাহ ‘বর্তমান’ বা বাস্তব জগতকে কখনো ত্যাগ করতে বলেননি। এখানে শিক্ষণীয় দিকটি হলো, শুধু আইন প্রণয়ন বা বিপ্লব ঘটিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি উৎখাত করা সম্ভব নয়, কারণ ব্যক্তিগত সম্পত্তি ‘আমি’র সঙ্গে তা নিবিড়ভাবে জড়িত। ‘আমি’র বিলোপ না ঘটলে জগৎকে ব্যক্তিগতভাবে ভোগদখল করার বাসনা থেকেই যায়। বাইরের বস্তু বা বিষয়কে আমির অধীনস্থ রাখার এই তাগিদ বহাল থাকে, যা ব্যক্তিগত সম্পত্তির অস্তিত্বের শর্ত বজায় রাখে। যেহেতু ‘আমি’ থেকে যায়, তাই যেকোনো সুযোগে নিজেকে সম্পত্তির দখলদার বা মালিক হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার পথ তৈরি হয়। আইন বা ডিক্রি জারি করে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ ঘোষণা করলে তার বাসনা উবে যায় না; বরং প্রবল শক্তিতে প্রত্যাবর্তন করে। সুতরাং, জগতের সঙ্গে আমাদের বৈপ্লবিক রূপান্তরের প্রশ্নটি নিছক আইনি সম্পর্ক পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়, বরং এই ‘আমি’র সঙ্গে মোকাবিলার এক গভীর প্রশ্ন।
নদিয়ার রাজনীতির অন্যতম মূল ভিত্তি হলো সেই ‘আমি’ বা কর্তাকে চেনা ও জানা, যিনি বিশ্বজগতের সঙ্গে বুদ্ধি, ভাব, প্রজ্ঞা, ভক্তি, ভোগ এবং উৎপাদনের বৈষয়িক সম্পর্ক স্থাপন করেন। নদিয়ার ঘোষণা হলো—‘আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে, দিব্যজ্ঞানী সেই হয়েছে, কুবৃক্ষে সুফল ফলেছে, কীর্তিকর্মার কী কারখানা!’
এই আত্মতত্ত্ব কোনো মরমি ব্যাপার বা রহস্যময় আত্মার অনুসন্ধান নয়। এটি হলো মানুষ ও প্রকৃতির উৎপাদন ও প্রজনন প্রক্রিয়ার সেই মুহূর্তটিকে প্রত্যক্ষ ও উপলব্ধি করার আকাঙ্ক্ষা, যা বিশেষত মানুষের মাধ্যমে ঘটে। এই উপলব্ধিকেই ‘সহজ মানুষ’ বলা হয়েছে। কারণ, এই মহাজন প্রকৃতির সঙ্গেই ‘সহ’ বা একসঙ্গে উৎপন্ন হন, অর্থাৎ তাঁর আবির্ভাব প্রাকৃতিকতার মধ্য দিয়ে ঘটে।
মানুষ ভজনা— বস্তু ও ভাবের অদ্বৈত
এই ঘোষণার মধ্যে বৈপ্লবিক রূপান্তরের রাজনীতি নিহিত, যা পাশ্চাত্য চিন্তা কাঠামো দিয়ে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। নদিয়ায় বস্তু ও ভাবের কোনো আগাম বিচ্ছেদ অনুমান করা হয় না। ‘যা ভাণ্ড তাই ব্রহ্মাণ্ড’—এই ধারণার ভিত্তিতে ‘আমি’ বা মানুষের শরীরের অন্তর্গত অবিচ্ছিন্ন কর্তার রূপান্তর একইসঙ্গে জগতেরও রূপান্তর ঘটায়। অন্যদিকে, জগতের রূপান্তরও কর্তাসত্তার মধ্যে পরিবর্তন আনে।
যে মানুষ নিজেকে ‘আমি’ বলতে পারে এবং চাইলেই জগতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলানোর কর্তা হতে পারে, তাঁকে জানা বা আত্মতত্ত্ব লাভ করাই নদিয়ার ভাবের গোড়ার কথা। তবে এটি স্রেফ ভাববাদী ব্যাপার নয়; কীভাবে এই ‘কর্তা’ রজোবীজে বর্তমান হলেন, সেই বস্তুগত সত্তাটিও একইসঙ্গে জানা জরুরি। অর্থাৎ তাঁর বস্তুগত সত্তা থেকে তাঁর ভাবের সত্তা আলাদা কিছু নয়। এ কারণেই তাঁর ভজনা একইসঙ্গে শরীরসম্পন্ন মানুষেরই ভজনা—‘ভবে মানুষগুরু নিষ্ঠা যার, সর্বসাধন সিদ্ধ হয় তার।’
নদিয়া কর্তাগুণসম্পন্ন মানুষের ভজনার কথা বলে। এই কর্তাই বিদ্যমান জাগতিক সম্পর্ককে রূপান্তর ঘটাতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থার বৈপ্লবিক রূপান্তরের রাজনীতিতে ব্যক্তির রূপান্তরকে প্রধান বিষয় হিসেবে গণ্য করার শিক্ষা আমরা ফকির লালন শাহের দর্শন থেকে পেতে পারি।
‘জ্যান্তেমরা’ ও কর্তাসত্তার রাজনীতি
লালন সাধকদের ‘জ্যান্তেমরা’ বা মৃত্যুর আগেই মরে যাওয়ার চর্চা করতে বলেন। এর প্রাথমিক লাভ হলো মানুষের আর মরণের ভয় থাকে না। মরণের ভয়ই পরকালের ভয় তৈরি করে, যার ফলস্বরূপ মানুষ ধর্মবাদী বা পরকালবাদী মোল্লা-পুরোহিতের বিধান মেনে চলতে বাধ্য হয়।
‘জ্যান্তেমরা’র আক্ষরিক অর্থ জীবিত থেকেও মৃত হওয়ার সাধনা করা। এর অর্থ হলো জীবের জীবমূলক বাসনাকে দমন করা। এতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে লালন জীবের জীবনকে অস্বীকার করছেন, কিন্তু আসলে তা নয়। লালন ‘বর্তমান’কে চর্চা করেন, তাই তাঁর কাছে জীবের জীবন ছাড়া মানুষের অন্য কোনো জীবন সম্ভব নয়—এই কাণ্ডজ্ঞান ছিল। বরং তাঁর মৌলিক প্রস্তাব হলো, জীবের জীবনই সাধনার ক্ষেত্র, কারণ যাকে ‘পরম’ বা ‘পরমার্থিক সত্য’ বলা হয়, তার আস্বাদন একমাত্র জীবের জীবনেই সম্ভব। অতএব, ‘জ্যান্তেমরা’র অর্থ জীবের জীবনকে অস্বীকার করা নয়; বরং জীবজীবনের সত্যকে নিঃশর্তে মেনে নেওয়া। জীবের জীবনে পরমকে ‘বর্তমান’ করে তোলার জন্যই এই সাধনা করতে হয়।
জীবকে মরার সাধনা করতে হয়, অর্থাৎ জীবমূলক কামনাবাসনা ত্যাগ করার দরকার হয়, কারণ মানুষ কেবল ‘জীব’ নয়। মানুষ এমন এক জীব, যার মধ্যে পরমার্থিক সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে বর্তমান করতে হলে জীবমূলক কামনাবাসনার জায়গায় পরমের আকাঙ্ক্ষা বা পরমার্থিক বাসনার চর্চা করা জরুরি। বিদ্যমান ব্যবস্থার রূপান্তর কামনা করা বাংলার ভাবুকতার দিক থেকে একটি পরমার্থিক বাসনা।
অন্যদিক থেকে, জীবের বাসনা মূলত ভোগের বাসনা। সুতরাং, জ্যান্তেমরার অর্থ হলো মানুষের জীবনকে ভোগীর জীবনে পর্যবসিত হতে না দেওয়া। ভোগের জীবন ত্যাগ করার অর্থ হলো জগতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে নতুনভাবে বিন্যস্ত করা। জগত শুধু ভোগের বিষয় নয়—এই শিক্ষাই দেওয়া। জগত মানুষের থেকে আলাদা থেকে কেবল ভোগের জন্য হাজির—এই পুঁজিবাদী ভাবনা কেবল পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ নয়, পরিবেশ, প্রাণ ও প্রাণের বৈচিত্র্য বিনাশের কারণও এই জীবমূলক ভোগী বাসনার মধ্যে নিহিত।
দর্শন বা চিন্তাকে ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বিচার না করলে মানব ইতিহাসের বাঁক ও চিন্তার বিবর্তনকে অস্বীকার করা হয়। চিন্তার বিবর্তন সর্বদা নির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে, আর সেই ইতিহাসের পথ ধরেই ফকির লালন শাহের দার্শনিক আবির্ভাব। বাংলার বস্তুবাদী চিন্তার ধারা মূলত তান্ত্রিক চিন্তা ও চর্চার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে, যেখানে মানুষ বলতে দেহসম্পন্ন মানুষকে বোঝানো হয়—দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিমূর্ত চিন্তাশীল সত্তাকে নয়। এই গভীর বিচারের অভাবে গণমানুষের বস্তুবাদী চিন্তার শক্তিশালী স্রোত আমাদের নজরের বাইরে চলে যায়।
আমাদের শরীর ও অন্যদের শরীরকে কীভাবে দেখব ও বিচার করব—তার সঙ্গে নিজের শরীরের সঙ্গে সজ্ঞান সম্পর্ক রচনার প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই সম্পর্ক রচনার জন্য নতুন কর্তাসত্তার উদ্বোধন জরুরি। এটি ঘটাতে গেলে সেই সকল চিন্তা ও চর্চার ধারাকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন, যারা ‘দেহ’ বা ‘শরীর’কে শুধু ক্ষমতা চর্চার হাতিয়ার গণ্য করে।
নদিয়ার দর্শনে দেহ কেবল রক্তমাংসের মানুষ নয়—পুরা প্রকৃতিও বটে, কারণ মানুষ এই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নয়; সে প্রকৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। মানুষ তার সামাজিক শরীর থেকেও আলাদা নয়। অর্থাৎ, উৎপাদন সম্পর্কের দিক থেকেও মানুষ সমাজদেহের অবিচ্ছেদ্য বিষয়। সম্পর্কের এই নিত্য রূপান্তরশীল জীবন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই নদিয়া বৃহত্তর অর্থে ‘দেহ’ ব্যাপারটি কী, তা লালন মূর্ত করেছেন।
ফকিরের জীবন কেবল জীবের জীবন নয়, তাঁর সাধক জীবন; আর সাধনাই তাঁর প্রকৃত পরিচয়। যে সাধনার মূলে রয়েছে যে কোনো পরিচয়বাদী রাজনীতির বিপরীতে গণমানুষের বা গণপরিসরের রাজনৈতিক ধারা। লালন যেমনটা তাঁর আখড়ায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই আখড়ার গণপরিসর আজও বিদ্যমান। লালন দেখিয়েছেন, পরিচয়বাদী অবস্থানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বিভক্তি আসে জাতের নামে, বর্ণের নামে, ধর্মের নামে, লিঙ্গীয় পরিচয়ের নামে। এর বিপরীতে লালনের গণরাজনৈতিক ধারার এ সময়ে বুঝতে পারা জরুরি, যেখানে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সেই ধারার একটি প্রকাশ আকারে হাজির হয়, যেখানে গণক্ষমতা, গণশক্তি ও পরিচয়ের ভিন্নতা সহকারে সকল স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখা যায়। তবে সেই গণশক্তি যেহেতু কোনো কাঠামো অবস্থান নেওয়ার সুযোগ পায়নি, অথবা বলা যায় বিদ্যমান ব্যবস্থা সেই অবস্থান নিতে দেয়নি; তাই গণপরিসর অল্প কয়েকদিনেই ভেঙে পড়ে। লালনপন্থীদের আখড়ায় সেই গণপরিসর কেমন হতে পারে, সেটি ক্ষুদ্র পরিসরে অন্তত দেখা সম্ভব। সেখানে সবাই একক স্বাধীন সত্তা, আবার সবার ঐক্যবদ্ধ একক সত্তাও বিদ্যমান। লালনের রাজনৈতিক-দার্শনিক তাৎপর্য যত বেশি নিজেদের কাছে আমরা পরিষ্কার করে তুলব, ততই ফকির লালন শাহ আমাদের জন্য ‘বর্তমান’ হয়ে উঠবেন এবং এ সময়ের লড়াই-সংগ্রামের জন্য প্রাসঙ্গিক হবেন।
তথ্যসূত্র
১.
২. ফরহাদ মজহার, নদিয়া ও ফকির লালন শাহ [চিন্তা]
ঢাকা/ঢাকা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ও ভ বচর চ র র র প ন তর র প ন তর র জ ব র জ বন স ব ক র কর পরম র থ ক জ ব ও পরম গ রহণ কর একইসঙ গ র র জন ত র জন ত র র জন ত ক প রক ত র ম সলম ন অবস থ ন ব যবস থ উপলব ধ জ বন ক র বস ত অন ম ন র ব সন দ হব দ পর ব শ জ বদ হ ও চর চ চর চ র সন ধ ন র জন য আম দ র র কর ন স বর প র অর থ ন কর ন প রক র অর থ ৎ কর ছ ন ল লনক ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চবি ছাত্রদলের ৪ নেতা বহিষ্কার
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রদলের চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য যায়।
আরো পড়ুন:
খুবিতে নানা অভিযোগে ১৯ শিক্ষার্থীকে শাস্তি
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুবিতে ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নিউটন দত্ত, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. নকিব হোসেন চৌধুরী ও আবু শাহদাত মোহাম্মদ আদিলকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ছাত্রনেতা আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। তারা সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনো প্রকার সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদল নেতা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থেকে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল প্যানেলে স্থান না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে নির্বাচন করেছিলেন তিনি।
একইসঙ্গে ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি প্যানেলও গঠন করেছিলেন মামুন। তবে বুধবার (১৫ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত চাকসু নির্বাচনে তিনি ও তার প্যানেলের কেউ নির্বাচিত হননি।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী