ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী এবং করপোরেটপন্থী’ নীতির বিরোধিতায় আজ বুধবার সকাল থেকে ভারত বন্‌ধ্‌ শুরু হয়েছে। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ ফোরাম এই ভারত বন্‌ধের ডাক দিয়েছে। শ্রম আইন সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার ক্রমবর্ধমান বেসরকারিকরণ ও গ্রামীণ ভারতের অর্থনৈতিক দুর্দশার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানাতে এই বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

ট্রেড ইউনিয়নদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি দেশের শ্রমিক ও কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বন্‌ধের সমর্থকদের বিক্ষোভের ফলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের স্বাভাবিক জনজীবন আজ সকাল থেকেই কিছুটা ব্যাহত হয়। বন্‌ধের আওতায় রেল পরিষেবা সরাসরি যুক্ত না হলেও বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বন্‌ধ্‌ সমর্থকেরা রেললাইন অবরোধ করায়। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশাসহ বেশ কিছু রাজ্য থেকে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ার খবর প্রাথমিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। ওডিশার খুরদায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ধর্মঘটের সমর্থকেরা।

ফলে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা, নদীয়াসহ অনেক জায়গায় ট্রেন আটকে দেওয়া হয়। বিহারের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় সড়ক ও রেললাইনে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। বামশাসিত কেরালায় দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বেশ কিছু রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে বাসচালকেরা হেলমেট পরে কাজ করছেন। ভারত বন্‌ধের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের পরিষেবাও রাজ্যে রাজ্যে ব্যাহত হচ্ছে।

ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে এআইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, সিআইটিইউ, হিন্দ মজদুর সভার মতো কংগ্রেস ও বিভিন্ন বামপন্থী দলগুলোর সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। ধর্মঘটি ফোরামগুলো সাধারণ মানুষকে সমর্থনের হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছর তারা কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মান্ডভিয়ার কাছে মোট ১৭ দফা দাবি পেশ করেছিল। কিন্তু সরকার দাবি মেটাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের যাবতীয় নীতি বড় করপোরেটদের স্বার্থে গৃহীত। শ্রমিক ও কৃষক স্বার্থ পুরোপুরি উপেক্ষিত। বাধ্য হয়ে তাই ভারত বন্‌ধের ডাক।

ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, এই বন্‌ধের ফলে ব্যাংকিং, বিমা, ডাক বিভাগ, পরিবহন, কয়লার খনি, কারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কাজ ও পরিষেবা ব্যাহত হবে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ইউনিয়নগুলো প্রধানত বাম প্রভাবিত। অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন এই বন্‌ধ্‌কে সমর্থন জানিয়েছে। বিমা খাতও বন্‌ধে অংশ নিচ্ছে। তবে বন্‌ধের আওতা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংক, বিমা, খনি ও পরিবহন ছাড়া বন্‌ধের প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত প্রায় ২৮ লাখ শ্রমিক বন্‌ধ্‌কে সমর্থন করে কাজে যোগ না দিলে সরবরাহ ব্যাহত হবে। বিভিন্ন রাজ্য সরকার যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ব য হত

এছাড়াও পড়ুন:

ধামাকা শপিংয়ের কাছে পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি ভুক্তভোগীদের

ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকমের কাছে পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহকারী ভুক্তভোগী বিক্রেতা ও গ্রাহকেরা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বর্তমান সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এ দাবি জানানো হয়। ‘ধামাকা শপিং ডটকমের ভুক্তভোগী, প্রতারিত ব্যবসায়ী ও ভোক্তাগণ’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শতাধিক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জাহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ধামাকা শপিং ডটকম শুরুতে ২০০ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে ব্যবসা করার ঘোষণা দেয়। তাদের মাইক্রো ট্রেডসহ  অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে বলে জানায়। এ কারণে বিশ্বাস করে তাদের পণ্য সরবরাহ করতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হন। পণ্য নিয়ে তাঁরা চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতেন। ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত লেনদেন ঠিক ছিল। পরে আরও কয়েক মাস পণ্য সরবরাহ করলেও তারা আর কোনো টাকা দেয়নি।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আনুমানিক ৫০ জন উদ্যোক্তা ও ৩ হাজার ভোক্তা প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। টাকা পরিশোধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের শতাধিক চেক দিলেও তা ডিজঅনার হয়। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতারণার মামলা করেছি, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

পাওনা টাকা না পেয়ে দুর্বিষহ দিন কাটানোর কথা জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা না পেয়ে আমরা অসহায় অবস্থায় আছি। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই বড় ব্যবসা বন্ধ করে ছোট আকারে কোনো রকম টিকে আছে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে হাজার হাজার তরুণ নিঃস্ব হয়ে গেছে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ হয়ে গেছি, কিন্তু টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে আমাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করছি।’

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা না পেয়ে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কয়েক শ মামলা হয়েছে। চার বছর ধরে এ মামলা চলছে। মামলা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধামাকা শপিংয়ের মালিকদের বাংলাদেশে যে সম্পদ আছে, তা দিয়ে অনায়াসে তাঁরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেন, কিন্তু তাঁরা সেটি করছেন না। এ কারণে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা ফেরত দিতে না পেরে চেয়ারম্যান মো. মুজতবা আলী দাবি করছেন, তিনি ধামাকা শপিং ডটকমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অথচ তিনি বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান পরিচয়ে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে প্রধান অতিথি করে ই-কমার্স নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান পরিচয়ে সভাপতিত্ব করেন। অথচ এখন তিনি ওই পরিচয় অস্বীকার করছেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ আদালত আমাদের ন্যায্য পাওনা ফেরত পেতে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান মো. মুজতবা আলীর বিষয়ে উপযুক্ত রায় গ্রহণ করবেন, সেই আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের পাওনা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

পাইকারি বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেকগুলো চেক দেওয়া হয়, কিন্তু চেকগুলো কাজ করেনি। পরে ধাপে ধাপে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও পাঁচ বছর ধরে তা পাইনি। আমরা অসহায় হয়ে গেছি।’

গ্রাহক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধামাকা ই–কমার্সে আমি একটা বাইক অর্ডার দিয়েছিলাম। বাইক সরবরাহ করতে পারেনি। বিনিময়ে তারা একটা চেক দেয়। ওই চেকে টাকা তুলতে পারিনি। তারপর অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। টাকা ফেরত পাইনি। হঠাৎ একদিন দেখি, তাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে।’

আরও পড়ুনধামাকা শপিংয়ের চেয়ারম্যানকে ভাটারা থানায় সোপর্দ০৫ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনধামাকা শপিংয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের ৬২ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি২৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিজেদের তৈরি রোবট নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে নবম শ্রেণির তিন ছাত্র
  • ধামাকা শপিংয়ের কাছে পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি ভুক্তভোগীদের
  • ‘চোখের পলকে ঘরটি নদীতে ভেঙে পড়ল, এক কাপড়ে বের হয়েছি’
  • অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন এমপি শিমুলের বেয়াই
  • পিস্তল ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন সাবেক এমপি শিমুলের বেয়াই
  • এশিয়ার দেশগুলোয় ট্রাম্পের শুল্কনীতির কী প্রভাব পড়বে
  • ১৩ লাখ টন আমদানি, ফলন ভালো, তবু বাড়ছে চালের দাম
  • যেসব এলাকায় আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
  • বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে তেল উৎপাদন বাড়াবে ওপেক জোট