মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ভারত বন্ধ্ চলছে
Published: 9th, July 2025 GMT
ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘শ্রমিক ও কৃষকবিরোধী এবং করপোরেটপন্থী’ নীতির বিরোধিতায় আজ বুধবার সকাল থেকে ভারত বন্ধ্ শুরু হয়েছে। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর যৌথ ফোরাম এই ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে। শ্রম আইন সংস্কার, রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার ক্রমবর্ধমান বেসরকারিকরণ ও গ্রামীণ ভারতের অর্থনৈতিক দুর্দশার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ জানাতে এই বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ট্রেড ইউনিয়নদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি দেশের শ্রমিক ও কৃষকদের অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বন্ধের সমর্থকদের বিক্ষোভের ফলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের স্বাভাবিক জনজীবন আজ সকাল থেকেই কিছুটা ব্যাহত হয়। বন্ধের আওতায় রেল পরিষেবা সরাসরি যুক্ত না হলেও বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বন্ধ্ সমর্থকেরা রেললাইন অবরোধ করায়। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশাসহ বেশ কিছু রাজ্য থেকে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ার খবর প্রাথমিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। ওডিশার খুরদায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ধর্মঘটের সমর্থকেরা।
ফলে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনা, নদীয়াসহ অনেক জায়গায় ট্রেন আটকে দেওয়া হয়। বিহারের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় সড়ক ও রেললাইনে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। বামশাসিত কেরালায় দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। সাবধানতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে বেশ কিছু রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে বাসচালকেরা হেলমেট পরে কাজ করছেন। ভারত বন্ধের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের পরিষেবাও রাজ্যে রাজ্যে ব্যাহত হচ্ছে।
ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে এআইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, সিআইটিইউ, হিন্দ মজদুর সভার মতো কংগ্রেস ও বিভিন্ন বামপন্থী দলগুলোর সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। ধর্মঘটি ফোরামগুলো সাধারণ মানুষকে সমর্থনের হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছর তারা কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মান্ডভিয়ার কাছে মোট ১৭ দফা দাবি পেশ করেছিল। কিন্তু সরকার দাবি মেটাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের যাবতীয় নীতি বড় করপোরেটদের স্বার্থে গৃহীত। শ্রমিক ও কৃষক স্বার্থ পুরোপুরি উপেক্ষিত। বাধ্য হয়ে তাই ভারত বন্ধের ডাক।
ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, এই বন্ধের ফলে ব্যাংকিং, বিমা, ডাক বিভাগ, পরিবহন, কয়লার খনি, কারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কাজ ও পরিষেবা ব্যাহত হবে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ইউনিয়নগুলো প্রধানত বাম প্রভাবিত। অল ইন্ডিয়া ব্যাংক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন এই বন্ধ্কে সমর্থন জানিয়েছে। বিমা খাতও বন্ধে অংশ নিচ্ছে। তবে বন্ধের আওতা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক, বিমা, খনি ও পরিবহন ছাড়া বন্ধের প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত প্রায় ২৮ লাখ শ্রমিক বন্ধ্কে সমর্থন করে কাজে যোগ না দিলে সরবরাহ ব্যাহত হবে। বিভিন্ন রাজ্য সরকার যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।