‘চোখের পলকে ঘরটি নদীতে ভেঙে পড়ল, এক কাপড়ে বের হয়েছি’
Published: 9th, July 2025 GMT
‘দুপুর থেকে মুহুরী নদীর পানি বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার দিকে গ্রামের পাশে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। মুহূর্তেই পানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা, পানি ঢুকে পড়ে ঘরে। চোখের পলকে আমার ঘরটি নদীতে ভেঙে পড়ল। কোনোমতে মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়েছি।’
কথাগুলো বলছিলেন ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের আলী আশরাফ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আশরাফ ও তাঁর ছোট ভাই আলী রাজের ঘর মুহুরী নদীতে ভেঙে পড়ে। বর্তমানে দুজন গ্রামে তাঁদের এক ভাগনের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেই আজ বুধবার সকালে কথা হয় আশরাফের সঙ্গে।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় উত্তর শ্রীপুরের মতো ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ১৭টি স্থানে মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ধসে পড়েছে। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩৫টি গ্রাম। ফেনী সদর, ফুলগাজী ও পরশুরামে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গতকাল রাত থেকে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সড়কটিতে ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
আজ সকালে শ্রীপুর গ্রামে কথা হয় বাসিন্দা আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তাঁদের গ্রামে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের অংশটি ২০২২ সাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মেরামতের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার কারণে গতকাল বাঁধের অন্তত ৪০ ফুট ধসে পড়েছে। এতে দক্ষিণ শ্রীপুর, বাসুরা, করইয়া, নিলক্ষী, গোসাইপুরসহ আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর সূত্রে জানা যায়, মুহুরী নদীর পানি আজ সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
বন্যা মোকাবিলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার সমন্বয়ে জেলা প্রশাসনের একাধিক দল বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২৪ ঘণ্টা বন্যাকবলিত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণকক্ষ। ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন জানান, এরই মধ্যে ফেনী সদর, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ১১৫টি পরিবারের ৩৪৭ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। আজ সকাল পর্যন্ত ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিয়া ইসলাম বলেন, আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ফুলগাজী উপজেলার ৭টি অংশে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙেছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে অন্তত উপজেলার ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী গ্রামের অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ফেনীর ফুলগাজীর উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাড়িঘর। আজ সকালে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল ব ত হয় ছ নদ র ব ড় ব পরশ র ম উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে প্রতিবেদনের পর ১৪ রেলস্টেশনে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী দিয়েছে ঠিকাদার
দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পরে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের স্টেশনগুলোতে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সামগ্রী বুঝে পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বুড়িমারী ও পাটগ্রাম স্টেশনের মাস্টার নুর আলম।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘লালমনিরহাট স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ’ শিরোনামে রাইজিংবিডি ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর সব স্টেশনে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী পৌঁছে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি বিভাগ লালমনিরহাট। এ বিভাগের রেল স্টেশনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সরকারি ও বেসরকারি দুই ভাবিই পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। বেসরকারিভাবে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ করতে প্রতি দুই বছর পর দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। গত দুই অর্থবছরে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলের ১৪টি স্টেশনে এসব সামগ্রী সরবরাহের কাজ পায় ক্লিন সার্ভিস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি স্টেশনে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ করার কথা। এসব সামগ্রীর মধ্যে আছে—হারপিক, সাবান, লাইজল, ফুল ঝাড়ু, কাঠের ঝাড়ু, ফেসিয়াল টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, এয়ার ফ্রেশনার, এডোনিল, ড্যামফিক্স, হ্যান্ডওয়াশ, টয়লেট ব্রাশ, বেলচা, অ্যারোসল, মপ, ফিক্সল ও বালতি। ১৪টি স্টেশন পরিষ্কার বাবদ প্রতি মাসে বিল ধরা হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
বেসরকারিভাবে পরিচালিত স্টেশনগুলো হচ্ছে— আদিতমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, বুড়িমারী, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, দিনাজপুর, সেতাবগঞ্জ,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়।
নিয়ম অনুযায়ী, ঠিকাদার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী স্টোরকিপারকে অবগত করে স্ব স্ব স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে প্রত্যয়ন সাপেক্ষে বিল উত্তোলন করবেন। কিন্তু, গত অর্থবছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে পরিচালিত ১৪টি স্টেশনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন দেওয়া হলেও কোনো পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাইজিংবিডিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরে নড়েচড়ে বসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। অবশেষে যুক্তি অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সংবাদ প্রকাশের পরদিন এসব সামগ্রী সব স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বুড়িমারী ও পাটগ্রাম স্টেশনের মাস্টার নুর আলম বলেছেন, সংবাদ প্রকাশের পর চুক্তিমতো সমুদয় পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী বুঝে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এজন্য রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ।
ক্লিন সার্ভিসের মালিক ওয়ালিউর রহমান বলেছেন, আমার প্রতিনিধি গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে কিছু সামগ্রী স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তারা আরো দিয়েছেন। অসুস্থ থাকায় এসব সামগ্রী সময়মতো পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
অফিস সহকারী ও স্টোরকিপার নুরুজ্জামান সরকার সোহেল বলেছেন, আমার বিষয়ে যারা অভিযোগ দিয়েছেন, তা মিথ্যা ছিল। এই বিষয়টি পুরো দেখভাল করতেন ঠিকাদার। ইতোমধ্যে পাওনা পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী স্টেশনগুলোতে পৌঁছে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঢাকা/সিপন/রফিক