ভাঙা মন ও দুর্বল শরীর নিয়েও গাছ লাগাতে ভোলেননি কার্তিক পরামানিক
Published: 10th, July 2025 GMT
বৃক্ষপ্রেমী কার্তিক পরামানিক এবার ভেবেছিলেন, ভাঙা মন ও দুর্বল শরীর নিয়ে এ বছর আর গাছ লাগাতে পারবেন না। একদিকে স্ত্রী হারানোর বেদনা, অন্যদিকে বয়সের ভারে শরীরটাও আগের মতো নেই। কিন্তু তাঁর বৃক্ষপ্রেমের কাছে সব প্রতিকূলতা হার মানে শেষ পর্যন্ত। বর্ষাকাল এলে শুরু করেন তাঁর বৃক্ষরোপণ অভিযান। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বয়স এখন তাঁর আশির বেশি। গাছ লাগানো সেই যে ১০ বছর বয়সে শুরু করেছেন, এখনো চলছে।
বাবাকে নিয়ে এমন কথা বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক পরামানিকের ছোট ছেলে সনাতন পরামানিক (৩২)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি বাবার সঙ্গে বৃক্ষরোপণে অংশ নেন। তাঁর বাবা বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর ছোট ছেলে সনাতন গাছ লাগানো চালিয়ে যাবে।’
বাবাকে নিয়ে সনাতন আরও বলেন, ‘বছরখানেক আগে মা (গীতা রানী পরামানিক) মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা সব সময় মনমরা হয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগশোক নিয়ে এ বছর গাছ লাগানো বন্ধ রাখার জন্য আমরা ভাইবোনেরা বাবাকে খুব করে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি কথা দিয়েছিলেন, এবার গাছ লাগাবেন না। তবে এবারও দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বাবলা ও কড়ইগাছের ৭০ কেজি বীজ বপন করেছেন।’
গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মনাকষা ইউনিয়নের মনোহরপুর রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই চলছিল কার্তিক পরামানিকের বীজ বপন অভিযান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন শ্রমিক ও তাঁর বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ের একদল ছাত্র। তিনি পাত্র থেকে মুঠো মুঠো বীজ নিয়ে রাস্তার পাশে ছিটিয়ে যাচ্ছেন। আর ছাত্ররা নিড়ানি দিয়ে অল্প একটু গর্ত করে ছিটানো বীজগুলো পুঁতে দিচ্ছে।
পথে শ্যামপুরে তিন রাস্তার মোড়ে লাগানো বিরাট পাকুড়গাছটির নিচে এসে কিছুটা জিরিয়ে নেন কার্তিক পরামানিক। ছেলেবেলায় বাবার বলা গল্পের পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। ‘গয়া-কাশী-বৃন্দাবন গিয়ে তীর্থ করে যে পুণ্য হবে, তার থেকে ছায়াবৃক্ষ লাগিয়ে অনেক বেশি পুণ্য পাওয়া যাবে। সেই বৃক্ষের ছায়ায় মানুষের প্রাণ জুড়াবে। পাখপাখালির আশ্রয় হবে।’—ছোটবেলায় শোনা সেই কথা গেঁথে যায় তাঁর মনে। ১০ বছর বয়সে শ্যামপুর গ্রামে পাকুড়গাছটি লাগিয়ে শুরু হয় তাঁর গাছ লাগানো।
কার্তিক পরামানিককে নিয়ে ২০০৩ সালের ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘বিশাল বিশাল বৃক্ষগুলো যেন একেকটি কার্তিকনামা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০৬ সালে তাঁকে ঢাকায় এনে কৃষি পদক দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে তাঁকে নিয়ে ছাপা হয় গল্প।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক র ত ক পর ম ন ক
এছাড়াও পড়ুন:
হংকংয়ে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮
হংকংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় তাই পো এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে লাগা ভয়াবহ আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮ এ পৌঁছেছে। শুক্রবার কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
ওয়াং ফুক কোর্ট নামে ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে বুধবার অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ২০২১ সালের সরকারি আদমশুমারি অনুযায়ী, এই আবাসিক কমপ্লেক্সে প্রায় চার হাজার ৬০০ মানুষের জন্য এক হাজার ৯৮৪টি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
শুক্রবার সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১২৮ জন নিহত হয়েছে এবং ৭৯ জন আহত হয়েছে। ৮৯ জনের মৃতদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
অগ্নিনির্বাপন বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে কিছু অ্যাপার্টমেন্ট এখনো আগুন জ্বলছে।আগুনে পুড়ে যাওয়া সাতটি টাওয়ারের মধ্যে দুটিতে বেশিরভাগ মৃতদেহ পাওয়া গেছে এবং বেশিরভাগ জীবিতদের অন্যান্য ব্লক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আবাসিক কমপ্লেক্সের আটটি ভবনের একটিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা আরো ছয়টি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগেও তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
ভবনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সময় ভবনের অ্যালার্ম বাজেনি।
ঢাকা/শাহেদ