বৃক্ষপ্রেমী কার্তিক পরামানিক এবার ভেবেছিলেন, ভাঙা মন ও দুর্বল শরীর নিয়ে এ বছর আর গাছ লাগাতে পারবেন না। একদিকে স্ত্রী হারানোর বেদনা, অন্যদিকে বয়সের ভারে শরীরটাও আগের মতো নেই। কিন্তু তাঁর বৃক্ষপ্রেমের কাছে সব প্রতিকূলতা হার মানে শেষ পর্যন্ত। বর্ষাকাল এলে শুরু করেন তাঁর বৃক্ষরোপণ অভিযান। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বয়স এখন তাঁর আশির বেশি। গাছ লাগানো সেই যে ১০ বছর বয়সে শুরু করেছেন, এখনো চলছে।

বাবাকে নিয়ে এমন কথা বলছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক পরামানিকের ছোট ছেলে সনাতন পরামানিক (৩২)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি বাবার সঙ্গে বৃক্ষরোপণে অংশ নেন। তাঁর বাবা বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর ছোট ছেলে সনাতন গাছ লাগানো চালিয়ে যাবে।’

বাবাকে নিয়ে সনাতন আরও বলেন, ‘বছরখানেক আগে মা (গীতা রানী পরামানিক) মারা যাওয়ার পর থেকে বাবা সব সময় মনমরা হয়ে থাকেন। মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগশোক নিয়ে এ বছর গাছ লাগানো বন্ধ রাখার জন্য আমরা ভাইবোনেরা বাবাকে খুব করে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি কথা দিয়েছিলেন, এবার গাছ লাগাবেন না। তবে এবারও দুই কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে বাবলা ও কড়ইগাছের ৭০ কেজি বীজ বপন করেছেন।’

গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে মনাকষা ইউনিয়নের মনোহরপুর রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই চলছিল কার্তিক পরামানিকের বীজ বপন অভিযান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন শ্রমিক ও তাঁর বাড়ির পাশের বিদ্যালয়ের একদল ছাত্র। তিনি পাত্র থেকে মুঠো মুঠো বীজ নিয়ে রাস্তার পাশে ছিটিয়ে যাচ্ছেন। আর ছাত্ররা নিড়ানি দিয়ে অল্প একটু গর্ত করে ছিটানো বীজগুলো পুঁতে দিচ্ছে।

পথে শ্যামপুরে তিন রাস্তার মোড়ে লাগানো বিরাট পাকুড়গাছটির নিচে এসে কিছুটা জিরিয়ে নেন কার্তিক পরামানিক। ছেলেবেলায় বাবার বলা গল্পের পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। ‘গয়া-কাশী-বৃন্দাবন গিয়ে তীর্থ করে যে পুণ্য হবে, তার থেকে ছায়াবৃক্ষ লাগিয়ে অনেক বেশি পুণ্য পাওয়া যাবে। সেই বৃক্ষের ছায়ায় মানুষের প্রাণ জুড়াবে। পাখপাখালির আশ্রয় হবে।’—ছোটবেলায় শোনা সেই কথা গেঁথে যায় তাঁর মনে। ১০ বছর বয়সে শ্যামপুর গ্রামে পাকুড়গাছটি লাগিয়ে শুরু হয় তাঁর গাছ লাগানো।

কার্তিক পরামানিককে নিয়ে ২০০৩ সালের ২ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘বিশাল বিশাল বৃক্ষগুলো যেন একেকটি কার্তিকনামা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০৬ সালে তাঁকে ঢাকায় এনে কৃষি পদক দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে তাঁকে নিয়ে ছাপা হয় গল্প।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র ত ক পর ম ন ক

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে ১ হাজার ৩০০-এর বেশি কর্মী ছাঁটাই

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এসব কর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সিএনএনের হাতে আসা একটি অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, এই ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বেন মন্ত্রণালয়ের সিভিল সার্ভিসের ১ হাজার ১০৭ কর্মকর্তা এবং ফরেন সার্ভিসের ২৪৬ কর্মকর্তা। এ ছাড়া এই পরিবর্তনের ফলে মন্ত্রণালয়ের শত শত কার্যালয় ও ব্যুরো বিলুপ্ত বা পুনর্গঠন করা হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে প্রায় ৩ হাজার সদস্যকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্যাগ করতে হবে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ের চাকরিচ্যুত করা কর্মীদের পাশাপাশি যাঁরা স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ছেন, তাঁরাও রয়েছেন।  

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০২৫ সালের ২২ এপ্রিলে প্রথমবারের মতো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দপ্তরটি অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সুশৃঙ্খল করছে, যাতে কূটনৈতিক অগ্রাধিকারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যায়।’

যেসব ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তাকে শুক্রবার জনবল হ্রাসের নোটিশ দেওয়া হবে, তাঁদের ১২০ দিনের জন্য প্রশাসনিক ছুটিতে রাখা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এরপর তাঁদের চাকরি মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। আর চাকরিচ্যুত হওয়া অধিকাংশ সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তাকে প্রথমে ৬০ দিনের ছুটিতে রাখা হবে। এরপর তাঁদের ছাঁটাই কার্যকর হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ