ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দিনভর যানজট, দুর্ভোগ
Published: 10th, July 2025 GMT
সিলেট থেকে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারবাহী ট্রাক নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন চালক মো. রাসেল মিয়া। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডের খাটিহাতা মোড়ে এসে তিনি পৌঁছান বেলা তিনটার দিকে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওই জায়গা থেকে নড়তে পারেননি। এই মহাসড়কে বৃহস্পতিবার দিনভর দুর্ভোগে পড়েছেন চালক-যাত্রীরা।
ভুক্তভোগী, পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া স্থলবন্দর সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ চালু রাখতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়নি। যে কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নানা জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণের কারণে এসব গর্ত আরও বড় হয়েছে। একই সঙ্গে নিয়ম লঙ্ঘন করে চালকেরা ওভারটেক করতে গিয়ে যানজট পাকিয়ে ফেলছেন। এরই সর্বশেষ নমুনা দেখা যায় বৃহস্পতিবার। পুরো দিনই এই মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব হয়ে নরসিংদীর ইটাখোলা পর্যন্ত ছিল যানজট।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোডের ব্যবসায়ী জুনায়েদুল হক (৬০) বলে, ‘আজ সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এখানে কোনো বাস-ট্রাক এক ফুটও নড়েনি। যানজট নিয়ন্ত্রণে আসা পুলিশ সদস্যরা একরকম অসহায় হয়ে পড়েন। বেপরোয়া চালকেরা তাদের পাত্তাই দিতে চান না।’
ভাঙাচোরা সড়কে চালকেরা কে কার আগে যাবেন– এমন মানসিকতার প্রতিযোগিতাকেই যানজটের মূল কারণ হিসেবে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।
বেলা আড়াইটার দিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অবস্থিত সড়কসেতুর টোল প্লাজায় কথা হয় ট্রাকচালক কাজিম আলীর সঙ্গে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সিলেট যাচ্ছিলেন পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে। তিনি এখানে পৌঁছান বেলা একটার দিকে। কাজিম আলী বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা যাবত একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। ১০ মিনিটের রাস্তা এসেছি ৪ ঘণ্টায়। কখন সিলেট পৌঁছাবো, আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। বৃষ্টি হলেই (এই) সড়কে ভোগান্তি বেড়ে যায়।’
এদিন বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইলে পাওয়া যায় আহমেদ মিয়াকে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় যাবেন। এ জন্য তিশা পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে বাসেই বসে আছেন। কখন বাস ছাড়বে, তা-ও জানেন না।
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সরাইলের বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর, শান্তিনগর ও আশুগঞ্জের খড়িয়ালা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার অংশে যানজট ছিলো তীব্র। একই যানজট ছড়িয়ে পড়ে নরসিংদীর ইটাখলা থেকে চৈতন্য, মরজাল, বারৈচা, নারায়ণপুর, ভৈরবের জগন্নাথপুর ব্রিজ, দুর্জয় মোড় বাসস্ট্যান্ড ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার জুড়ে। এ ছাড়া বুধবার রাত ১০টার দিকে আশুগঞ্জের গোলচত্ত্বর থেকে সরাইলের বেড়তলা, শান্তিনগর, বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, বাড়িউড়া পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার প্রকল্পটির ভারতীয় ঋণে নির্মাণাধীন। একই দেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এই কাজ করছে। ৫ আগস্টের পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর তারা ফিরে এলেও কাজের গতি আগের মতো হয়নি। এরই মধ্যে সড়কের কাজে ব্যবহৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকার পণ্য চুরি গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে এক পাশের কাজ শেষ হলেও বিপরীত পাশের কাজ শুরু হয়নি। যে কারণে ওই অংশটি সরু হওয়ায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দুপাশের যানবাহন একপাশ দিয়ে চালাতে হয়। ফলে সড়কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। টানাবৃষ্টিতে এসব অংশে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
ভৈরবের দুর্জয় মোড়ে দুপুরে কর্মরত ছিলেন পুলিশের টিএসআই দুলাল মিয়া। তিনি বলেন, সকাল ৬টায় দায়িত্ব পালনে এসেই যানজট পান। দুপুর পর্যন্ত তিনটা চারটা করে গাড়ি সিগন্যাল থেকে ছাড়ছেন। আশুগঞ্জের সড়কে যানজট ভৈরব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা সাতটার পর যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয় বলেও জানান তিনি।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মামুনুর রহমান বলেন, চার লেন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ না হলে এ অবস্থার উন্নতি কঠিন। তবে তারা যানজট নিরসনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের একাংশের পিডি শামীম আহমেদের ভাষ্য, যানবাহন চলাচল চালিয়ে যেতে সংস্কার নিয়মিতই চলছে, তবে তা অস্থায়ী। ভারী বৃষ্টি হলেই সমস্যা বেড়ে যায়। প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এগুলো মিটে গেলে দুই-তিন মাসের মধ্যে কাজের গতি বৃদ্ধির আশা করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য নজট ব র হ মণব ড় য় প রকল প র ব শ বর ড য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেপ্তারকৃতদের তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৫ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে এক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ আশ্বাস দেন।
শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে তাঁরা এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও তদন্তের ফলাফল বিনিময়ের মাধ্যমে অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেন।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয়ই বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিথা হেরাথ এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধান পার্ক ইউনজুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য হয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ফোরামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।