রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা গণ–অভ্যুত্থানের পরে সাত-আট মাস দেখেছি, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে ক্ষমতার জন্য আসন ভাগ–বাঁটোয়ারায় ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা গণ–অভ্যুত্থানকে তারা গণ–অভ্যুত্থান বলেই স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে, শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্যই এই গণ–অভ্যুত্থান হয়েছিল।’

আজ বুধবার বিকেলে নড়াইল শহরের পুরোনো বাস টার্মিনালে এনসিপির সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশ পুনর্গঠনের জন্য, একটি সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য এই গণ–অভ্যুত্থান হয়েছিল। আপনার সন্তান, আমাদের ভাইয়েরা রাজপথে নেমেছিল সেই নতুন দেশ গড়ার জন্য।’

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা যাঁরা এখানে এসেছেন, শুনেছেন—সারজিস আলম বলেছেন, নতুন দল করা আমাদের লক্ষ্য ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল এই দেশকে পুনর্গঠন করা, দেশটাকে ভালোভাবে তৈরি করা। বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো ছিল, যদি তাদের নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠন হওয়া সম্ভব হতো, তাহলে হয়তো আমাদের দল করার প্রয়োজনই হতো না। কিন্তু আমরা আস্থা রাখতে পারিনি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই গণ–অভ্যুত্থানের পরে আমাদের স্বপ্ন ছিল—যাঁরা এই গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন, দলমত–নির্বিশেষে আমরা এই দেশকে নতুনভাবে গড়ে তুলব।’ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের একটি বছর পার হলেও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাননি উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘এক বছরে আমরা পাইনি সেই আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ, প্রত্যাশিত বাংলাদেশ। ফলে আমরা রাস্তায় নেমেছি আবার। আমরা আপনাদের কাছে যাচ্ছি, এলাকায় যাচ্ছি, দরজায় যাচ্ছি। আমরা বলছি, আমরা সেই তরুণেরা, যারা গণ–অভ্যুত্থান করেছিলাম, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজের বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলাম। আমরা সেই তরুণেরা, যারা আবার এসেছি আপনাদের কাছে নতুন দেশ গড়ার আহ্বান নিয়ে, যারা কখনো আপস করিনি, লোভ করিনি। আমরা সর্বদা দেশের মানুষের জন্য, আপনার অধিকারের জন্য কাজ করেছি, আমরা সামনেও কাজ করে যেতে চাই। আমরা চাই, আপনারা গণ–অভ্যুত্থানের সময় যে আস্থা রেখেছিলেন, আবারও সেই আস্থা রাখুন।’

নিজেদের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে জনগণের উদ্দেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ৫৪ বছরের বাংলাদেশ আমরা দেখেছি। গত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সময়ও আমরা দেখেছি। সকল রাজনৈতিক দলকে আপনারা দেখে নিয়েছেন। এই নতুন তরুণ নেতৃত্ব, বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে, যারা আপনার কথা বলতে চায়। বাংলাদেশকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে গড়ে তুলতে চায়। এখন আপনাদের সামনে সুযোগ এসেছে নতুন একটি শক্তির উত্থান ঘটাতে। আমরা চাই, আপনারা-আমরা মিলে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই দেশকে গড়ে তুলব। আমরা চাই, আগামীর বাংলাদেশে নতুন করে কোনো স্বৈরাচার যাতে না হতে পারে। আগামীর বাংলাদেশে আপনার–আমার কথা বলার অধিকার থাকবে, ভাত-কাপড়ের অধিকার থাকবে। বাংলাদেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না।’

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বিকেলে মাগুরা থেকে নড়াইলে আসেন এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতারা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়কারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম সাব্বির আহমেদ। সমাবেশে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।

সমাবেশে আগের নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আগেও নির্বাচন কমিশন ছিল—হুদা কমিশন, রকিব কমিশন। আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা দিনের ভোট রাতে করে দিয়েছেন। তাঁরা পুলিশ-সেনাবাহিনীকে সাক্ষী রেখে রাতের বেলাই ভোট কেটে রেখেছে। এমন শুনেছি, কবর থেকে মরা মানুষও ভোট দিয়েছে। এগুলো ছিল হুদা কমিশনের কাজ। এই হুদা কমিশনের নূরুল হুদার পরিণতি কিন্তু আজকে জাতি দেখছে।’

এরপর হাসনাত আবদুল্লাহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে বলেন, ‘গতকাল আমাদের নির্বাচন কমিশন বলে দিয়েছে, শাপলা মার্কা নাকি আমাদের দেওয়া হবে না। আপনারা জেনে থাকবেন, তারা (নির্বাচন কমিশন) মিটিং করেছে আজকে। কিন্তু মিটিং হওয়ার আগে গতকালই তারা ফলাফল জানিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ভোটের আগের ফলাফলের মতো আমাদের এখনকার নির্বাচন কমিশন মিটিংয়ের আগেই ফলাফল জানিয়ে দেয়। আমরা ধিক্কার জানাই এই নির্বাচন কমিশনের দ্বিচারিতাকে।’

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহমুদা সুলতানা রিমি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক এনস প র আম দ র র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ