ফল-ফসল ও এসব থেকে তৈরি খাবার খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি। আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে এসব ফল-ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। আর এতে মারা যায় পোকামাকড়। অনেকটা নির্বিচারেই তাদের প্রাণ যায়। এগুলোর মধ্যে অনেক ভালো পোকামাকড়ও থাকে, যারা প্রকৃতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ফসল রক্ষায় কীটনাশক ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী পোকামাকড়ের অনেক প্রজাতি এখন বিলুপ্তির মুখে।
নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, ফল ও সবজিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করে পোকামাকড়ের ক্ষতি হচ্ছে বেশি। নিরাপদ বলে বিবেচিত মাত্রায় ব্যবহার কীটনাশকও বড় ক্ষতির কারণ হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ম্যাককোয়ারি ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ক্লোরোথ্যালোনিল পোকামাকড়ের বংশ বৃদ্ধির ক্ষমতা নষ্ট করছে ও মেরে ফেলছে।
ম্যাককোয়ারির স্কুল অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসের গবেষকরা ল্যাবে ব্যবহৃত সাধারণ পোকামাকড়ের মডেল, ফলের মাছিগুলোয় ক্লোরোথ্যালোনিলের প্রভাব পরীক্ষা করেছেন। ফলের মাছি বন্য অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক অনুরূপ পোকামাকড়ের প্রতিনিধিত্ব করে। এগুলো সাধারণ ফলের মাছি বা ভিনেগার মাছি নামে পরিচিত। ফসলের ক্ষতি করা পোকামাকড়ের বিপরীতে এগুলো পচা ফল খায়। খামার ও বাগানে বর্জ্য ভেঙে ফেলা ও পুষ্টির পুনর্ব্যবহারে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক পিএইচডি প্রার্থী দর্শিকা দিসাওয়া বলেন, ডি.
পরীক্ষায় ফলের মাছি লার্ভা ক্লোরোথ্যালোনিলের সংস্পর্শে আসে, যা প্রকৃত কৃষিজাত পণ্য যেমন– ক্র্যানবেরি ও ওয়াইন গ্রেপে পাওয়া যায়। দর্শিকা দিসাওয়া বলেন, ‘আমরা যেসব মাছি পরীক্ষা করেছি, তার প্রজননের ওপর খুব কম ঘনত্বের কীটনাশকেরও বিশাল প্রভাব পড়ে। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোট সংখ্যার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এটি স্ত্রী-পুরুষ– উভয়ের উর্বরতাকেই প্রভাবিত করে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মাছি কীটনাশকের সংস্পর্শে আসেনি, তাদের তুলনায় রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা মাছিগুলোর ডিম উৎপাদন ৩৭ শতাংশ হ্রাস পায়। অধ্যাপক ফ্লেউর পন্টন বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, বেশি মাত্রার কীটনাশক মাছির ডিম উৎপাদনের ওপর বেশি প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, খুব কম পরিমাণও তীব্র নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
ছত্রাকনাশক ক্লোরোথ্যালোনিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে নিষিদ্ধ। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ছত্রাকজনিত রোগ ও পাতার ঝলসানো ঠেকাতে এটি ব্যাপকভাবে স্প্রে করা হয়। এ ছত্রাকনাশকের অবশিষ্টাংশ খামারের কাছাকাছি মাটি ও পানিতে পাওয়া যায়। খাবারের প্রতি কিলোগ্রামে এর মাত্রা প্রায় শূন্য থেকে ৪৬০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। অধ্যাপক পন্টন বলেন, ক্লোরোথ্যালোনিল প্রায়ই কোনো রোগ না থাকলেও প্রতিরোধমূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। মানুষ ধরে নেয় ক্লোরোথ্যালোনিলের মতো ছত্রাকনাশক শুধু ছত্রাকজনিত রোগের ওপর প্রভাব ফেলে। এগুলো অন্যান্য প্রজাতির জন্যও ধ্বংসাত্মক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফল সবজ ফল র ম ছ ব যবহ র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ