পোশাক খাতে আগ্রহ কমছে নারী শ্রমিকদের
Published: 2nd, July 2025 GMT
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত এটি এবং মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে এই খাত থেকে। পোশাক শিল্পের বিপ্লবের মূল ধারক-বাহক হলেন শ্রমিক। বিশেষ করে নারী শ্রমিক। তবে সেই পোশাক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ ক্রমশ কমছে।
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশে একসময় মোট শ্রমিকের ৮০ শতাংশের বেশি ছিল নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ। তবে বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে তা কমে ৫৭ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ কমে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ উঠে এসেছে।
কলকারখানা ও শিল্পপুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসকল কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ নারী শ্রমিক।
এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১০ বছর আগে গার্মেন্টস কারখানায় কাজের ক্ষেত্রে নারীদের যে পরিমাণ অংশগ্রহণ ও আগ্রহ ছিল, তা এখন অনেকাংশে কমছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে বিভিন্ন কারখানার অন্তত ৫০ জন্য নারী শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন বিষয়ে উঠে এসেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে সন্তান লালন পালনের অসুবিধা, স্বামীর আয়ের উৎসবৃদ্ধি, কম মজুরি, দীর্ঘ সময় কাজ করা, পারিবারিক দায়িত্ব পালন। এছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউজে কাজের সুবিধা আরেকটি কারণ।
নারী শ্রমিকরা জানান, পোশাক শিল্পে কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় কারখানাতেই ব্যয় করতে হয়। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। কাজের দক্ষতা ও কর্ম ঘণ্টা অনুযায়ী মজুরি তুলনামূলক কম। পাশাপাশি প্রত্যেকটি কারখানায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়া হয়, এতে তাদের কাজের প্রতি অনিহা তৈরি হয়।
প্রযুক্তি খাত উন্নত হয়েছে, অথচ এসব শ্রমিকদের তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। ফলে কর্মক্ষেত্রে দক্ষ হতে সময় লাগছে। এছাড়াও পোশাক কারখানার বাইরে অন্যান্য খাতে কাজের সুযোগ বেড়েছে। যেখানে কর্মঘণ্টা কম ও কাজের পরিবেশ ভালো। সেখানে কাজ করে পরিবারকে যথেষ্ট সময় দেওয়ার সুযোগ থাকে।
অটোমেশন ও স্পিনিং, উইভিং, ডাইং এবং ফিনিশিং সেক্টরগুলো মূলত পুরুষ শ্রমিকেরা পরিচালনা করেন। ফলে নারী শ্রমিকদের প্রভাব সেখানেও কমে গেছে। অটোমেশনের সময়ে দক্ষ হয়ে ওঠার মতো সময় ও সুযোগ নারীরা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই শিল্পে ১৯৮০ সালে নারী শ্রমিকের হার ছিল ৮০ শতাংশ। যা ২০২১ সালে কমে দাঁড়ায় ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতে, পোশাক খাতে নিযুক্ত মোট শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যা কমে ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রথম দিকে কম বেতনের চাকরি হলেও অনেক নারী তৈরি পোশাক খাতে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন। তবে তারা করতে চান না।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার তাসলিমা খাতুন। ১০ বছর আগে গাজীপুরে এসেছিলেন চাকরি করতে। তারপর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক কারখানায় কাজ করেছেন। সেসময়ে ছোট্ট সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করতেন। দেড় বছর ধরে তিনি আর কাজ করেন না।
তিনি বলেন, “দুজনে পরিশ্রম করে কিছু টাকা জমা করেছি। তখন পরিশ্রম গায়ে সইতো, এখন চাপ নিতে কষ্ট হয়। এরমধ্যে ছেলে বড় হয়ে গেছে, ওরে স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। ছেলেকে মানুষ করতে হবে এজন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।”
শ্রমিক ও নারী অধিকারকর্মী তাসলিমা আক্তার বলেন, “নারী শ্রমিকদের অটোমেশনে দক্ষ হতে যে মনোযোগ দিতে হয়, ঘরে-বাইরে কাজ করে তা দেওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণেও নারী শ্রমিক এ খাতে কমে যাচ্ছে। এছাড়া কর্মপরিবেশ, মাতৃকালীন ছুটি ও ডে কেয়ার ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন করা দরকার।”
জামালপুর থেকে একযুগ আগে স্বামী-স্ত্রী চলে আসেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায়। এরপর দু'জন চাকরি করেন বিভিন্ন পোশাক কারখানায়। স্বামী আলফাজ হোসেন বলেন, “প্রথম যখন গাজীপুরে কাজ করতে আসি বেতন খুব কম ছিল। দু'জনে কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাতাম এবং কিছু করে সঞ্চয় করতাম। এখন বেতন বেড়েছে, সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে গ্রামে জমি করেছি। গতবছর আমার স্ত্রীকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ সে আর গার্মেন্টসে কাজ করতে চায় না। শরীরও আগের মতো চাপ নিতে পারে না।”
শ্রমিক নেতা অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনের সংগঠক আরমান হোসাইন বলেন, “আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় একটি চালিকাশক্তি হলো পোশাক শিল্প। এই খাতেই বড় অংশ শ্রমিক নারী। কিন্তু, আজ প্রশ্ন উঠছে- যখন নারীরা সংখ্যায় এত বেশি, তখন কেন তারা নেতৃত্বে এত কম। কাজ শেষে পরিবার সামলানো, সন্তান লালন পালন করা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও স্বামীর স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে অনেকেই চাকরি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। তারা পরিবারকে সময় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এসব নানা কারণে নারীদের অংশগ্রহণ কমছে।”
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ করত ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
বিবিসির বিশ্লেষণ: শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কেন ভারতকে বিব্রত করবে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারতকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিবিসির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স রিপোর্টার অ্যানবারাসান ইথিরাজান।
তিনি লিখেছেন, এখন আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে ফেরানোর জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ পাঠাবে। ২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছাড়ার পর থেকে তিনি ভারতে বসবাস করছেন।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার রায় নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকমানের, প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: জামায়াত
ঢাকার আগের দাবিগুলোর জবাব ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়নি। দুই দেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে।
তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মনে হয় হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা সৎউদ্দেশ্যে করা হয়নি, তাহলে ভারত সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ভারতে তাকে ফেরত না পাঠানোর ব্যাপারে দেশটির সর্বদলীয় রাজনৈতিক পর্যায়েও এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে।
দিল্লির কাছে বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী নয়, এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য।
অ্যানবারাসান ইথিরাজান লিখেছেন, ভারত যেন টানটান করে বাঁধা দড়ির ওপর হাঁটছে; কারণ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করলে তা কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো খারাপ করতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
ঢাকা/রাসেল