বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়নি। তবে সে দেশের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে পাল্টা শুল্কের ছাপ ভালোভাবেই পড়েছে। গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস জানুয়ারি-জুনে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি ১১১ কোটি ডলার কমেছে। তার বিপরীতে অবশ্য ভিয়েতনামের ১১৯ ও বাংলাদেশের ৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৫ শতাংশ, যা শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

একাধিক তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রথম আলোকে বলেন, চীনের হারানো ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে। ৬-৮ মাস ধরে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। পাল্টা শুল্কের কারণে সামনের মৌসুম থেকে আরও বাড়তি ক্রয়াদেশ আসতে পারে। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।

গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির ওপর সংশোধিত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করে। আজ বৃহস্পতিবার নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে। সংশোধিত হার অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসবে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হারটি হবে ২৫ শতাংশ। যদিও রাশিরার জ্বালানি তেল কেনার কারণে গতকাল বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। তার মানে ভারতের পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পাল্টা শুল্কের হার ১৯ শতাংশ। শুল্ক নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত চীনের পণ্যে পাল্টা শুল্ক ৩০ শতাংশ।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ ৪২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের ৩৪০ কোটি ডলারের রপ্তানির চেয়ে ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যাও বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। সে সময় পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ বছরের জুনের শেষে সেটি বেড়ে হয়েছে ১০ শতাংশ।

একাধিক উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন। তখন থেকেই চীন থেকে অল্প অল্প করে ক্রয়াদেশ সরছিল। গত বছর নির্বাচনী প্রচারণায় চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে। সে জন্য বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে থাকে।

জানতে চাইলে তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করবে। তখন বোঝা যাবে বাড়তি কত ক্রয়াদেশ আসছে। তবে আমরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি। মার্কিন ক্রেতাদের পাশাপাশি ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়াদেশও বাড়বে। তার কারণ, ইউরোপীয় অনেক ক্রেতার ১০-১৫ শতাংশ ব্যবসা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করতে পারলে আমরা পাল্টা শুল্ক কিছুটা কমাতে পারব। ফলে বর্তমান শুল্ককাঠামো অপরিবর্তিত থাকলে আমাদের ব্যবসার জন্য ভালো সুযোগ তৈরি হবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনকে ছাড়িয়ে বেশ উঁচুতে উঠে গেছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভিয়েতনাম ৭৭৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। এখন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দেশটির বাজার হিস্যা ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভিয়েতনামের চেয়ে চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০৪ কোটি ডলার কম। এ সময়ে চীন রপ্তানি করেছে ৫৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। তাদের বাজার হিস্যাও কমে ১৮ দশমিক ৮৮ শতাংশে নেমেছে।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভারত ২৮৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের প্রথমার্ধের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া গত জানুয়ারি-জুন সময়ে রপ্তানি করেছে ২২৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তাদের প্রবৃদ্ধি ১৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্কের কারণে চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরবে। দেশটি থেকে বেশি মূল্যের যেসব পোশাক সরবে, তার বড় অংশ পাবে ভিয়েতনাম। তবে স্থানান্তরিত হওয়া কম মূল্যের পোশাকের অধিকাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে আসবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘পাল্টা শুল্ক নিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শুরু থেকে নতুন করে চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরছে। তার একটি অংশ বাংলাদেশেও আসছে। আমরা আমাদের সদস্যদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে শুল্ক ভাগাভাগি না করতে নির্দেশনা দিয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ছয় ম স বছর র প রথম র ধ স ব ধ জনক অবস থ য ক তর ষ ট র র প রথম আল ক দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

একঝলক (৭ আগস্ট ২০২৫)

ছবি: সাদ্দাম হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ