যেখানে আধুনিক শহরে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা প্রয়োজন, সেখানে ঢাকা মহানগরীতে আছে মাত্র ৭ শতাংশ। অন্যদিকে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালের হিসাবে ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৭০০ মানুষ প্রবেশ করে, বছরে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখে। ৯ বছরের ব্যবধানে ঢাকা শহরে যুক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা যে আরও বেশি হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
যে শহরে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তীব্র যানজট থাকে, সেখানে একই দিনে একাধিক কর্মসূচি থাকলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়, বুধবার (৬ আগস্ট ২০২৫) নগরবাসী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।
ওই দিন সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন। বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ‘বিজয় র্যালি’ শুরু হলে আশপাশের সড়কগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। অন্যদিকে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নেতা-কর্মীরা ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করেন।
নিত্য যানজটের এ শহরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্মদিবসে সভা–সমাবেশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও অঙ্গীকার করেছিল, কর্মদিবসে তারা কর্মসূচি পালন করবে না। কিন্তু তাদের সেই অঙ্গীকার কথার কথাই থেকে গেছে। কেবল রাজনৈতিক দল নয়, যেকোনো সংগঠন সুযোগ পেলেই সড়ক বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করে।
বিজয় র্যালিতে জনদুর্ভোগের জন্য নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বকে জনদুর্ভাগের কথা আগেই ভাবা উচিত ছিল। দুদিন পর অর্থাৎ শুক্রবার কর্মসূচি পালন করলে লাখ লাখ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হতো না।
কর্মদিবসে সরকারি–বেসরকারি অফিস ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। ফলে কর্মজীবী মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। বুধবার কোনো কোনো যাত্রীকে ১৫–২০ মিনিটের পথ পার হতে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যায়।
সাম্প্রতিক কালে সড়ক বন্ধ করে যেকোনো সংগঠনের কর্মসূচি পালন করার প্রবণতা বেড়েছে। কয়েক দিন আগে শাহবাগে জুলাই যোদ্ধার নামে দুই দিন সড়ক বন্ধ করার পর সেখানে ‘আসল’ ও ‘নকলের’ মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
ঢাকা শহরে যানজট কমাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছিল। ঢাকা শহর ও এর আশপাশে সমন্বিত বাস সার্ভিস চালুর কথাও জোরেশোরে বলা হয়েছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পার করার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সবকিছু চলছে আগের নিয়মে।
সমস্যা হলো ঢাকা শহরকে কংক্রিটের জঙ্গল বানাতে গিয়ে আমরা সড়কগুলো আরও সরু করে ফেলেছি। তদুপরি এই ঢাকা শহরের ভেতরেই একের পর এক বাস টার্মিনাল বানিয়ে যানজট বাড়িয়ে দিয়েছি। এ অবস্থা কোনোভাবে চলতে দেওয়া যায় না। সড়ক কর্মসূচি পালন করার স্থান নয়। এটি হলো যানবাহন চলাচলের জায়গা।
আমাদের রাজনৈতিক নেতারা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেন। জনগণের কষ্ট লাঘব করার কথা বলেন। কিন্তু যে কর্মসূচি জনদুর্ভোগ তৈরি করে, তা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারেন না। তাহলে নাগরিকেরা তাদের ওপর কী করে ভরসা করবে? আর এ ক্ষেত্রে ডিএমপি তথা সরকারও তাদের দায় এড়াতে পারে না। এই যে দিনের পর দিন জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন; তা তারা বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন?
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক য নজট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বায়ুদূষণে বিশ্বে আজ দ্বিতীয় ঢাকা, সুরক্ষায় নগরবাসীর কী করতে হবে
বর্ষাকালে ঢাকার বায়ুর মান সাধারণত ভালো থাকে। অবশ্যই তা বৃষ্টির জন্য। এবারের বর্ষার মধ্যেও বায়ুর মান মোটামুটি ভালো থেকেছে। কিন্তু বৃষ্টি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার দূষণ বেড়ে যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীতে ৪ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। তারপরও বায়ুর মান ভালো হয়নি। রাজধানীতে আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৬৮। এই মান মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আজ বায়ুদূষণে শীর্ষ স্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ১৮৪। এরপরই ঢাকার অবস্থান।
বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
বর্ষাকালে সাধারণত বায়ুদূষণ কম থাকে মূলত বৃষ্টির কারণে। মোটামুটি মে মাসের শেষ থেকেই কমে আসতে থাকে দূষণ। কারণ, এ সময় থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। প্রাকৃতিক এ ঘটনা ছাড়া দূষণ রোধে আর কোনো ব্যবস্থাই আসলে নেই। সরকারি নানা উদ্যোগ ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। বৃষ্টি হলে নগরীর দূষণ কমে কয়েক দিন, তারপর আবার বাড়ে। জুলাই সবচেয়ে কম দূষণের মাস।
রাজধানীর বেশি দূষিত এলাকাগুলোর মধ্যে আছে মিরপুরের ইস্টার্ন হাউসিং, স্কোর ১৮০; পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, স্কোর ১৭৯।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। আজ ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ১৬ গুণ বেশি।
নগরবাসীর জন্য পরামর্শআজ ঢাকার যে বায়ুমান, তার পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউ এয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম করা এড়িয়ে যেতে হবে।
গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল ঘোলাটে। খানিকটা মনে হচ্ছিল যেন কুয়াশা পড়ছে। এর সঙ্গে ছিল প্রচণ্ড গরম আর গুমোট ভাব। সকাল ৬টা থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত এমন আবহাওয়া দেখা গেছে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান এর কারণ হিসেবে লো ক্লাউড বা মেঘ নিচে নেমে আসা ও বায়ুদূষণের কথা বলেছেন। আজ সকালেও আকাশ কিছুটা ঘোলাটে।