ঝামেলার শুরুটা করেছিলেন মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেন।

চোটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মাঠের বাইরে বার্সেলোনার জার্মান গোলকিপার। বার্সেলোনা চেয়েছিল, লা লিগার চোট–বদলি নিয়মের অধীনে নতুন গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে। কিন্তু টের স্টেগেন সাফ জানিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা–সংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি লা লিগার কাছে দেবেন না। এতে গত জুনে এস্পানিওল থেকে আনা গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে নিয়ে বার্সার পরিকল্পনা আর এগোয়নি।

আরও পড়ুনবিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনা দলের কে কত গোল করেছেন, ট্রফি জিতেছেন কে বেশি১ ঘণ্টা আগে

এবার পাল্টা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল বার্সা। গতকাল টের স্টেগেনের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছে কাতালান ক্লাবটি। এ নিয়ে বার্সার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কার্যক্রম শুরুর পর এবং বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পরিচালক পর্ষদ ও কোচিং স্টাফের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ক্লাব সাময়িকভাবে তাকে মূল দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এ সময়টায় বর্তমান সহ–অধিনায়ক রোনালদ আরাউহো প্রথম অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছে বার্সেলোনা।

হাঁটুর চোটে গত মৌসুমে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন টের স্টেগেন। গত মাসের শেষ দিকে পিঠে অস্ত্রোপচার হয়। তখন জানানো হয়, অন্তত তিন মাস বাইরে থাকতে হবে ৩৩ বছর বয়সী ফুটবলারকে। লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় যদি চার মাসের বেশি সময় মাঠের বাইরে থাকেন, তাহলে তাঁর বার্ষিক বেতনের ৮০ শতাংশ বেতন বাবদ ক্লাবের মোট খরচের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে।

লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, সব দলকে বেতন সীমা নীতি মেনে চলতে হয়। টের স্টেগেন বার্সায় সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের একজন। তাঁর বেতনের ৮০ শতাংশ হিসাব থেকে বাদ দিতে পারলে ক্লাবটির জন্য বেতন সীমা নীতি মেনে অন্য একাধিক খেলোয়াড় নিবন্ধন করানোর পথটা সহজ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনচীন সফর বাতিল করে অক্টোবর ও নভেম্বরে যাদের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা৫ ঘণ্টা আগে

বার্সা চেয়েছিল, টের স্টেগেনের বেতনের কিছু অংশ ব্যবহার করে চোট–বদলি নিয়মে একজন গোলকিপার লা লিগায় নিবন্ধন করাতে। কিন্তু ঝামেলা হলো, চোট-বদলির নিয়ম ব্যবহার করতে হলে আগে চোট পাওয়া খেলোয়াড়ের লিখিত সম্মতি লাগে। এতে তাঁর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে লা লিগা। কিন্তু টের স্টেগেন এই তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় চোট–বদলি নিয়ম কাজে লাগাতে পারবে না বার্সা। আর এখন বার্সেলোনার যা আর্থিক অবস্থা, টের স্টেগেনের বেতনের বড় অংশ হিসাব থেকে বাদ দিতে না পারলে লিগে তারা নতুন কোনো খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করাতে পারবে না। টের স্টেগেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি মাত্র তিন মাস মাঠের বাইরে থাকবেন। লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, অন্তত চার মাস মাঠের বাইরে থাকলে সেটাকে দীর্ঘমেয়াদি চোট হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

টের স্টেগেনের সঙ্গে বার্সার এই ঝামেলা ক্লাবটির আর্থিকভাবে ভোগান্তিরও একটি উদাহরণ। কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সমস্যায় ভুগে নতুন খেলোয়াড় সই করানো নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে বার্সাকে।

লা লিগার নতুন মৌসুমে বার্সেলোনা প্রথম ম্যাচটা খেলবে ১৬ আগস্ট, মায়োর্কার বিপক্ষে। কিন্তু এর আগে নতুন আনা গোলরক্ষক গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে না পারলে ভালো ঝামেলায় পড়বেন বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক। ইনাকি পেনা এখন দলে একমাত্র ফিট গোলকিপার, যিনি লিগে নিবন্ধিত। আরেক গোলকিপার ভয়েচেক সেজনিরও নিবন্ধন বাকি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ লক প র চ ট বদল ন বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।

৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।

বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।

বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।

উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিরিয়ায় বিমান ঘাঁটি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
  • মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ: বিএনপিতে যোগ দিলেন যে কারণে 
  • যে ৪ ‘মানি রুল’ ধনীরা কাউকে বলেন না
  • নিউ ইয়র্ক-এর ফাস্ট লেডি ‘রামা দুয়াজি’
  • রোমান সম্রাজ্ঞী মেসালিনাকে যেকারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো
  • ডাকসু নেতার প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানো নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক
  • এক কাপ কফি খাও, তারপর লিখতে বসো—মতি ভাই বললেন
  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা মাতাল ব্যক্তির
  • দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ