কর্ণাটক সরকারের প্রতি ইসি-বিজেপির ‘ভোট চুরি’ তদন্তের আহ্বান জানালেন রাহুল
Published: 8th, August 2025 GMT
ভারতের নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই অন্য পর্যায়ে তুলে দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আজ শুক্রবার কংগ্রেসশাসিত কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে তিনি রাজ্য সরকারকে ভোট চুরি তদন্তের নির্দেশ দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে দলীয় সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘ভোট চুরির রহস্য’ তুলে ধরেন রাহুল। এরপর নিজের বাসভবনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতাদের নৈশভোজের আসরেও তিনি ইসি–বিজেপি ‘আঁতাতের’ চরিত্র উন্মোচন করেন। আজ সকালেই চলে যান কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে। সেখানেই তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে ইসির ‘ভোট চুরির’ তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসনের অন্তর্গত মোট সাতটি বিধানসভা আসন রয়েছে। সেগুলোর ছয়টি বিধানসভায় কংগ্রেস জিতলেও মহাদেবপুরায় বিজেপি এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। সে কারণে বিজেপি লোকসভা আসনটি ৩২ হাজার ভোটে জিতে যায়।মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে রাহুল বলেন, বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসনের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনে ইসির কর্তাদের ভোট চুরির তদন্ত করা হোক। অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। তাঁদের চিহ্নিত করা হোক, যাতে সত্য প্রকাশিত হয়। ইসির দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ ও তদন্ত করে রাহুল প্রমাণ করতে চেয়েছেন, শুধু মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকায় কারচুপি করে বিজেপি বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসকে হারিয়েছে।
বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসনের অন্তর্গত মোট সাতটি বিধানসভা আসন রয়েছে। সেগুলোর ছয়টি বিধানসভায় কংগ্রেস জিতলেও মহাদেবপুরায় বিজেপি এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। সে কারণে বিজেপি লোকসভা আসনটি ৩২ হাজার ভোটে জিতে যায়।
কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, বিজেপির হয়ে ইসি কারচুপি না করলে ২০২৪ সালের ভোটে কর্ণাটকের ২৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৬টিতে জিততই। তথ্যসহকারে এই ভোট চুরির প্রমাণ দিয়ে রাহুল অভিযোগ করেন, ইসি এই কারসাজি না করলে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না।
আজ বেঙ্গালুরুর ফ্রিডম পার্কে কংগ্রেস এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল। সেই জনসভার ব্যানারে লেখা ছিল—‘আমাদের ভোট, আমাদের অধিকার, আমাদের লড়াই’। রাহুল ছাড়াও সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারসহ শীর্ষ নেতারা।
রাহুল বলেন, ইসি কিছুতেই ডিজিটাল ভোটার তালিকা দিতে চাইছে না। গত ১০ বছরের ভোটের ভিডিওগ্রাফির রেকর্ডও প্রকাশ করতে চাইছে না। সামান্য পেনড্রাইভে বছরের পর বছর বিপুল তথ্যভান্ডার সংরক্ষিত রাখা যায়। ইসি তা জেনেও ৪৫ দিন পর তথ্য মুছে ফেলতে চাইছে। তা করতে চাইছে যাতে চুরি ধরা না পড়ে।সেখানেই রাহুল রাজ্য সরকারকে ভোট চুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, কংগ্রেস প্রমাণ করে ছাড়বে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সাধারণের ভোট চুরি ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে।
রাহুল বলেন, ইসি কিছুতেই ডিজিটাল ভোটার তালিকা দিতে চাইছে না। গত ১০ বছরের ভোটের ভিডিওগ্রাফির রেকর্ডও প্রকাশ করতে চাইছে না। সামান্য পেনড্রাইভে বছরের পর বছর বিপুল তথ্যভান্ডার সংরক্ষিত রাখা যায়। ইসি তা জেনেও ৪৫ দিন পর তথ্য মুছে ফেলতে চাইছে। তা করতে চাইছে যাতে চুরি ধরা না পড়ে।
রাহুল গান্ধী বলেন, ইসি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডেটা তুলে দিলেই প্রমাণ করে দেবেন, কীভাবে ভোট চুরি করে তারা মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করেছে।
কংগ্রেস নেতা বলেন, সরকার আইন করে মানুষকে তথ্য জানার অধিকার দিয়েছে। দেশের মানুষ যখন তথ্য জানতে চাইছে, ইসি তখন তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা রাজস্থান ও বিহারে তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ রেখেছে। এই ভোট চুরি সংবিধানের অপমান। সময় বদলাবে। অপরাধীদের একজনও পার পাবেন না।
দুই দিন ধরে মহাদেবপুরা আসনের ভোট চুরির কায়দা দেখিয়ে রাহুল বোঝাতে চেয়েছেন, কীভাবে অনেক ভেবেচিন্তে বিজেপির হয়ে নির্বাচন কমিশন এ কাজটা করে আসছে। রাহুলের কথায়, মহাদেবপুরা ‘টেস্ট কেস’। ওই একটিমাত্র বিধানসভা আসনে এত ভোট বিজেপিকে পাইয়ে দেওয়া হয়, যাতে বাকি ছয় আসনে হেরেও বিজেপি লোকসভা আসনে জিতে যায়।
পাঁচ উপায়ে ইসি এ কাজটা করেছে বলে রাহুলের দাবি। ইসির কাছ থেকে পাওয়া মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের দিস্তা দিস্তা ভোটার তালিকা (যা পরপর সাজালে উচ্চতা দাঁড়ায় সাড়ে সাত ফুট) খুঁটিয়ে দেখে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঠিকানা ধরে ধরে তদন্ত করে রাহুল ওই পাঁচ উপায়ের খোঁজ পেয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন, শুধু ওই বিধানসভা আসনে ডুপ্লিকেট ভোটারের (যে নাম একাধিক বুথে রয়েছে) সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৫, ভুয়া ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার, এক ঠিকানায় একাধিক পরিবারের ভোটারসংখ্যা ১০ হাজার ৪৫২, ভোটার তালিকায় ভুল ছবি বা ছবি না থাকার সংখ্যা ৪ হাজার ১৩২ এবং ফরম–৬–এর অপব্যবহার করেছেন ৩৩ হাজার ৬৯২ জন।
ফরম–৬ দেওয়া হয় প্রথমবার যাঁরা ভোট দিচ্ছেন তাঁদের। অর্থাৎ যে ভোটারদের বয়স ১৮ বা এর কিছু বেশি। রাহুল দেখিয়েছেন, মহাদেবপুরায় ফরম–৬–এ ৩৩ হাজার ৬৯২ জনের বয়স ৬০ থেকে ৯২ বছর! রাহুল বলেন, তাঁর দলের এই কাজ করতে সময় লেগেছে ছয় মাস। ইসি যদি ডিজিটাল তথ্য দিত, তাহলে এই কাজ করতে কয়েক ঘণ্টাই যথেষ্ট ছিল।
রাহুল বলেন, ঠিক এভাবে কারচুপি করে মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোটে ইসি বিজেপি ও তার দোসরদের জিতিয়েছে। নইলে মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে ওই বিপুল পরিবর্তন হতো না। লোকসভা ভোটের পাঁচ মাস পর মহারাষ্ট্রে বিধানসভার ভোট হয়। ইসির বদান্যতায় পাঁচ মাসে ভোটার বৃদ্ধি পায় ৪০ লাখ। বিজেপি ও তার শরিকেরা বিপুল ভোটে জয়ী হয়।
আজ রাহুল মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তরাখন্ড বিধানসভার ভোটেও ইসির কাপচুপির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিহারে ভোটার তালিকার যে নিবিড় সংশোধনের কাজ করছে, তার লক্ষ্যও বিজেপিকে জেতানো। সেটা তারা করতে চাইছে বিপুল ন্যায্য ভোটারের নাম কেটে ও ভুয়া ভোটার ঢুকিয়ে। তাঁর অভিযোগ, সাধারণ দরিদ্র, অনগ্রসর মানুষই হতে চলেছেন এই ভোট চুরির বলি।
পাঁচ উপায়ে ইসি এ কাজটা করেছে বলে রাহুলের দাবি। ইসির কাছ থেকে পাওয়া মহাদেবপুরা বিধানসভা আসনের দিস্তা দিস্তা ভোটার তালিকা (যা পরপর সাজালে উচ্চতা দাঁড়ায় সাড়ে সাত ফুট) খুঁটিয়ে দেখে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঠিকানা ধরে ধরে তদন্ত করে রাহুল ওই পাঁচ উপায়ের খোঁজ পেয়েছেন।রাহুল ইদানীং ভোট চুরিতে ইসির সংশ্রবের অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন তা ‘বাজে বকবকানি’ বলে উড়িয়ে দিয়ে আসছে। বিজেপিও বলেছে রাহুলের অভিযোগ ‘অবান্তর’। এই প্রথম রাহুল ইসির তথ্য দাখিল করে মহাদেবপুরার ঘটনা সামনে আনলেন। এরপরই সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকেরা রাহুলকে চিঠি লেখেন। তাঁকে শপথপত্রে সই করে অভিযোগ জমা দিতে বলা হয়।
ইসি থেকে রাহুলকে বলা হয়, হয় শপথ নিয়ে অভিযোগ জমা দিন, নয়তো জনগণের কাছে ক্ষমা চান। রাহুল ইসিকে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি প্রকাশ্যে যা বলেছেন, যে অভিযোগ এনেছেন সেটাই তাঁর ঘোষণাপত্র। সংবিধানের শপথ নিয়ে সংসদের সদস্য হয়েছেন। ইসির এত শর্ত দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন ট র ল ল কসভ র হ ল বল ন তদন ত কর ব ধ নসভ চ উপ য় ন ত কর প রক শ আসন র নসভ র সরক র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকবে ২ লাখ আনসার-ভিডিপি
দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৫ শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে সর্বাত্মক নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৯ দিন সারা দেশের ৩১ হাজার ৫৭৬টি পূজামণ্ডপে মোতায়েন থাকবেন দুই লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত আনসার-ভিডিপি সদস্য।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এ নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও সদস্যকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপগুলোকে ঝুঁকির ভিত্তিতে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে আটজন, গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ছয়জন এবং সাধারণ মণ্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
পাশাপাশি ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিমও মোতায়েন থাকবে, যাঁরা নিয়মিত টহল পরিচালনার পাশাপাশি যেকোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে।