আমাদের গলার সম্মুখভাগে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন থাইরক্সিন ও ট্রাইআয়োডো-থাইরোনাইন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থিতে নানা রকম রোগ হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের থাইরয়েড সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১০ গুণ। 

থাইরয়েড গ্রন্থিতে মূলত দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়, হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম। প্রথমটিতে গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ কমে এবং পরেরটিতে নিঃসরণ বাড়ে।

গ্রেভস রোগ, মালটি নোডিউলার গয়টার, টক্সিক অ্যাডিনোমা, থাইরয়েডের প্রদাহ, অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ হাইপারথাইরয়েডিজমের অন্যতম কারণ। দ্রুত হৃৎস্পন্দন, ভঙ্গুর চুল, ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত গরম ও ঘাম, গলগণ্ড হাইপারথাইরয়েডিজমের কয়েকটি লক্ষণ। এ সমস্যায় নারীদের অনিয়মিত মাসিক দেখা দিতে পারে।

অন্যদিকে আয়োডিনের অভাবের কারণে বা অটোইমিউন রোগে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। ক্লান্তি, দুর্বলতা, হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, শীত লাগা, ভঙ্গুর চুল ও নখ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হাইপোথাইরয়েডিজমের অন্যতম লক্ষণ।

থাইরয়েডের রোগীদের পরিচিত প্রশ্ন হলো, কী খেলে এটি বাড়ে বা কী খাওয়া উচিত নয়। এ নিয়ে আছে নানা বিভ্রান্তি।

খাবার ব্যবস্থাপনা

কিছু বিশেষ খাবারকে গয়েট্রিজেনিক ফুড বলা হয়। এসব খাবারে উপস্থিত গয়েট্রিজেন নামের উপাদান আয়োডিনের শোষণকে প্রভাবিত করে ও গলগণ্ড বাড়াতে পারে, যেমন ফুলকপি, পাতাকপি, ব্রোকলি, শর্ষেশাক, মুলা, শজনে। তবে এগুলো পরিমিত বা অল্প পরিমাণে খেলে এবং ভালো করে রান্না করে খেলে নিরাপদ। সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিলেও নিরাপদ। এ ছাড়া চা-কফির ক্যাফেইন হৃৎস্পন্দনকে প্রভাবিত করে, তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

গ্লুটিনসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডকে প্রভাবিত করতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। যাঁদের অটোইমিউন রোগ বা গ্লুটিন অ্যালার্জি আছে, তাঁরা আটা-ময়দার তৈরি খাবার বাদ দিতে পারেন। সয়াবিনজাত খাবারও কম খাবেন।

হাইপো ও হাইপারথাইরয়েড—এ দুই দলেরই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই বেশি সোডিয়ামযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার না খাওয়া ভালো। হাইপোথাইরয়েড রোগীদের রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। তাই তেল–চর্বি কমাতে হবে।

হাইপারথাইরয়েডিজমে কী খাবেন না

হাইপারথাইরয়েডিজমে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনা, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি কম খাওয়া ভালো।

হাইপোথাইরয়েডিজমে কী খাবেন

আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, ছানা, পনির, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনাসহ সব সামুদ্রিক খাবার বেশি খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিংক সল্ট খাওয়া যাবে না, বরং আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া উচিত।

থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় করতে সেলেনিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সেলেনিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ডিম, মুরগি, ওটমিল, বাদাম, টুনা মাছ ইত্যাদিতে সেলেনিয়াম আছে।

থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় রাখতে জিংকও গুরুত্বপূর্ণ। এটি টিএসএইচ হরমোন নিঃসরণ প্রভাবিত করে। জিংকের অভাবে থাইরয়েডের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। চিংড়ি, গরু-খাসির মাংস, মুরগির মাংস, কাঁকড়া, ঝিনুক, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ জিংকের ভালো উৎস। 

 আগামীকাল পড়ুন: শিশুর বৃদ্ধি কি ঠিকঠাক হচ্ছে  

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ