থাইরয়েডের সমস্যা হলে কী খাবেন, কী খাবেন না
Published: 11th, January 2025 GMT
আমাদের গলার সম্মুখভাগে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড হরমোন থাইরক্সিন ও ট্রাইআয়োডো-থাইরোনাইন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েড গ্রন্থিতে নানা রকম রোগ হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের থাইরয়েড সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১০ গুণ।
থাইরয়েড গ্রন্থিতে মূলত দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়, হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম। প্রথমটিতে গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ কমে এবং পরেরটিতে নিঃসরণ বাড়ে।
গ্রেভস রোগ, মালটি নোডিউলার গয়টার, টক্সিক অ্যাডিনোমা, থাইরয়েডের প্রদাহ, অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ হাইপারথাইরয়েডিজমের অন্যতম কারণ। দ্রুত হৃৎস্পন্দন, ভঙ্গুর চুল, ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত গরম ও ঘাম, গলগণ্ড হাইপারথাইরয়েডিজমের কয়েকটি লক্ষণ। এ সমস্যায় নারীদের অনিয়মিত মাসিক দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে আয়োডিনের অভাবের কারণে বা অটোইমিউন রোগে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। ক্লান্তি, দুর্বলতা, হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, শীত লাগা, ভঙ্গুর চুল ও নখ, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি হাইপোথাইরয়েডিজমের অন্যতম লক্ষণ।
থাইরয়েডের রোগীদের পরিচিত প্রশ্ন হলো, কী খেলে এটি বাড়ে বা কী খাওয়া উচিত নয়। এ নিয়ে আছে নানা বিভ্রান্তি।
খাবার ব্যবস্থাপনাকিছু বিশেষ খাবারকে গয়েট্রিজেনিক ফুড বলা হয়। এসব খাবারে উপস্থিত গয়েট্রিজেন নামের উপাদান আয়োডিনের শোষণকে প্রভাবিত করে ও গলগণ্ড বাড়াতে পারে, যেমন ফুলকপি, পাতাকপি, ব্রোকলি, শর্ষেশাক, মুলা, শজনে। তবে এগুলো পরিমিত বা অল্প পরিমাণে খেলে এবং ভালো করে রান্না করে খেলে নিরাপদ। সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিলেও নিরাপদ। এ ছাড়া চা-কফির ক্যাফেইন হৃৎস্পন্দনকে প্রভাবিত করে, তাই যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
গ্লুটিনসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডকে প্রভাবিত করতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। যাঁদের অটোইমিউন রোগ বা গ্লুটিন অ্যালার্জি আছে, তাঁরা আটা-ময়দার তৈরি খাবার বাদ দিতে পারেন। সয়াবিনজাত খাবারও কম খাবেন।
হাইপো ও হাইপারথাইরয়েড—এ দুই দলেরই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই বেশি সোডিয়ামযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার না খাওয়া ভালো। হাইপোথাইরয়েড রোগীদের রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। তাই তেল–চর্বি কমাতে হবে।
হাইপারথাইরয়েডিজমে কী খাবেন না
হাইপারথাইরয়েডিজমে আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনা, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি কম খাওয়া ভালো।
হাইপোথাইরয়েডিজমে কী খাবেন
আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুধ, ছানা, পনির, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, সামুদ্রিক স্পিরুলিনাসহ সব সামুদ্রিক খাবার বেশি খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পিংক সল্ট খাওয়া যাবে না, বরং আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া উচিত।
থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় করতে সেলেনিয়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সেলেনিয়াম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ডিম, মুরগি, ওটমিল, বাদাম, টুনা মাছ ইত্যাদিতে সেলেনিয়াম আছে।
থাইরয়েড হরমোন সক্রিয় রাখতে জিংকও গুরুত্বপূর্ণ। এটি টিএসএইচ হরমোন নিঃসরণ প্রভাবিত করে। জিংকের অভাবে থাইরয়েডের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। চিংড়ি, গরু-খাসির মাংস, মুরগির মাংস, কাঁকড়া, ঝিনুক, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ জিংকের ভালো উৎস।
আগামীকাল পড়ুন: শিশুর বৃদ্ধি কি ঠিকঠাক হচ্ছে
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজা যুদ্ধ বন্ধে শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে: নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। তবে প্রধান প্রধান বিষয়গুলো এখনো সমাধান হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ডের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েলকে গাজা থেকে আরও সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। বিনিময়ে হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
সাংবাদিকদের নেতানিয়াহু বলেন, চলতি মাসের শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন তিনি। ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র সোমবার জানিয়েছেন, আগামী ২৯ ডিসেম্বর এ বৈঠক হবে।
জেরুজালেমে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের সঙ্গে বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটতে হবে এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। অন্য এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক বাহিনীর মাধ্যমে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলই শেষ পর্যন্ত হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করবে।
হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা বাসেম নাইম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, তারা অস্ত্র সমর্থনের বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও এর আগে সংগঠনটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত অস্ত্র ছাড়তে রাজি ছিল না।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই মাস পরেও উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিন চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনগাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত হামাস ও ইসরায়েল১৬ ঘণ্টা আগেএদিকে ইসরায়েলি বাহিনী এখনো গাজার অর্ধেকেরও বেশি অংশের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। মানবিক সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বেড়েছে। তবে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ ও নিরাপত্তাহীনতা এখনো বিদ্যমান। রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং পুনরায় খোলা নিয়েও মতবিরোধ চলছে।
আরও পড়ুন হামলার মধ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর পরিকল্পনা০৫ ডিসেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে সংশয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫