নারীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অধিকার বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি, আইন, কৃষি ও ব্যবসায় সুবিধা দিতে ১৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। মেয়াদ বাড়িয়ে তিন বছর ধরে চালু রাখা হচ্ছে প্রকল্পটি। তবে অর্থ ছাড় না হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে প্রকল্পের বেতন-ভাতা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

৬০৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এর মধ্যে গত ২ জানুয়ারি হুট করে এক নোটিশে আগামী জুনে প্রকল্পটি শেষ হবে জানিয়ে অফিস ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তাঁরা।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় মহিলা সংস্থা’র বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পের পুরোনাম ছিল—‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে—‘তথ্য আপা: তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত)’।

২০১১ সালে পাইলট আকারে এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালের শেষ দিকে ৪৯২টি উপজেলায় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পে প্রতিটি উপজেলায় সরাসরি নিয়োগ পাওয়া একজন তথ্যসেবা কর্মকর্তা, দুজন তথ্যসেবা সহকারী রয়েছেন। আরও আছেন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৪৯৫ জন অফিস সহায়ক। ২০২২ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে তা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন করা হয়।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুসারে, ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের জনবল ২ হাজার ৪৮৪। তবে প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অনিয়মিত বেতন-ভাতায় অনেকে চাকরি ছেড়েছেন। এখন জনবল ১ হাজার ৯৮৩।

প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এ প্রকল্পের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাননি তাঁরা। এর মধ্যে গত মাসে জুলাইয়ের বেতন দেওয়া হয়েছে। এখন বকেয়া রয়েছে ৫ মাসের। ইতিমধ্যে তাঁদের জানানো হয়, প্রকল্পের অফিস গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে প্রকল্প চালু রাখার দাবিতে ১৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও ১৯ আগস্ট সচিবালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তাঁরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের।

উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুসারে, ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের জনবল ২ হাজার ৪৮৪। তবে প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা ও অনিয়মিত বেতন-ভাতায় অনেকে চাকরি ছেড়েছেন। এখন জনবল ১ হাজার ৯৮৩। প্রকল্পের বেশির ভাগ কার্যালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ভবনে অবস্থিত। কিন্তু ভবনে স্থানসংকটে কিছু কার্যালয় ইউএনও কার্যালয়ের আশপাশে ভাড়া করা কক্ষে চালানো হয়।

নারীদের চাকরি ও দুস্থ নারীদের সহায়তায় ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে কার্যালয়গুলোতে বিনা মূল্যে সেবা দেওয়া হয়। নারীদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির সুবিধা দিতে পরে প্রকল্পে ‘লাল সবুজ ডটকম’ নামের ই-কমার্স উদ্যোগ যুক্ত করা হয়।

বেতন না হওয়ায় প্রকল্পের লোকজন অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প যাঁরা চালান, তাঁরাও একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন।—শাহনাজ বেগম, প্রকল্প পরিচালক ও জাতীয় মহিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব

তবে প্রকল্পের কোনো উদ্যোগই এখন ঠিকঠাক চলছে না। প্রকল্পের আওতায় মাসে দুটো উঠান বৈঠক হতো প্রান্তিক নারীদের নিয়ে। বৈঠকে অংশ নেওয়া নারীরা ২০০ টাকা করে ভাতা পান। গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মাত্র একবার (১০ ডিসেম্বর) উঠান বৈঠক হয়েছে।

‘লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না’

প্রকল্পের একজন তথ্যসেবা সহকারী প্রথম আলোকে জানান, নারীদের আত্মনির্ভরশীল করার জন্য তাঁরা উঠান বৈঠক করেন, দ্বারে দ্বারে (ডোর টু ডোর) সেবা দেন। তাঁকে মাসে সাড়ে ৩০০ ডোর টু ডোর পরিদর্শন করতে হয়। মাসে বেতন ছিল ১৫ হাজার ৬৫০ টাকা। এর বাইরে ডোর টু ডোর পরিদর্শনের জন্য দিনে ১৬০ টাকা যাতায়াত ভাতা পেতেন। ৫ মাস ধরে বেতন ও ভাতা দুটোই বন্ধ।

এই তথ্যসেবা সহকারী জানান, তাঁর দুটো শিশুসন্তান রয়েছে। স্বামী ছোটখাটো চাকরি করেন। অনটনের মধ্য দিয়ে তাঁদের চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দোকানে এত টাকা বকেয়া পড়েছে! কী বলব! দোকানদার খালি বলে, কবে বেতন পাবেন? কবে বাকি দেবেন? লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না।’

এই নারী আরেক সহকর্মী নারীসহ কয়েকজনের দুর্ভোগের কথা টেনে বলেন, একজন অর্থাভাবে শিশুসন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সরকারি চাকরি পরিচয়ে বিয়ে করেছিলেন অনেকে। এখন তাঁদের সংসারই ভেঙে যাচ্ছে। প্রকল্প টিকে থাকতে পারে, এ আশা নিয়ে তাঁরা বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন।

আরেকজন তথ্যসেবা সহকারী প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিশুসন্তান ও স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। স্বামী অসুস্থ, বেকার। ছোট সন্তানও অসুস্থ। তাঁর একার আয়ে সংসার চলে। অভিমানভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, কীভাবে সংসার চালাচ্ছি, শুধু আল্লাহ জানেন!’

এক তথ্যসেবা কর্মকর্তা অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রকল্প কর্মকর্তার উদাসীনতা রয়েছে। প্রকল্প শেষে প্রকল্পের জনবল রাজস্ব খাতে যাবে, এটা জেনে তাঁরা চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। তথ্যসেবা কর্মকর্তা ও তথ্যসেবা সহকারীদের বেশির ভাগ অনার্স-মাস্টার্স পাস। কারও কারও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরিও হয়েছিল। সংসার নিয়ে প্রকল্প এলাকায় সুবিধা বোধ করায় এবং রাজস্ব খাতে যাবে আশায় চাকরি বদলাননি। এখন তাঁদের নতুন কোনো চাকরিতে আবেদন করার বয়স নেই।

মেয়াদ আর না বাড়ার সম্ভাবনা

জাতীয় মহিলা সংস্থা ২ জানুয়ারি এক চিঠিতে জানিয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি হওয়ায় মাঠপর্যায়ের ৪৯২টি উপজেলা তথ্যকেন্দ্রের অফিস ভাড়া নবায়ন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে বলে যেসব ইউএনও অফিস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাসায় ভাড়া নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ৩০ জুনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হলো।

প্রকল্প পরিচালক ও জাতীয় মহিলা সংস্থার যুগ্ম সচিব শাহনাজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত দুই বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এক বছর বেড়েছে। ইতিমধ্যে ডিপিপি দুইবার সংশোধন হয়েছে। তৃতীয়বার সংশোধনের সম্ভাবনা কম। ফলে মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলে ধরে নিয়েছি। নতুন প্রকল্প নিয়ে এই জনবলের বিষয়ে কিছু করা যায় কি না দেখতে হবে।’

পাঁচ মাস ধরে বেতন-যাতায়াত ভাতা বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে যুগ্ম সচিব বলেন, বাজেট না থাকায় বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় মহিলা সংস্থার নিজস্ব বাজেট থেকে অর্থ ধার নিয়ে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী সপ্তাহে অর্থ ছাড় দিতে পারে। এরপর দুই কিস্তিতে বকেয়া বেতন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বেতন না হওয়ায় প্রকল্পের লোকজন অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প যাঁরা চালান, তাঁরাও একধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলামের মৌলিক বিষয় কী কী

ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষকে আল্লাহর আনুগত্যে জীবন যাপন করতে শেখায়। এটি কেবল একটি ধর্ম নয়; বরং নৈতিকতা, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও আত্মার পূর্ণ সমন্বিত এক দিকনির্দেশনা।

মহান আল্লাহ কোরআনে বলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য ধর্মরূপে পছন্দ করলাম।” (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৩)

ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

(১) বিশ্বাসের মৌলিক ভিত্তি (আকিদা)

(২) আমল বা কর্মভিত্তিক বিষয়সমূহ (ইবাদত, আচরণ ও নৈতিকতা)

এক. ইমান বা বিশ্বাস

ইমান ইসলামি জীবনের ভিত্তি। এটি ছয়টি মূল বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত, যাকে বলা হয় ইমানের ছয়টি স্তম্ভ:

১. আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস

২. ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস

৩. কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস

৪. রাসুলদের প্রতি বিশ্বাস

৫. পরকাল বা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস

৬. তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস। অর্থাৎ,  ভালো-মন্দ উভয়টাই আল্লাহর নির্ধারণ করা।

রাসুল (স.) বলেছেন, “ইমান হল তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসুল, পরকাল এবং তাকদিরে বিশ্বাস রাখো।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮)

এই ছয়টি বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস ব্যতীত একজন ব্যক্তি মুসলমান হিসেবে গণ্য হতে পারে না।

আরও পড়ুনফিলিস্তিন ও ইসলাম: অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের ৫ দিক২০ আগস্ট ২০২৫দুই. ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ

ইসলামের দৃশ্যমান কাঠামো পাঁচটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। মহানবী (স.) বলেছেন, “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত:

(১) সাক্ষ্য দাও যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রাসুল;

(২) নামাজ কায়েম করা;

(৩) জাকাত প্রদান করা;

(৪) রমজানের রোজা রাখা;

(৫) এবং সামর্থ্য থাকলে হজ করা।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬)

এই পাঁচটি স্তম্ভ মুসলিম জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলোর মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়।

তিন. নামাজ

নামাজ ইসলামের মূল ইবাদত। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। কোরআনে বলা হয়েছে, “নামাজ কায়েম কর; নিশ্চয় নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)

নামাজের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, মন প্রশান্ত হয় এবং সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়।

চার. জাকাত

জাকাত ইসলামি অর্থনীতির নৈতিক ভিত্তি। এটি সমাজে সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ কর, এর দ্বারা তুমি তাদের পরিশুদ্ধ করবে ও পবিত্র করবে।” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১০৩)

জাকাত সমাজে দরিদ্র-অসহায়দের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এবং লোভ, অহংকার ও বৈষম্য দূর করে।

পাঁচ. রোজা

রমজান মাসের রোজা আত্মসংযম ও তাকওয়া অর্জনের অন্যতম উপায়। আল্লাহ বলেছেন, “হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা পরহেজগার হতে পারো।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রোজা শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণা থেকে বিরত থাকা নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহানুভূতি ও নৈতিক শুদ্ধতার অনুশীলন।

আরও পড়ুনউপহার দেওয়া সম্পর্কে ইসলাম১৩ আগস্ট ২০২৫ছয়. হজ

হজ জীবনের একবারের ফরজ ইবাদত, যদি আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য থাকে। এটি মুসলমানদের ঐক্য, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক।

আল্লাহ বলেছেন, “এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে আল্লাহর ঘরে হজ করা মানুষের ওপর কর্তব্য, যারা সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম।” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭)

সাত. নৈতিকতা ও আচরণ

ইসলাম কেবল উপাসনার ধর্ম নয়; এটি নৈতিক আচরণেরও শিক্ষা দেয়। নবীজি (স.) বলেছেন, “আমি সুন্দর চরিত্র পূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৮৯৫২)

সত্যবাদিতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, দয়া, ধৈর্য, বিনয় ও ন্যায়পরায়ণতা একজন মুসলমানের মৌলিক গুণ।

আট. সমাজ ও মানবসম্পর্ক

ইসলাম সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা করে। এখানে জাতি, বর্ণ, শ্রেণি বা ভাষার কোনো বৈষম্য নেই। আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত সে-ই, যে সর্বাধিক পরহেজগার।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩)

ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়ের মর্যাদা নিশ্চিত করেছে, শ্রমিকের প্রাপ্যতা নির্ধারণ করেছে, প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ করেছে।

নয়. জ্ঞানের প্রতি উৎসাহ

ইসলাম জ্ঞানকে ইমানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। প্রথম অবতীর্ণ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা আলাক, আয়াত: ১)

নবীজি (স.) বলেছেন, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।” (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৪)

ইসলাম জ্ঞানচর্চাকে আল্লাহর কিতাব, প্রকৃতি ও সমাজ—এই তিন দিক থেকে জানার মাধ্যম হিসেবে দেখে।

ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি নয়, বরং আত্মিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক সব বিবেচনায় মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনে। একজন প্রকৃত মুসলিম সেই, যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, নবীজির (স.) নির্দেশনা মেনে

আরও পড়ুনকিশোরদের ইসলাম অনুশীলনে আগ্রহী করার উপায়২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ